গুরুত্বপূর্ণ তিন সফর

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়বে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে এলেন তিনটি বড় শক্তির তিন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁরা হলেন জাপান সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী উপ-প্রধানমন্ত্রী কাতসুইয়া ওকাদা, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।


এর আগে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে দেশ দুটির এত গুরুত্বপূর্ণ কোনো মন্ত্রীর আগমন ঘটেনি। ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এর আগে দেশ দুটি সফর করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। ওবামা শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। সুযোগ পেলে তিনিও হয়তো বাংলাদেশ সফরে আসবেন। আর প্রতিবেশী বৃহৎ শক্তি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এর আগে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরো অনেক মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। এ সবই বর্তমান মহাজোট সরকারে উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক সাফল্য। তা ছাড়া জঙ্গিবাদ দমন, দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের ১৪ ধাপ অগ্রগতি, আন্তর্জাতিক ঋণমান সূচকসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ মামলায় জয়- নানা দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও অনেকটা উজ্জ্বল হয়েছে এবং বাংলাদেশের গুরুত্বও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশ তার এ অর্জনগুলো ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
জাপান বাংলাদেশের একটি অকৃত্রিম বন্ধু দেশ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। যদিও সুনামি ও পারমাণবিক দুর্যোগের কারণে দেশটি এখন এক সংকটময় অর্থনৈতিক অবস্থায় রয়েছে, তার পরও জাপানি উপ-প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের প্রতিশ্রুত উন্নয়ন সহযোগিতা থেকে পিছিয়ে যাবেন না। তিনি বাংলাদেশকে দ্রুত বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিদ্যমান বিরোধ কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন এবং নিজে মধ্যস্থতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে জাপানি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি দ্রুত অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট নিরসনের পরামর্শ দিয়েছেন। তাই জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তরোত্তর উন্নয়নই আমাদের কাম্য। অন্যদিকে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির একটি বড় অংশ বা প্রায় ২৫ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। ভবিষ্যতে এই পরিমাণ কিভাবে আরো বাড়ানো যায় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগকেও উৎসাহিত করতে হবে। আর ভারত হচ্ছে বাংলাদেশের নিকটতম ও বৃহত্তম প্রতিবেশী। দেশটির সঙ্গে রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। সংগত কারণেই দুই দেশের মধ্যে অনেক অনিষ্পন্ন বিষয় রয়ে গেছে। নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে অনেক সমস্যা। তার পরও নিজ নিজ উন্নয়নের স্বার্থেই দেশ দুটির মধ্যে সুসম্পর্ক অত্যন্ত জরুরি। সুসম্পর্ক বজায় থাকলে আলোচনার মাধ্যমে অনেক সমস্যারই সমাধান হবে। এরই মধ্যে কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে। আবার তিস্তার পানিবণ্টনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে। ভারতীয় অর্থমন্ত্রীর এ সফর এসব সমস্যার সমাধান এবং উভয় দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উত্তরোত্তর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। আর শুধু এই তিনটি দেশই নয়, আমাদের চীন, মালয়েশিয়া, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সম্পর্কোন্নয়নে সমানতালে এগিয়ে যেতে হবে। আশা করি, বাংলাদেশ তার এ কূটনৈতিক দক্ষতা ভবিষ্যতে আরো গতিশীলভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে।

No comments

Powered by Blogger.