রিও+২০-উন্নয়নকে টেকসই করার বড় সুযোগ এ সম্মেলন by ইফতেখার মাহমুদ

বিশ্বের উন্নয়নকে টেকসই করতে ও পরিবেশ রক্ষায় রিও+২০ সম্মেলন একটি বড় সুযোগ। এ সুযোগ নষ্ট করা যাবে না। এ সম্মেলনকে অবশ্যই সফল করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে অনুুষ্ঠিত টেকসই উন্নয়নবিষয়ক বিশ্ব ধরিত্রী সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এ কথা বলেন।


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ বিশ্বকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন পথে এগোনোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি পরিবেশ রক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম একই সঙ্গে এবং সমান্তরালভাবে করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘উন্নয়নের এই নতুন পথে না এগোলে বিশ্বের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।’
গতকাল সম্মেলনে মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আলোচনা পর্ব শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সময় রাত দুইটায় বাংলাদেশের পক্ষে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তৃতা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া সম্মেলনের আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, আইনুন নিশাত ও সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী অংশ নিচ্ছেন।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকারে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ জন্য ব্রাজিল সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া রাজনৈতিক অঙ্গীকার অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর কাছে দেওয়া হচ্ছে। আজ শুক্রবার এবং আগামীকাল এই খসড়ার ব্যাপারে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের অবস্থান জানাবে।
রাষ্ট্রপ্রধান ও মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নিতে গতকাল বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের প্রতিনিধি সম্মেলনকেন্দ্রে পৌঁছেছেন। প্রায় আড়াই হাজার রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি, ৩৫ হাজার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও পরিবেশবাদী এবং প্রায় তিন হাজার সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
খসড়ায় মূলত তিনটি প্রস্তাব করা হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) সঙ্গে জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি যুক্ত করে একটি নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষা ও সবুজ অর্থনীতির অঙ্গীকারসহ একটি নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)।
সম্মেলনে কোন ধরনের চুক্তি হতে পারে, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ধনী রাষ্ট্রগুলো সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অনুযায়ী অর্থায়ন করেনি। এখন তারা আবার টেকসই অর্থনীতির জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রার কথা বলছে। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এর বিরোধিতা করছে। বাংলাদেশসহ এই রাষ্ট্রগুলোর দাবি, দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অর্থায়ন বাড়ানো এবং পরিবেশ রক্ষায় নতুন করে অর্থায়ন করা। কিন্তু ধনী দেশগুলো নিজেদের অর্থনৈতিক সংকটের কথা বলে রিও সম্মেলনে কোনো নতুন চুক্তিতে যেতে রাজি হচ্ছে না। তবে সম্মেলনের শেষ দুই দিনের আলোচনার মাধ্যমে তা ঠিক হবে।
বুধবার সম্মেলনকেন্দ্রে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে সবুজ অর্থনীতি বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী ও পরিবেশসচিব মেসবাহ-উল আলম এতে বক্তব্য দেন।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এরই মধ্যে পরিবেশসম্মত ইট তৈরির কারখানা স্থাপন ও সৌরশক্তিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছে। তবে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতিকে পরিবেশসম্মত করার ব্যাপারে ধনী দেশগুলোর সহায়তা লাগবে।
বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সম্মেলনের চূড়ান্ত যে খসড়া বের হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব ঠাঁই পেয়েছে। তবে আগামী তিন দিন উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নে অর্থ ও প্রযুক্তি দেবে কি না, দিলে কতটা কীভাবে দেবে, তা চূড়ান্ত হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আবদুল মোমেন বলেন, সম্মেলনে এমডিজির মতো সামাজিক খাতের উন্নয়নের জন্য সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট গোল নির্ধারণ করার পাশাপাশি সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বিষয়টি এ সম্মেলনে নির্ধারণ না করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সম্মেলনস্থল রিও সেন্টারে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামরিক বাহিনী ও পুলিশের প্রায় চার হাজার সদস্য সম্মেলনকেন্দ্রের পাহারায় রয়েছেন। হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে ট্যাংক, কামান—সবই মোতায়েন করা হয়েছে রিও সেন্টারের আশপাশে।

No comments

Powered by Blogger.