স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর গৃহকর্তার আত্মহত্যা?

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ঘাটচেক সোনাইছড়ি বড়ুয়াপাড়া এলাকায় গতকাল শনিবার নিজ ঘর থেকে প্রকাশ বড়ুয়া নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ঘর থেকে প্রকাশের স্ত্রী ও দুই সন্তানের লাশও উদ্ধার করা হয়।


পুলিশ প্রকাশের ঘর থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করেছে। চিঠিতে দাম্পত্য কলহের জের ধরে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার পর প্রকাশের আত্মহত্যার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে চিঠিটি প্রকাশের লেখা কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রকাশের শ্যালক বাপ্পা দাস চিঠির লেখাগুলো প্রকাশেরই বলে দাবি করেন।
ওই চিঠির সূত্র ধরে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম মোর্শেদ জানান, প্রকাশ প্রায় ১২ বছর আগে রোজী বড়ুয়াকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই সন্তান শ্রীমান্ত বড়ুয়া ও সোমা বড়ুয়া। বছর খানেক ধরে তাঁদের দাম্পত্য কলহ চলছিল। স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে প্রকাশ গত শুক্রবার দিবাগত রাতে রোজী বড়ুয়াকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন। ওই রাতে শ্রীমান্ত ও সোমা তাদের চাচির ঘরে ছিল। গতকাল সকাল ছয়টার দিকে তাদের ডেকে নেন প্রকাশ। পরে দুজনকেই শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর ঘরের ছাদের সঙ্গে রশি টেনে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
প্রকাশ বড়ুয়ার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী পম্পী বড়ুয়া জানান, চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও এলাকায় ওষুধের দোকান আছে প্রকাশের। তিনি পল্লি চিকিৎসক হিসেবেও কাজ করতেন। দোকানেই থাকতেন। প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার বাড়িতে আসতেন। এই দুই দিন ছাড়া তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান পম্পীর ঘরে ঘুমাত। পম্পী আরও জানান, সকালে দুই সন্তানকে ডেকে নেন প্রকাশ। বেশ কিছু সময় পরও তাদের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ওই ঘরের দিকে যান তিনি। ঘরে ঢুকে বিছানায় তিনি শ্রীমান্তের লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার করে ওঠেন। এ সময় প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তাঁরা অন্য কক্ষে গিয়ে প্রকাশ ও তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ের লাশ দেখতে পান। পরে বিষয়টি রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘরের একটি কক্ষের মেঝেতে রোজী ও সোমার নিথর দেহ পড়ে আছে। অপর কক্ষের খাটের ওপর সীমান্ত ও প্রকাশের মৃতদেহ পাশাপাশি শোয়া অবস্থায়। পাশে নাইলনের একটি রশি পড়ে আছে।
খবর পেয়ে রাঙ্গুনিয়ার সুখবিলাস এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন প্রকাশের বোন শুক্লা বড়ুয়া। তিনি কাঁদতে কাঁদতে জানান, সকাল সোয়া ছয়টার পর তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে প্রকাশের কথা হয়। শুক্লা বলেন, ‘আমাকে ফোন করে কেমন আছি, এসব জিজ্ঞাসা করে রেখে দিল। আমি বুঝতে পারিনি আমার ভাই এত বড় ঘটনা ঘটাচ্ছে।’
চট্টগ্রাম হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বাবুল আকতার বলেন, চিঠিটি প্রকাশ বড়ুয়ার হাতের লেখা কি না এবং তিনি আত্মহত্যা করেছেন নাকি অন্য কোনো ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.