এমপিত্বও ছাড়লেন সোহেল তাজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের প্রায় তিন বছরের মাথায় 'সংগত' কারণে জাতীয় সংসদের সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করলেন তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। এর আগে ২০০৯ সালের ৩১ মে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।


গাজীপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এবং দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের একমাত্র ছেলে সোহেল তাজ গতকাল সোমবার সংবিধানের ৬৭(২) ধারা উল্লেখ করে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন স্পিকারের দপ্তরে।
উল্লেখ্য, সংবিধানের ৬৭(২) ধারায় বলা হয়েছে, 'কোন সংসদ সদস্য স্পিকারের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করিতে পারিবেন, এবং স্পিকার কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকিলে বা অন্য কোন কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ডেপুটি স্পিকার যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হইবে।' যেহেতু স্পিকারের দপ্তরে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে সংবিধানের ধারা অনুযায়ী সোহেল তাজের আসন শূন্য হয়ে গেছে।
সোহেল তাজের ব্যক্তিগত সহকারী আবু কাউসার পদত্যাগপত্রটি সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কার্যালয়ে জমা দেন এবং স্পিকারের কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন।
স্পিকারকে উদ্দেশ করে লেখা পদত্যাগপত্রে সোহেল তাজ বলেন, 'মহোদয়, আসসালামু আলাইকুম। আমার নির্বাচনী এলাকা ১৯৭, গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া)। আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৭(২) ধারা মোতাবেক আপনার নিকট আমার পদত্যাগপত্র পেশ করলাম। ধন্যবাদান্তে, তানজিম আহমদ (সোহেল তাজ)।' আবু কাওসার কালের কণ্ঠের কাছে পদত্যাগপত্রের বিষয়টি স্বীকার করলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাজ পদত্যাগের কোনো কারণ উল্লেখ না করলেও কাপাসিয়ার জনগণের উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠিতে কাপাসিয়ার মানুষের সম্মান রক্ষার্থে এ কাজ করেছেন বলে দাবি করেন। তবে মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করলেও আওয়ামী লীগই তাঁর শেষ ঠিকানা বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। চিঠিতে তিনি বলেন, 'কথার পেছনে অনেক কথা থাকে। অনেক লুক্কায়িত সত্য থাকে। যা দেশ, জনগণ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে জনসম্মুখে বলা উচিত নয়। আর তা সম্ভবও নয়। শুধু এটুকু বলি, আমি সংগত কারণেই এমপি ও মন্ত্রিত্বের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।'
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী পদত্যাগের ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট তাঁর পদত্যাগপত্র হাতে পাওয়ার পর তা কার্যকর হবে। দুপুরে সংসদ ভবনের বাসায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'সোহেল তাজের চলে যাওয়া দুঃখজনক। এটা আমাদের রাজনীতির জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এটা হওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু হয়ে গেছে। এ ধরনের পদত্যাগকে এখন আওয়ামী রাজনীতিবিদদেরই ওভারকাম করতে হবে।'
তবে সোহেল তাজের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক চিন্তাভাবনা করে বাস্তবতার নিরিখেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পদত্যাগী এই সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। ঢাকায় তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে সোহেল তাজ বলেন, কাপাসিয়ার জনগণের মর্যাদার কথা ভেবে তিনি ২০০৯ সালে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন এবং একই কারণে তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করলেন। এ আসনে উপনির্বাচনে তিনি কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ ছাড়া এ মুহূর্তে সক্রিয় রাজনীতিতে আসা কিংবা দেশে ফেরার চিন্তা করছেন না সোহেল তাজ।
২৩ এপ্রিল, ২০১২ তারিখ উল্লেখ করে এলাকাবাসীর উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো খোলা চিঠিতে সোহেল তাজ বলেন, 'কথার পেছনে অনেক কথা থাকে। অনেক লুক্কায়িত সত্য থাকে। যা দেশ, জনগণ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে জনসম্মুখে বলা উচিত নয়। আর তা সম্ভবও নয়।'
খোলা চিঠি

No comments

Powered by Blogger.