এ গ্রেট স্টোরিটেলার by আনিসুল হক

বাংলা সাহিত্য সম্প্রতি লাভ করেছে এক ‘গ্রেট স্টোরিটেলার’কে। তাঁর নাম শেখ মুজিবুর রহমান। ইউপিএল বের করেছে তাঁর লেখা প্রথম বই অসমাপ্ত আত্মজীবনী। বঙ্গবন্ধুকে ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’ বলা হয়েছিল নিউজউইক ম্যাগাজিনের এপ্রিল ১৯৭১ সংখ্যায়।


কবি নির্মলেন্দু গুণ ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ এই কবিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কবি হিসেবে চিত্রিত করেছেন। এসবই তো রূপকার্থে। কিন্তু এবার আমরা বঙ্গবন্ধুকে আবিষ্কার করলাম একজন চমৎকার লেখক হিসেবে, গল্পের কথক হিসেবে। শেখ মুজিবুর রহমান লিখিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়তে পড়তে বারবার মনে হচ্ছিল, কী সুন্দর করে গল্প বলতে পারেন তিনি, তাঁকে বলা যায় একজন অনবদ্য গল্পকার, একজন অসাধারণ কথাকার—‘এ গ্রেট স্টোরিটেলার।’
বইয়ের ভূমিকায় শেখ হাসিনা জানাচ্ছেন, ১৯৬৬-৬৯ সালে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় কারাগারে বসে শেখ মুজিব এই আত্মজীবনী লেখেন। লেখার জন্য খাতা সরবরাহ করেছিলেন বেগম মুজিব, বঙ্গবন্ধু যাঁকে ডাকতেন রেণু বলে। শেখ মুজিবের ভাষায়, ‘বন্ধুবান্ধবরা বলে, “তোমার জীবনী লেখ।” সহকর্মীরা বলে, “রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ, কাজে লাগবে।” আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, “বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী।” বললাম, লিখতে যে পারি না; আর এমন কি করেছি যে লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না।
‘একদিন সন্ধ্যায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে জমাদার সাহেব চলে গেলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা...
‘...আমার স্ত্রী যার ডাক নাম রেণু—আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে দিয়েছেন। রেণু আরও একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম।’
তখনো বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি। কিন্তু এই যে বিনয়—‘লিখতে পারি না’, কিংবা ‘এমন কি করেছি যে লেখা যায়!’ এটা খুবই আন্তরিক উক্তি; এই বইয়ে তিনি তাঁর জন্ম, তাঁর পরিবারের ইতিহাস ও কিংবদন্তি, শৈশব, ছাত্রজীবন, বেড়ে ওঠা, ব্রিটিশ ভারতে মুসলিম ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে শুরু করে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত জীবনকাহিনি বর্ণনা করেছেন; তাতে সবচেয়ে আড়াল করে রেখেছেন নিজের গৌরব বা কীর্তি, একজন নিপুণ কথাকারের মতো গল্প বলে গেছেন, ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন, পরিবেশ ফুটিয়ে তুলেছেন, চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করে তুলেছেন, সংলাপ তৈরি করেছেন, এর ফলে মনেই হয় না এটি একজন লেখকের প্রথম বই, কিংবা লেখক আসলে পেশাদার লেখকই নন।
