চুয়েটের আবাসিক হলে রোবট ও ইলেকট্রনিকস গবেষণা

‘প্রতিদিনই সংবাদপত্র, প্রযুক্তিবিষয়ক ম্যাগাজিন, স্যাটেলাইট চ্যানেলের দিকে চোখ রাখলে শুধু বিস্মিত হয়ে দেখতাম নতুন নতুন প্রযুক্তির খবর, আগ্রহ নিয়ে পড়তামও। তবে মাঝেমধ্যে মনটা খারাপ হয়ে যেত, এত আবিষ্কারের মধ্যে বাংলাদেশের তেমন অবদান নেই। সেই থেকে মাথায় কিছু একটা করার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল।


চুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর মনে হলো এবার কিছু একটা করার সময় হয়েছে। কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে শুরু হলো আমাদের যাত্রা...।’ এভাবেই রোবট ও ইলেকট্রনিকস নিয়ে কাজ শুরু করার অভিব্যক্তি জানালেন চুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তামজিদ হোসেন।
শুধু তামজিদ নয়, ওরা ১৫ জন একসঙ্গে কাজ করছে। আর সবার ভাবনাগুলো একসূত্রে গেঁথেই এগিয়ে চলছে গবেষণা।
জানা যায়, তড়িৎ কৌশল বিভাগের এই ১৫ জন শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টায় আবারও নতুন উদ্যমে প্রাণোচ্ছলভাবে রোবট ও ইলেকট্রনিকস গবেষণা শুরু করেছে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা চুয়েট শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক সংগঠন অ্যান্ড্রোমিডা স্পেস অ্যান্ড রোবটিক রিসার্চ অরগানাইজেশন (অ্যাসরো)।
তরুণদের এ দলটি ইতিমধ্যে সফলভাবে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেছে, পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছে এর একটি অংশ। গত ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর আয়োজনে ‘অদম্য চট্টগ্রাম’ অনুষ্ঠানের চট্টগ্রামের ফুলকীতে অনুষ্ঠিত ‘বিজ্ঞান ও চট্টগ্রাম’-এর অন্যতম আকর্ষণ ছিল অ্যাসরোর ‘রোবটিকস অ্যান্ড অটোমেশন’ প্রকল্প প্রদর্শনী। নিজেদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দিয়ে দর্শকদের মন কেড়ে নিয়েছে এ দলটি। বিজ্ঞানমনস্ক এসব শিক্ষার্থীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আবাসিক হলে গড়ে উঠেছে একটি রোবট গবেষণাগারও। ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত প্রকল্পগুলো দেখতে চুয়েটের ড. কুদরত-ই-খুদা হলের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত এ গবেষণাগারে এসেছিলেন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহসান উল্লাহ্ ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সজল চন্দ্র বণিক। প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জেসচার অ্যান্ড ভয়েস কন্ট্রোলড রোবট, জিএসএম বেজড স্মার্ট হোম সিকিউরিটি সিস্টেম, মাইক্রোকন্ট্রোলার প্রোগ্রামার, রিমোট কন্ট্রোল রোবটিক কার, ডিটিএমএফ হোম অটোমেশন সিস্টেম, ডিজিটাল থার্মোমিটার উইথ ডাটা লগার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্ট কাউন্টার, কন্টাক্টলেস টেকোমিটার, লাইন ফলোয়ার রোবট, টেম্পারেচার বেইজড অটোমেটিক ফ্যান স্পিড কন্ট্রোলিং সিস্টেম, ডিজিটাল পাওয়ার সাপ্লাই ইত্যাদি।
প্রকল্পগুলো দেখে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমকে উৎসাহিত করে অধ্যাপক আহসান উল্লাহ্ বলেন, ‘গবেষণা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। আমার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা এই কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় আমার খুব ভালো লাগছে। অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এ কাজে সম্পৃক্ত হলে আরও ভালো কাজ হবে।’
তরুণদের গবেষণামূলক এ কাজকে প্রশংসিত করে সজল চন্দ্র বণিক বলেন, ‘খুব কম সময়ের মধ্যে অনেক প্রজেক্ট করেছে। এভাবে অগ্রসর হলে আরও ভালো প্রজেক্ট করতে পারবে।’
অ্যাসরোর ব্যবস্থাপনা প্রধান মো. শাহরিয়ার হক বলেন, ‘উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনে প্রকৌশলীরা অন্যতম হাতিয়ার হলেও বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন যথেষ্ট গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন না। সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যেই আমাদের এ প্রচেষ্টা।’
চুয়েটের এ শিক্ষার্থীরা ইলেকট্রনিকস ও রোবট নিয়ে কাজ করেন সম্পূর্ণ নিজ ব্যবস্থাপনায়। গবেষণাগারের জন্য আলাদা কক্ষ পেলেও এখনো তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা তাঁরা পাননি। তাঁরা জানান, গবেষণাগারে কোনো কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। নেই ইলেকট্রনিকস গবেষণার প্রাণ ওসিলোস্কোপও। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা এ ব্যাপারে সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন। সংগঠনটির লক্ষ্য এবিইউ রোবোকনসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা।
অ্যাসরোতে এখন শুধু তড়িৎ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা কাজ করলেও অন্যান্য বিভাগের জন্য সংগঠনটির দ্বার সর্বদাই খোলা বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা প্রধান।
সংগঠনটি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হ্যান্ডস অন ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড মাইক্রোকন্ট্রোলার’ নামে একটি ফ্রি কোর্স পরিচালনা করে।
আসাদুজ্জামান খান, চুয়েট প্রতিনিধি

No comments

Powered by Blogger.