টুকিটাকি-৪৩ ফুট লম্বা সাপ ও পৃথিবীর তাপমাত্রা

এখন পর্যন্ত যত সাপের খোঁজ পাওয়া গেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সাপ টাইটানোবোয়া। কত বড়? ৪৩ ফুট লম্বা, মানে একটি বাসের সমান! ভাগ্য ভালো, এ বিশাল সাপটি এখন আর বেঁচে নেই। সত্যিকার অর্থে এটি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে বহু আগেই, সেই ডাইনোসর যুগে।


বিজ্ঞানীরা ফসিল গবেষণায় এর সন্ধান পেয়েছেন। আকারে বিশাল হওয়ায় এটি ছিল ওজনেও অনেক ভারী, প্রায় এক টন।
অজগর বা বোয়া সাপের মতোই টাইটানোবোয়া ছিল নির্বিষ সাপ। প্রথমে এটি শিকারকে মুখ বা শরীর দিয়ে চেপে ধরে আয়ত্তে এনে তারপর খেত। তবে এখনকার সাপেরা যেমন শীতল রক্তবিশিষ্ট হয়, টাইটানোবোয়া কিন্তু তেমনটা ছিল না। বরং এটি ছিল উষ্ণ রক্তের প্রাণী, অর্থাৎ পরিবেশের তাপমাত্রার সঙ্গে এর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। শরীরে তাপ উৎপন্ন করে শরীর গরম রাখতে হয়, না হলে শারীরিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয়। টাইটানোবোয়ার এই বিশাল আকৃতি সে সময় পরিবেশের গড় তাপমাত্রা সম্পর্কে জোরালো তথ্য দিয়েছে। এই বোয়া সাপের যে আকার, সেটার জন্য বেশ ভালো রকম উষ্ণ পরিবেশের প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে দেখেছেন, সেই উষ্ণতার পরিমাণ এখনকার চেয়ে প্রায় ১০ ডিগ্রি বেশি, অর্থাৎ তখন গড় তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৯১ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এই হিসাবটা সে সময়ের পরিবেশ সম্পর্কেও বিজ্ঞানীদের ধারণা দিচ্ছে। কারণ, এই উষ্ণ তাপমাত্রা চিরহরিৎ বনাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। স্বভাবতই বিজ্ঞানীদের ধারণা, বনাঞ্চল ও বনাঞ্চলসংলগ্ন জলাভূমিতেই ছিল টাইটানোবোয়ার বসবাস। টাইটানোবোয়ার আকৃতি থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বের করার পর বিজ্ঞানীরা পড়ে গেছেন নতুন দ্বন্দ্বে। তাপমাত্রা এত বেশি কীভাবে হওয়া সম্ভব? এখন পর্যন্ত একটাই উপায় আছে, আর সেটা হলো গ্রিনহাউস অ্যাফেক্ট। বায়ুমণ্ডলে তখন নিশ্চয় কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল, সূর্যের তাপ আসতে পারত, কিন্তু বেরিয়ে যেতে পারত সেই তুলনায় কম। আর তাই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।
সুব্রত দেব নাথ

No comments

Powered by Blogger.