আমার জীবনে একটা বড় অপূর্ণতা আছেঃ ফারাহ রুমা by ফাহিম ফয়সাল

ফারাহ রুমা, আমাদের শোবিজের সুপরিচিত একটি নাম। নজরকাড়া গ্ল্যামার আর অভিনয় দক্ষতায় উঠে এসেছেন লাইমলাইটে। ১৯৯৭ সালের লাক্স-সুন্দরীর খেতাব বিজয়ী ফারাহ রুমা মডেলিং আর উপস্থাপনাতেও দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। সম্প্রতি এই সুন্দরীর অভিষেক হয়েছে বড়পর্দায়।

নারগিস আক্তারের পরিচালনায় ফারাহ রুমা অভিনীত প্রথম ছবি ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ বর্তমানে আছে মুক্তির মিছিলে। নন্দিত অভিনেত্রী, মডেল ও উপস্থাপিকা ফারাহ রুমার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলানিউজ। তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

বাংলানিউজ : মিডিয়ায় আপনার পথ চলার শুরু হলো কীভাবে?
ফারাহ রুমা : মিডিয়ায় আমার পথচলা শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। লাক্স-আনন্দধারা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অনেকটা শখের বশেই ছবি পাঠিয়েছিলাম। কল্পনাও করি নি যে, খেতাব জিতবো। অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করি প্রখ্যাত অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেনের ‘সাঁকো’ নাটকের মধ্য দিয়ে। তবে ফেরদৌস হাসানের পরিচালনায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘শুভদৃষ্টি’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। এটি আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। এ নাটকে আমি অভিনয় করে সবার নজরে চলে আসি। দারুণ প্রশংসিত হয় এতে আমার অভিনয়। এরপর থেকেই নির্মাতারা আমাকে তাদের নাটকে অভিনয়ের জন্য ডাকতে থাকেন।

বাংলানিউজ : বর্তমানে কি কি কাজ করছেন ?
ফারাহ রুমা : কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছি। সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘কয়েকটি অমিমাংসীত গল্প’-এর শুটিং শেষ করলাম। টানা ২০দিন ধরে নাটকটির শুটিং হয়েছে। ৪টি গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে এ ধারাবাহিকটি। গল্পগুলো হচ্ছে- ‘রাজপ্রাসাদের কহিনী’, ‘পরী রাণীর ঘাট’, ‘এক জেলে বধূর গল্প’ ও ‘আমনুরা জংশন’। সায়েন্স ফিকশন ও ভৌতিক আবহের গল্প এগুলো। ৪টি গল্পেরই কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। মজার ব্যাপার হলো আমার করা চারটি চরিত্রই অশরীরি। ‘আমাদের সবার জীবনে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে থাকে। ধারাবাহিকটির চারটির গল্পগুলোর মধ্য দিয়ে সেগুলোই তুলে ধরা হয়েছে। অভিনয় করলাম আশরাফ নূরের ধারাবাহিক নাটক ‘শেষকথা’ আর শাহরিয়ার নাজিম জয়ের পরিচালনায় ‘কন্ট্রাক্ট’ নামের  একটি নাটকে। হাতে আছে আরো বেশ কয়েকটি নাটক।

বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম : আপনার অভিনয় ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য কাজ কোনগুলো?
ফারাহ রুমা : আমার দৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে ‘শুভদৃষ্টি’, ‘লদিয়া’, ‘অহংকার’, ‘সিন্দুক’, ‘ফ্রেমে বাঁধানো প্রেম’, ‘সম্পূর্ণ রঙিণ’, ‘শ্যাওলা’, ‘গৌরচন্দ্রিকা’, ‘এইসব অন্ধকার’, ‘একটা কিনলে একটা ফ্রি’ ইত্যাদি। এসব নাটকে অভিনয় করে বেশ সাড়া পেয়েছি। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে আমার অভিনয়ে প্রচারিত নাটকগুলো মধ্যে ‘জট’, ‘লাল গোলাপ’, ‘সাদা মন’, ‘সবাই তোমায় ছাড়ে ছাড়–ক’, ‘রূপকথা’, ‘ঈদে অপহরণ’ ইত্যাদি নাটকে কাজ করে ভালো সাড়া পেয়েছি।

বাংলানিউজ: যাদের সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য পান, এমন কয়েকজন নির্মাতা ও সহশিল্পীর কথা জানতে চাই?
ফারাহ রুমা: আমার প্রিয় পরিচালকদের তালিকায় আছেন- গিয়াসউদ্দিন সেলিম, নূরুল আলম আতিক, শহিদুজ্জামান সেলিম, সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড ও শিহাব শাহিন। তাদের নাটকে কাজ করতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য পাই। সহশিল্পী হিসেবে আমার পছন্দ হচ্ছে আফজাল হোসেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, মাহফুজ আহমেদ ও আনিসুর রহমান মিলন। তবে একজন পেশাদার অভিনেত্রী হিসেবে সহশিল্পীদের সবার সঙ্গেই কাজ করতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।


বাংলানিউজ : আপানার দৃষ্টিতে এ সময়ের তরুণ পরিচালকরা কেমন কাজ করছেন?
ফারাহ রুমা : তরুণ পরিচালকদের কাজের মধ্যে আন্তরিকতা থাকে। তবে কেউ কেউ শটকাটে কাজ করতে চান। তরুণ পরিচালকদের প্রতি আমার আহ্বান, যথেষ্ট সময় নিয়ে পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে কাজ করার জন্য। তবেই কাজটি ভালো আর মান সম্পন্ন হবে। কাজের ডেডিকেশন ছাড়া সাফল্য পাওয়া যায় না।


