অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রই পথনির্দেশক হতে পারে-রাজনীতিতে যোগ্য নেতৃত্ব

রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চার সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে তা জাতীয় রাজনীতির জন্য একটি সুষ্ঠু ও সুস্থ ধারা সৃষ্টি করতে পারে। জাতীয় সংকট মোকাবিলায় রাখতে পারে কার্যকর ভূমিকা। কার্যত রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপরই আমাদের আইন প্রণয়ন ও রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের উৎ কর্ষ অনেকটা নির্ভরশীল।


দুঃখজনক হলেও সত্য, জাতীয় রাজনীতিতে যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির প্রস্তুতির অভাব লক্ষ করা যায় প্রায় সব রাজনৈতিক দলেই। রাজনৈতিক দলবিধিতে তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব ও প্রতিনিধি বাছাইয়ের যে বিধান আছে, তা-ও যথাযথভাবে অনুসৃত হয় না। ওপর থেকে নেতৃত্ব চাপিয়ে দিলে দলে যেমন স্থবিরতা দেখা দেয়, তেমনি যোগ্য ব্যক্তিরা রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন দলের প্রবীণ নেতাদের কণ্ঠে সেই রকম হতাশার কথাই শোনা গেছে। এটি কোনোভাবেই সুস্থ রাজনীতি নয়। গত রোববার আওয়ামী লীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল জলিল ও ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যে এরই প্রতিফলন দেখতে পাই। অন্যদিকে বিএনপির সভায় ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিনও নেতৃত্বের দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রবীণ রাজনীতিক আব্দুল জলিল বলেছেন, ‘রাজনীতি এখন আর রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে নেই, ব্যবসায়ীরা দখল করে নিয়েছেন। সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুপস্থিতির সুযোগে ব্যবসায়ীরা সংসদকেও রাজনীতিবিবর্জিত করে তুলেছেন।’ আরেকটি আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রাজনৈতিক নেতারাই রাজনীতির সুনাম নষ্ট করেছেন। এখনো দলে পদ পেতে রাজনৈতিক নেতারা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনকে নিজেদের পক্ষে আনতে চেষ্টা-তদবির করে যাচ্ছেন।’ বাংলাদেশের রাজনীতির এই দুরবস্থা এক দিনে হয়নি। খরস্রোতা নদীর প্রবাহ রুদ্ধ করে রাখা হলে পানি দূষিত হবেই।
এক-এগারোর রাজনৈতিক ঘূর্ণিঝড়ের পর রাজনৈতিক নেতৃত্বে গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল, তা ক্রমশ বুদ্বুদের মতো মিলিয়ে যেতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন এবং দলের আর্থিক আয়-ব্যয়ের হিসাবও কাগুজে দলিলে পরিণত হয়েছে। জনগণ রাজনৈতিক দলের আয়ের উৎ স জানতে পারছে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দক্ষতা বাড়াতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চার বিকল্প নেই। দলীয় ফোরামে কথা বলতে পারলে ভিন্নমতাবলম্বীদের বাইরে এসে ক্ষোভ প্রকাশেরও প্রয়োজন পড়বে না। দলের ভেতরে খোলামেলা মত প্রকাশের সুযোগ থাকলে সরকার বা দলের ভুলও দ্রুত সংশোধন করা সম্ভব।
অন্যদিকে আবদুল মতিনের কথাটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। কেন রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে, সে ব্যাপারে নেতৃত্বের উচিত আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হওয়া। পারস্পরিক দোষারোপ নয়, বরং আত্মসমালোচনাই রাজনীতিতে সঠিক ধারায় চালনা করতে পারে। একজন ব্যক্তি ব্যর্থ হলে বড়জোর তাঁর পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু রাষ্ট্র ও রাজনীতির চালকেরা ব্যর্থ হলে তার খেসারত দিতে হয় গোটা জাতিকেই। অতএব রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলীয় নেতৃত্ব বাছাইয়ে গঠনতন্ত্র অনুসৃত হবে। দলে সবার খোলামেলা মত প্রকাশের সুযোগ থাকবে। তাতে রাজনীতি যেমন রাজনীতিকদের হাতে থাকবে, তেমনি যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব গড়ার পথও সুগম হবে।

No comments

Powered by Blogger.