প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন-এবার লিবিয়ায় গণবিদ্রোহ

ভূমধ্যসাগরের তীরে পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গত কয়েক দিনে সেখানে যে গণবিদ্রোহ দেখা দিয়েছে, সরকার তার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের হিংসাত্মক পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশ নির্বিচারে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। এমনকি বিমান থেকে গুলি ও বোমা মেরে নিরস্ত্র মানুষ হত্যার ঘটনাও ঘটছে।


একটি মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে সরকারি বাহিনীর হাতে চার শতাধিক লোক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে।
আমাদের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা হলো, সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার অভাব। সরকারি বাহিনীর নির্যাতনে ২৫ জন বাংলাদেশি নাগরিকের আহত হওয়া, কিংবা সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের হাতে ৪০০ বাংলাদেশি নাগরিকের জিম্মি হওয়ার ঘটনাকে উদ্বেগজনক বললেও কম বলা হবে। লিবিয়ায় বর্তমানে ৪০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক কর্মরত। বাংলাদেশিসহ যে বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিক লিবিয়ায় বসবাস করছেন, তাঁরা কোনোভাবেই সে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তা সত্ত্বেও তাঁরা সরকার বা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব লিবিয়া সরকারের।
জাতিসংঘের মহাসচিবসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ও বিশ্বনেতারা লিবিয়ায় সহিংসতার নিন্দা এবং সংযত হওয়ার জন্য লিবীয় সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। আমরাও মনে করি, দেশটির শাসকদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। উসকানিমূলক বক্তব্য ও আচরণ দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। মুয়াম্মার গাদ্দাফি ৪১ বছর ধরে দেশটি শাসন করলেও সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারেননি। এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। নাগরিকদের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারও নেই। এই অবস্থায় নিরুপায় হয়েই মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে।
এর আগে মিসর, তিউনিসিয়া ও ইয়েমেনে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম হলেও এত অল্প সময়ে এত বেশিসংখ্যক মানুষকে জীবন দিতে হয়নি। বরং তিউনিসিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বেন আলী ও মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক জনবিদ্রোহের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। মুয়াম্মার গাদ্দাফির ক্ষমতার ভিত্তি জনগণ নয়, সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্র। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারাও এখন আর তাঁর অপকর্মের দায় নিতে চাইছে না। সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে পদত্যাগ করেছেন বেশ কয়েকজন লিবীয় কূটনীতিক। বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারাও নিরস্ত্র প্রতিবাদকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এত কিছুর পর গায়ের জোরে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইলে সংঘাত ও প্রাণহানির সংখ্যা বাড়বে। অতএব গাদ্দাফির উচিত হবে দেয়াললিখন পড়া এবং বেন আলী ও মোবারকের পথ অনুসরণ করে দ্রুত ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো।
লিবিয়ায় যেসব বাংলাদেশি নাগরিক অবস্থান করছেন, তাঁদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা লিবিয়া সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করি। সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশ দূতাবাসেরও উচিত লিবীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা এবং আটক ব্যক্তিদের উদ্ধারে সহায়তা করা। পরিস্থিতির প্রতি তাঁদের সার্বক্ষণিক মনোযোগ থাকতে হবে, যাতে প্রবাসী নাগরিকদের করণীয় সম্পর্কে তাঁরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.