মার্ক ম্যাগনিয়ার ও ইন্দিরা এ আর লক্ষ্মানন-বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারি শক্তিশালী হবে

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে সমৃদ্ধ এবং আরো শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারি বৃদ্ধিতে উদ্যোগী ভূমিকা নেবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে- এমনই প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্রের।


বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম জনসংখ্যাধিক্যের বাংলাদেশ এ অঞ্চলের অস্থিতিশীল দেশগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীলও বটে। দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বব ব্ল্যাকও এ কথা স্পষ্টত বলেছেন। হিলারি ক্লিনটনের সফরকে বাংলাদেশ সরকার বড় একটি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে পারে। তারা প্রমাণ করতে পারে, তাদের এ দেশটি গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য অংশীদারির প্রকৃত দাবিদার। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী কর্মসূচিতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অংশীদার। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে বাংলাদেশ সর্বাধিক সহযোগিতা প্রদানকারী দেশ। আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ওবামা প্রশাসনের পাশে আছে আন্তরিকভাবে। বিশেষ করে বিশ্বস্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন-সংশ্লিষ্ট জটিলতা নিরসনে মুসলমানদের যুক্ত করার ব্যাপারে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয়।
অন্যদিকে ২০০৮ সাল থেকে বেসামরিক পরমাণু চুক্তি সম্পাদনের পর যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সামরিক ও কৌশলগতভাবে অধিকতর ঘনিষ্ঠতর হবে- এমন প্রত্যাশা করে আসছে। হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের পর তিন দিনের সফর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে সহযোগিতা করবে। বিশেষ করে ভারতে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে সাধারণ্যে ইতিবাচক মানসিকতা আরো বৃদ্ধি পাবে। এটা বিভিন্ন বিষয়েই হতে পারে, যদিও সামরিক ও পারমাণবিক অনেক বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত মিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তবে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অটুট রাখার ব্যাপারে ভারত সচেতন থাকবে সম্পূর্ণভাবে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এর পরও বিশ্লেষকদের মতে এখনো কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলার মতোই। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে আলোচনা-পর্যালোচনা করেছে এত বিষয় নিয়ে আলোচনা আগে কখনো হয়নি।
হিলারি ক্লিনটন চীন সফর নিয়েও কথা বলতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণার সোমবারের বৈঠককালে। আঞ্চলিক বিষয়গুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের বিষয়টিও সেখানে গুরুত্বসহ আলোচিত হবে। কারণ ২০১৪ সালে তারা আফগানিস্তানের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব আফগানদের হাতে ছেড়ে দিতে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টিকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন পাকিস্তানের চেয়ে ভারতকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। কিন্তু পাকিস্তান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত কে শংকর বাজপেয়িও ইতিবাচক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উন্নয়ন হওয়াটা তো স্বাভাবিক। প্রকৃতিগতভাবেই এটা হওয়া উচিত।
ভারতের বিশ্লেষক ও অভিজ্ঞজন মনে করেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এখন যে সম্পর্ক বিরাজ করছে তাকে কাজে লাগানোর উৎকৃষ্ট সময় এটা। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এও মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র-আফগানিস্তান অংশীদারি চুক্তিতে আঞ্চলিক স্বার্থরক্ষার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। আর হিলারির ভারত সফরকালে সে বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র চাইবে বাণিজ্যিকভাবে ভারতের কাছ থেকে আরো কী সুবিধা আদায় করা যায়। তারা বাণিজ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের উন্নয়ন চাইবে। তারা চাইবে ভারতের শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে খুচরা বাজার সব জায়গাতেই প্রবেশ করতে। একই সঙ্গে সিরিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভারতের যে যোগসূত্র আছে তা কমিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতের নিশ্চয়তা চাইবে তারা। দেশ দুটি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। এতে পরস্পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেমন আছে, তেমনি বৈশ্বিক বিষয়ও আছে। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে যাই করুক না কেন সেগুলো যে সব সময়ই সুষ্ঠু ও সুন্দর এবং সফল হয়ে থাকে এমন বলার কোনো কারণ নেই। হিলারি ক্লিনটন চীন সফর শেষ করে ভারতে আসার আগে বাংলাদেশও সফর করবেন। গত ১২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতার প্রথম সফর এটি। বাংলাদেশে সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ, নিরাপত্তা, জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর বিষয়েও আলোচনা করবেন।

লেখকদ্বয় সাংবাদিক : লস অ্যাঞ্জেলেস টাইম ও ব্লুমবার্গ থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.