জনগণের অর্থের অপচয় মেনে নেওয়া যায় না-নদী খনন, না পানিতে টাকা ঢালা?

প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে ১৪ থেকে ১৬ লাখ টাকা। মাসের হিসাব করলে ব্যয় হচ্ছে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার কোটি টাকা। খরচটি কম নয়। কিন্তু এ টাকা কার্যত পানিতেই ঢালা হচ্ছে। ডুবোচরের কারণে পদ্মা নদীতে নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খনন প্রয়োজন, সে জন্য চারটি ড্রেজার দিয়ে খনন চলছে মাওয়া-কাঁঠালবাড়ি-চরজানাজাত (শিবচর) নৌপথে।


খনন করা মাটি আবার একদম কাছাকাছি নদীতেই ফেলা হচ্ছে। এই খননের অর্থ কী? এক মাস ধরে যে টাকা খরচ হলো, তা কি পানিতেই ফেলা হলো না!
এই খনন যারা পরিচালনা করছে, সেই অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, ড্রেজারের কাছাকাছি ফেলা হলেও ভাটিতে ফেলা হচ্ছে মাটি। এতে খনন করা জায়গার নাব্যতা ঠিক থাকবে।
প্রথম আলোর ‘বিশাল বাংলা’ পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সঙ্গে একটি ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, খননস্থলের কাছেই মাটি ফেলা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ যে যুক্তিই দিক না কেন, তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সাধারণ বুদ্ধিতে এটা বোঝা যায়, নদীর মাটি ড্রেজিং করে উজান বা ভাটি যেখানেই ফেলা হোক না কেন, তা দুই দিন আগে বা পরে আবার নদীর নাব্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেই। নদী খননে খরচ হবে ২৫ কোটি টাকারও বেশি। ভাগবাটোয়ারার বিষয় না থাকলে এমন হওয়ার কথা নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী খনন করা জায়গা থেকে দুই-আড়াই কিলোমিটার দূরে মাটি ফেলার কথা। আর নদী বড় হলে স্রোতের অনুকূলে খনন করা অংশ থেকে এক কিলোমিটার দূরে মাটি ফেলতে হবে। এই খননের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। বিষয়টিকে জনগণের অর্থের অপচয় হিসেবেই বিবেচনা করতে হচ্ছে।
আমরা মনে করি, এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত হওয়া উচিত। যাদের পরামর্শে নদী খননের নামে পানিতে টাকা ঢালা হচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করা জরুরি। তাদের সঙ্গে ভাগবাটোয়ারার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা তদন্ত করা এবং কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

No comments

Powered by Blogger.