বাংলানিউজ : এসময়ের নবীন অভিনেতা-অভিনেত্রী সম্পর্কে আপনার মন্তব্য ?
ফারাহ রুমা : নতুনদের অনেকেই ভালো করছেন। আবার নবীনদের অনেকেই ভালোভাবে কাজ করার চেয়ে রাতারাতি তারকা হওয়ার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেন। সত্যি বলতে কী, কাজ ভালো না করলে কোনোভাবেই তারকাখ্যাতি পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য অধ্যবসায় দরকার। অভিনয়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। নিজেকে সত্যিকার অর্থেই একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন থাকতে হবে।

বাংলানিউজ : সময়ের সঙ্গে কতটুকু অগ্রসর হয়েছে আমাদের মিডিয়া ?
ফারাহ রুমা : আমাদের দেশের টিভি মিডিয়ায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। এসব পরিবর্তন এসেছে অবশ্য ধাপে ধাপে। যেমন আগের নাটকগুলো হত একরকম। আর এসময়ের নাটকগুলো হয় তার থেকে একটু আলাদা। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের রুচিরও পরিবর্তন হয়, এটি যেমন ঠিক তেমনি স্বকীয়তা ও মান বজায় রাখাটা খুবই জরুরী। কাজ ও চরিত্রের প্রয়োজনে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এখন বেশ পরিশ্রম করছেন। নতুন নতুন প্রযুক্তি যোগ হচ্ছে। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করছি কাজ করতে গিয়ে।


বাংলানিউজ : সম্প্রতি বড় পর্দায় অভিনয় করেছেন, আপনার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাই।
ফারাহ রুমা : নারগিস আক্তারের পরিচালনায় ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ ছবিতে আমি অভিনয় করেছি। অনেক আগেই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অফার পেয়েছিলাম, কিন্তু ব্যাটে বলে মিলে নি বলে অভিনয় করা হয় নি। বড়পর্দার সব আয়োজনই বড়। ভালো লেগেছে খুব কাজ করতে। মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত এই  ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায় আছি। এটি একটি কমার্শিয়াল ফিল্ম। আমার জীবনে একটা বড় অপূর্ণতা আছে। আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আর্টফিল্ম মানে জীবন ঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্রে অভিনয় করা। অপেক্ষায় আছি, এরকম একটা সুযোগের।


বাংলানিউজ : এনটিভিতে আপনার উপস্থাপনায় প্রচার হয় ‘আমারও গাইতে ইচ্ছে হলো’। জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানটি নিয়ে কিছু বলুন?
ফারাহ রুমা : আমি অনুষ্ঠানটির একদম শুরুথেকেই উপস্থাপনা করছি। এই একটি মাত্র অনুষ্ঠান আমি উপস্থাপনা করি। যেটা উপস্থাপনা করে আমি খুবই আনন্দ পাই। এর কারণ হচ্ছে দেশ বিদেশে অনুষ্ঠানটির অনেক দর্শক রয়েছেন। দর্শকপ্রিয় এ অনুষ্ঠানের পর আমি উপস্থাপনার অনেক অফার পেলেও সেগুলো ফিরিয়ে দিয়েছি। ভবিষ্যতে উপস্থাপনায় নিয়মিত হবো কিনা বলতে এখনই বলতে পারছি না।

বাংলানিউজ : এ পর্যন্ত কোন কোন বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন ? আগামীতেও কি মডেলিং চালিয়ে যাবেন?
ফারাহ রুমা : এ পর্যন্ত আমি অনেকই বিজ্ঞাপনেরই মডেল হয়েছি। এর মধ্যে আলাদা করে লাক্স, কসমস বিস্কুট, পূর্বাচল সিটির বিজ্ঞাপনের কথা বলা যেতে পারে। আগামী ভালো বিজ্ঞাপনের অফার পেলে অবশ্যই কাজ করবো।

বাংলানিউজ: অভিনয়, উপস্থাপনা আর মডেলিংয়ের বাইরে আর কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ?
ফারাহ রুমা : আসলে ছোটবেলা থেকেই আমি নাচ শিখেছি। অভিনয় আর উপস্থাপনার বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচও করি। এছাড়াও লাক্স ফটোসুন্দরীর বিচারকেরও দায়িত্বও পালন করছি।


বাংলানিউজ : ছোটবেলার কিছু কথা বলুন?
ফারাহ রুমা : ছোট বেলায় ভাই বোনদের মাঝে পড়ালেখায় সবচেয়ে ভালো ছিলাম আমি। তাই আর অন্যসব বাবা-মা’র মত আমার বাবা-মা’র ইচ্ছে ছিলো, আমি ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবো। কিন্তু পরে তা আর হয়ে উঠেনি। সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় হওয়ায় ছোটবেলায় হাওয়াইন গীটার ও নাচ শিখি। তবে পরিবারের কেউ কখনও ভাবেননি মিডিয়ায় কাজ করবো। পরে যখন কাজ শুরু করলাম, পরিবার থেকে উৎসাহ-উদ্দীপনা পেয়ে আসছি।


বাংলানিউজ : আপনার ভালো লাগা আর মন্দ লাগা সম্পর্কে জানতে চাই?
ফারাহ রুমা : ভালো লাগে কারো জন্য কিছু করতে পারলে। এছাড়াও কোন মানুষের ভালো দিকটা তুলে আনতেও ভালো লাগে। খারাপ লাগে মানুষ যখন না জেনে না বুঝে কোন মন্তব্য করে তখন।

বাংলানিউজ : আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা?
ফারাহ রুমা : যে কাজটাই করি না কেন, ভালোভাবে সুন্দরভাবে করতে চাই। কাজের মধ্যেই নিজের পরিচয় দিতে চাই। সুস্থ, সবল, সুন্দর ও ঝামেলামুক্ত একটা জীবন চাই।

No comments

Powered by Blogger.