আমরা জানতাম, গল্প বলার অনন্যসাধারণ প্রতিভা তাঁর ছিল। এমনকি, তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যেও তো কথকের ভঙ্গি, গল্প বলিয়ের ক্ষমতার পরিচয় আমরা পাই। যখন তিনি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাঁকে অনুরোধ করলাম—১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, মার্চ মাসে প্রথম সপ্তাহে হবে। আমরা বললাম, ঠিক আছে আমরা এসেমব্লিতে বসবো। আমি বললাম, এসেমব্লির মধ্যে আলোচনা করবো...’, তখন আমরা সংলাপ দিয়ে কীভাবে গল্প বলতে হয়, শ্রোতাদের ধরে রাখতে হয়, সেই কৌশলটার প্রয়োগ দেখি।
হ্যাঁ, গল্প বলার এই সহজাত দক্ষতাটা লেখক শেখ মুজিবুর রহমান আগাগোড়া প্রয়োগ করেছেন এই বইয়ে। তাঁর জীবনকাহিনি, যার সঙ্গে মিলেমিশে আছে এই উপমহাদেশের ইতিহাস, তা তিনি বলে যাচ্ছেন গল্পচ্ছলে। আমরা জানছি, তাঁদের পূর্বপুরুষ শেখ কুদরতউল্লাহ ইংরেজ নীলকর রাইন সাহেবের সঙ্গে মামলায় জেতেন, কোর্ট কুদরতউল্লাহকে বলেন, ‘যত টাকা ক্ষতি হয়েছে, জরিমানা করুন।’ ইংরেজকে অপমান করার জন্য কুদরতউল্লাহ ‘আধাপয়সা’ জরিমানা করেন। রাইন বলে, ‘যত টাকা চান দিতে রাজি আছি, আমাকে অপমান করবেন না। তাহলে ইংরেজ সমাজ আমাকে গ্রহণ করবে না; কারণ, “কালা আদমি” আধা পয়সা জরিমানা করেছে।’
শেখ মুজিব তাঁর স্কুলের ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন। আর তাঁর আব্বা অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারি। দুজনেই ফুটবল খেলেন। দুদলের ফুটবল প্রতিযোগিতা। অফিসার্স ক্লাব হায়ারে খেলোয়াড় এনেছে। এই সময় পরীক্ষার আগে ছেলেদের দলকে তাঁরা আমন্ত্রণ জানালেন ম্যাচ খেলতে। পরীক্ষার পরে যদি খেলা হয়, তাহলে অফিসার্স ক্লাবের বাইরের খেলোয়াড়েরা চলে যাবে, তাতে ছেলেদের দল জিতে যেতে পারে। কিন্তু মুজিব পরীক্ষার আগেই খেললেন এবং তাঁর দল আব্বার দলের সঙ্গে এক গোলে হেরে গেল।
তাজমহল দেখার বর্ণনা আছে বইতে। দিনের বেলা তাজমহল দেখেছেন, আবার রাতের বেলা চাঁদের আলোয় চাঁদমহল দেখবেন বলে ছুটে গেছেন। তিনি লিখছেন, ‘সূর্য যখন অস্ত গেল, সোনালি রঙ আকাশ থেকে ছুটে আসছে। মনে হল, তাজের যেন আরেকটা নতুন রূপ। সন্ধ্যার একটু পরেই চাঁদ দেখা দিল। চাঁদ অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে আর সাথে সাথে তাজ যেন ঘোমটা ফেলে নতুন রূপ ধারণ করেছে। কি অপূর্ব দেখতে! আজও একুশ বৎসর পরে লিখতে বসে তাজের রূপকে আমি ভুলি নাই, আর ভুলতেও পারি না।’
শেখ মুজিবের স্মরণশক্তির কথা ভেবে বিস্মিত না হয়েই পারা যায় না। তিনি ৪৬ বা ৪৭ বছর বয়সে বসে শৈশবের কথা লিখেছেন, ৩০ বছর আগের কথা লিখেছেন, ২১ বছর আগে দেখা দিল্লি-আগ্রা-আজমির শরিফের যে বিশদ বর্ণনা করেছেন, তা কী করে সম্ভব হলো? তাঁর সামনে তো ইন্টারনেট ছিল না, ওই জেলখানায় তাঁর সামনে কোনো নোট ছিল না, কোনো পরামর্শক ছিল না। আমি তো বছর চারেক আগে আগ্রা-দিল্লি গেছি, আমার এখনই কিছুই মনে নেই।
শেখ মুজিব এই বইয়ে প্রায় কিছুই গোপন করেননি। তিনি যে ছেলেবেলায় মারপিট করতেন, মারামারি করেই প্রথম জেলে গিয়েছিলেন, তার অকপট বর্ণনা আছে। যেমন আছে কী করে এক বন্ধুকে সাহায্য করতে গিয়ে দিল্লি থেকে ফেরার টাকাটাও ফুরিয়ে গিয়েছিল বলে তিন বন্ধু একটা মাত্র ট্রেনের টিকিট করে সার্ভেন্টস ক্লাসে চড়ে কলকাতা ফিরেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনার বেশির ভাগই তো কারাগারের বর্ণনা। একদিন তাঁকে কারাগার থেকে এনে গোপালগঞ্জ থানায় রাখা হয়েছে রাত কাটানোর জন্য। তিনি লিখছেন, ‘বহুদিন সূর্যাস্তের পরে বাইরে থাকতে পারি নাই। জেলের মধ্যে এক বৎসর হয়েছে, সন্ধ্যার পরে বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দেয়। জানালা দিয়ে শুধু কিছু জ্যোৎস্না বা তারাগুলি দেখার চেষ্টা করেছি। আজ আর ঘরে যেতে ইচ্ছা করছে না। বাইরে বসে রইলাম...।’ একবার তিনি ছাত্রজীবনে আব্বাসউদ্দীন আহমদের সঙ্গে একই নৌকায় ফিরছিলেন। আব্বাসউদ্দীন গান ধরলেন অনুচ্চস্বরে। মুজিব লিখেছেন, তাঁর মনে হলো, ঢেউগুলোও যেন আব্বাসউদ্দীনের গান তন্ময় হয়ে শুনছে। এই যে ঢেউও গান শুনতে পারে, এই কল্পনা তো কবির কল্পনা।
অতি অল্প আয়াসে চরিত্র তৈরি করার অপূর্ব ক্ষমতা আছে এই লেখকের। তেমনি এক চরিত্র চন্দ্র ঘোষ। তিনি রাজনীতি করতেন না, সমাজসেবা করতেন, স্কুল স্থাপন করেছিলেন। পাকিস্তান হওয়ার পরে তাঁকে জেলে পোরা হয়েছিল নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে। কোনো কারণ ছিল না, শুধুই বাড়াবাড়ি।
চন্দ্র ঘোষের হার্নিয়ার ব্যারাম ছিল। তাঁকে অপারেশন করার জন্য জেল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যাওয়ার আগে তিনি মুজিবের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। মুজিবকে জেলগেটে নেওয়া হলো। চন্দ্র ঘোষ স্টেচারে শুয়ে আছেন। মুজিব লিখছেন, ‘দেখে মনে হলো আর বাঁচবেন না, আমাকে দেখে কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, “ভাই, এরা আমাকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে বদনাম দিল, শুধু এই আমার দুঃখ মরার সময়! কোনোদিন হিন্দু মুসলমানকে দুই চোখে দেখি নাই। সকলকে আমায় ক্ষমা করে দিতে বোলো। আর তোমার কাছে আমার অনুরোধ রইল, মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখ। মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য ভগবানও করেন নাই। আমার তো কেউ নাই। আপন ভেবে তোমাকে শেষ দেখা দেখে নিলাম। ভগবান তোমার মঙ্গল করুক।” এমনভাবে কথাগুলো বললেন যে সুপারিনটেনডেন্ট, জেলার সাহেব, ডেপুটি জেলার, ডাক্তার ও গোয়েন্দা কর্মচারী সকলের চোখেই পানি এসে গিয়েছিল। বললাম, “চিন্তা করবেন না, আমি মানুষকে মানুষ হিসাবেই দেখি। রাজনীতিতে আমার কাছে মুসলমান, হিন্দু, খৃস্টান বলে কিছু নাই। সকলেই মানুষ।”’
চন্দ্র ঘোষের চরিত্র যেমন আমাদের কাছে জীবন্ত হয়ে উঠল, তেমনি জেলখানায় তিনি দেখা পেয়েছিলেন রহিম মিয়ার, কুখ্যাত ডাকাতের, যিনি কিনা শেখ মুজিবদের বাড়িতে চুরি করে সোয়া শ ভরি সোনা নিয়ে গিয়েছিল, যার গলার মধ্যে নাকি খোড়ল বা গর্ত থাকে, সোনা বা টাকা-পয়সা লুকিয়ে রাখার জন্য। মুজিব লিখেছেন, আরেকজন চোর একবার তাঁকে গলার ভেতর থেকে একটা মুদ্রা বের করে দেখিয়েছিল!
সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, একে ফজলুল হক থেকে শুরু করে আরও অনেক চরিত্রের দেখাই আমরা এই বইয়ে পাব। কিন্তু এই ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোকে মানবিক করে তুলেছেন মুজিব। তাদের সবলতা, দুর্বলতা দুদিকই ফুটে উঠেছে। বিশেষভাবে পাব তাঁর আব্বা শেখ লুৎফর রহমানকে। আর পাব রেণুকে, যিনি বহু কষ্ট সহ্য করেছেন, স্বামী তো তাঁর জেলখানা জেলখানা করেই জীবন পার করে দিচ্ছেন, বাচ্চাদের নিয়ে এই নারী কী কষ্টটাই না করছেন, আর গোপনে টাকা দিয়ে চলেছেন মুজিবকে!
