বীজ নিয়ে প্রতারণা

আমাদের অজানা নয় যে বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। সার্বিক বাস্তবতায় এই কৃষির গুরুত্ব সংগত কারণেই উত্তরোত্তর বাড়ছে। খাদ্য ঘাটতি কিংবা সংকট মোকাবিলায় সরকারি তরফ থেকে শুরু করে নানা মহল থেকেই উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন বৃদ্ধির পথটি মসৃণ নয়।


প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এ দেশে এমনিতেই কৃষি খাত আক্রান্ত হয় ফিরে ফিরে। এরপর রয়েছে আরো নানা প্রতিকূলতা। এত প্রতিকূলতা কিংবা বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করেও কৃষক সমাজ উৎপাদনের চাকা অধিকতর গতিশীল করতে সচেষ্ট। এই উৎপাদন বৃদ্ধির প্রথম শক্তি ভালো কিংবা শুদ্ধ বীজ এবং অন্যান্য উপকরণের যথাযথ জোগান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব নিয়ে একটি অসাধু মহলকে বরাবরই অপতৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে।
২৪ এপ্রিল একটি সহযোগী দৈনিকে 'বীজ নিয়ে প্রতারণা, দিশেহারা কৃষক' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এরই প্রতিফলন ঘটেছে। বলা হয়েছে, ঝলক ও সিনজেনটাসহ একাধিক কম্পানির হাইব্রিড ধান, ভুট্টা ও টমেটো চাষ করে দেশের প্রায় দেড় লাখ কৃষক এখন দিশেহারা। ঝলক ধান চাষ করে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি এবং প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল আংশিক নষ্ট হয়ে গেছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে প্রকাশ। আরো দুঃসংবাদ হলো, এ কারণে এবার প্রায় তিন লাখ টন খাদ্যশস্য কম উৎপাদিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কুমিল্লা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও চুয়াডাঙ্গায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় দেখা দিলেও এ তালিকায় আরো রয়েছে কয়েকটি জেলা। ভেজাল বীজ বিক্রেতাদের এর আগে প্রধানমন্ত্রী নিজে সতর্ক করে দিলেও প্রতারকরা যে তা আমলেই নেয়নি, বিদ্যমান চিত্র এরই সাক্ষ্যবহ। অসাধুরা দৃশ্যত কৃষকের ক্ষতি করলেও প্রকৃতপক্ষে যা হচ্ছে তা হলো জাতীয় ক্ষতি। টাঙ্গাইল, নওগাঁ ও রাজশাহীতে ভুট্টা ও টমেটোচাষিদের ক্ষেত্রেও এমনটিই ঘটেছে। এই অসাধুদের বিরুদ্ধে শুধু কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণই যথেষ্ট নয়, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার; যা দৃষ্টান্ত হিসেবে সামনে থাকবে। একই সঙ্গে দরকার কৃষকের পক্ষে যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন। বীজ কিনে বা অন্য কোনো কারণে ফসল নষ্ট হলে কৃষক ক্ষতিপূরণ পান না।
ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ এবং অন্য সব কৃষি উপকরণ বিক্রেতারা জাতীয় শত্রু। এসব বন্ধে সরকারের সার্বক্ষণিক মনিটরিং দরকার। ফসলের ক্ষতি হলে কৃষক যেন শস্যবীমার সুযোগ পান, সে উদ্যোগ নেওয়াও জরুরি। কৃষিক্ষেত্রকে জাতীয় রন্ধনশালা বললে অত্যুক্তি হবে না। কাজেই এ ক্ষেত্রে যারা তুঘলকি কাণ্ড চালায় তাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। দেশের মোট বীজ চাহিদার ২২ শতাংশ (মতান্তরে ১১ শতাংশ) সরবরাহ করে বেসরকারি বীজ কম্পানিগুলো। এ ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দরকার। বীজ যদি নষ্ট হয়, তাহলে উৎপাদন ব্যাহত হবেই। আর উৎপাদন ব্যাহত হওয়া মানে জাতীয় ক্ষতি আরো স্ফীত হওয়া। কোনোভাবেই এ ব্যাপারে উদাসীনতা কিংবা কালক্ষেপণ কাম্য নয়। ধান বা বীজ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দ্রুততার ভিত্তিতে এ ব্যাপারে গবেষণা ও বীজ উৎপাদন ক্ষেত্র বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেওয়াও জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.