গণপিটুনিতে ছাত্র-মৃত্যু-মানুষ কেন আইন হাতে তুলে নেবে?

রাজধানীর শহরতলিগুলোর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যে পত্রপত্রিকায় অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে এটি স্পষ্ট যে_ সাভার, আমিনবাজার, কেরানীগঞ্জসহ রাজধানীকে বেষ্টন করে থাকা অঞ্চলগুলোতে অপরাধী, পলাতক আসামি, ডাকাত, মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে।
আর শহরতলিতে গড়ে ওঠা এ অপরাধচক্রের মাশুল দিতে হচ্ছে স্থানীয় জনগণকে। বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতের উপদ্রব বেড়ে উঠেছে। ফোনে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অদৃশ্য কোনো ডাকাতের নামে চাঁদা চাওয়া হলেও চাঁদা না পেলে দৃশ্যমান হামলার ঘটনা ঘটছে। ডাকাতের উপদ্রবে অতিষ্ঠ নাগরিকরা সাভারে পাড়ায় পাড়ায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পাহারার ব্যবস্থা করেছে বলেও খবর এসেছে। কেরানীগঞ্জেও অনুরূপ নাগরিক উদ্যোগের দেখা মিলেছে। রাজধানীর উপকণ্ঠে আমিনবাজারেও অনুরূপ ব্যবস্থার কথা জানা গেল এক মর্মান্তিক ও বিয়োগান্ত ঘটনার পর। আমিনবাজারের বরদেশী গ্রামে গিয়ে শবেবরাতের রাতে গ্রামবাসীর পিটুনিতে নিহত হয়েছেন ছয় ছাত্র। ঘটনার বিবরণে জানা যাচ্ছে, ডাকাতের উপদ্রবে ভীত গ্রামবাসী ছাত্রদের ডাকাত ঠাওরে আক্রমণ করে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দুঃখজনক, কোনো অবস্থাতেই আইন হাতে তুলে নেওয়া নাগরিকদের কর্তব্য নয়। সন্দেহ হলে, এমনকি কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেলেও গ্রামবাসীর উচিত ধৃত ব্যক্তিদের পুলিশের হাতে দেওয়া। কিন্তু তা না করে যখন স্রেফ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ছয়জন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তখন গ্রামবাসীর মানবিকতা বোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অল্পবয়সী ছয় ছাত্রকে পেটানোর সময় কারও মনেই যে কোনো প্রশ্ন উঠল না, কেউই যে যাচাই করে দেখার প্রয়োজনবোধ করল না_ তা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয়াবহ নৃশংসতা ও অমানবিকতা দানা বেঁধেছে। এ ধরনের অসহিষ্ণুতা কি দেশের বা রাজধানীর মানুষের মধ্যেই তৈরি হয়েছে, নাকি অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতেই এর প্রকোপ বেশি তা নিশ্চয় দায়িত্বশীল মহলগুলো খতিয়ে দেখবে। এমন সম্মিলিত নৃশংসতার বিহিত কীভাবে সম্ভব তাও নিশ্চয় ভেবে দেখা হবে। যারা অল্পবয়সী তরুণদের হত্যার সঙ্গে জড়িত বা হত্যাকে প্ররোচিত করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা দরকার। প্রাথমিক তথ্যমতে, ছয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য বহু মানুষ জড়িত। নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত এ মানুষগুলো কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে বিবেচনাবোধ হারিয়ে স্রেফ সন্দেহের বশে ছয়টি প্রাণ কেড়ে নেওয়ার মতো অপরাধ করতে পারে, সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। আমিনবাজারের গ্রামগুলোতে ডাকাতের হাত থেকে নিস্তার পেতে গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা পর্যন্ত করেছিল। আমিনবাজারে যখন এমন অবস্থা তখন সাভার থানায় ডাকাতির রেকর্ড পর্যন্ত নেই। ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশ কী ভূমিকা নিয়েছিল তা তাদের এই বেখবর থাকা থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। পুলিশ যখন বেখবর তখন নাগরিকদের নিরাপত্তা তারা কীভাবে দেবে? মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মর্মান্তিক ছাত্র হত্যার ঘটনায় প্রথমেই আইনের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার সংকটের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। খোদ রাজধানীর উপকণ্ঠে আইন হাতে তুলে নেওয়ার এমন পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। এদিকে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মনোযোগ দেওয়া দরকার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে যদি ইতিমধ্যে কোনো শৈথিল্য হয়ে থাকে তবে তার বিহিত করা উচিত। পাশাপাশি, শহরতলিগুলোতে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী, অপরাধীদের অভয়ারণ্যগুলোতে অভিযান পরিচালিত হওয়া দরকার। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন ঘটুক এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.