১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে মুজিব ছিলেন সক্রিয়। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির আগে অলি আহাদ প্রমুখ যে হাসপাতালে বন্দী মুজিবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং একুশে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি নিয়ে আলাপ করেছিলেন, তাও জানা যাবে এই বইয়ে। ৫৪-এর নির্বাচন, ষড়যন্ত্র, মন্ত্রী পদ গ্রহণ ও গ্রেপ্তার, চীন ভ্রমণ—নানা প্রসঙ্গই আছে নিপুণ ও প্রাণবন্তভাবে।
শেখ মুজিবের এই বই পুরোটা পড়ে শেষ করা যাবে এক নিঃশ্বাসে। যদিও বেশ বড় বই, ২৮৮ পৃষ্ঠা কেবল তাঁর নিজের হাতেই লেখা। শুধু তাঁর একটা উপলব্ধি উদ্ধৃত করতে চাই। ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকের কথা। এমএলএ কেনাবেচা হচ্ছে। মুজিব লিখেছেন, ‘এর পূর্বে আমার ধারণাই ছিল না যে, এমএলএরা এইভাবে টাকা নিতে পারে। এরাই দেশের ও জনগণের প্রতিনিধি! আমার মনে আছে, আমাদের উপর ভার পড়ল কয়েকজন এমএলএকে পাহারা দেবার, যাতে তারা দল ত্যাগ করে অন্য দলে যেতে না পারে। আমি তাদের নাম বলতে চাই না, কারণ অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। একজন এমএলএকে মুসলিম লীগ অফিসে আটকানো হলো। তিনি বারবার চেষ্টা করেন বাইরে যেতে, কিন্তু আমাদের জন্য পারছেন না। কিছু সময় পরে বললেন, “আমাকে বাইরে যেতে দিন, কোনো ভয় নাই। বিরোধী দল টাকা দিতেছে, যদি কিছু টাকা নিয়ে আসতে পারি আপনাদের ক্ষতি কি? ভোট আমি মুসলিম লীগের পক্ষেই দিব।” আশ্চর্য হয়ে চেয়ে রইলাম তার দিকে। বৃদ্ধ লোক, সুন্দর চেহারা, লেখাপড়া জানেন, কেমন করে এই কথা বলতে পারলেন আমাদের কাছে? টাকা নেবেন একদল থেকে অন্য দলের সভ্য হয়ে, আবার টাকা নিয়ে ভোটও দেবেন না। কতটা অধঃপতন হতে পারে আমাদের সমাজের!’
বঙ্গবন্ধু মুজিব, আমরাও ভদ্রলোক, শিক্ষিত লোক, সুন্দর চেহারার লোক, আজকের এমএলএ ও অন্যদের দিকে চেয়ে থাকি, কী করে পারে!
একটা কথা বলতেই হবে। বঙ্গবন্ধু বইটা লিখেছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে বসে, তখনো তিনি বঙ্গবন্ধু হননি, বাংলাদেশও হয়নি। ফলে তাঁর বইয়ে কোথাও এমন কিছু নেই, যা দিয়ে তাঁকে পাকিস্তানের আইনে বেকায়দায় ফেলা যায়। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু বইয়ের পাণ্ডুলিপি সম্ভবত টাইপ করার জন্য বাংলার বাণী অফিসে পাঠিয়েছিলেন। আমার আফসোস, তিনি যদি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে একবার পুরো পাণ্ডুলিপিটা পড়ে দিতে পারতেন!
তা না হয়েও হয়তো ভালোই হয়েছে। আমরা একজন মুসলিম লীগারের বাঙালি জাতীয়তাবাদী হয়ে ওঠার বিবর্তনের কাহিনি পাঠ করতে পারলাম।
কিন্তু এই আত্মজীবনী তো অসমাপ্ত!
৮ জুলাই ২০০৮ প্রথম আলোর গদ্যকার্টুনে সুইডেনের আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলনে এক লেখকের কাছ থেকে শোনা একটা গল্প আমি পরিবেশন করেছিলাম। সেটা আবার বলি। ‘দুজন স্থানীয় লোক গল্প বলছে। আর লেখক সেটা আড়ি পেতে শুনছেন। তারা গল্প করছে একজনের মৃত্যু নিয়ে। শুনেছ, অমুক মারা গেছে।
অমুক মারা গেছে? না, তার মরাটা উচিত হয়নি?
কেন, মরা উচিত হয়নি কেন?
কারণ, ও তো একটা গল্প বলতে শুরু করেছিল। রোজ ওর কাছ থেকে আমরা ওই গল্পটা শুনতাম। গল্পটা শেষ হয়নি। গল্প শেষ না করে একজন গল্পকথক মারা যাবেন কেন?’
প্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, গল্প শেষ না করে আপনার মারা যাওয়া উচিত হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.