দুর্নীতির প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত হোক-ভারত ও বাংলাদেশের চিত্র কি ভিন্ন?

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বুধবার দেশটির টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছেন, তাঁর সরকার টুজি মোবাইল ফোনের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কেউ রেহাই পাবে না।


কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, তখন প্রধানমন্ত্রী এই নিরাপস ঘোষণা জনগণকে আশ্বস্ত করেছে। ইতিমধ্যে ভারতে দুর্নীতির দায়ে সরকারের মন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শুধু পদত্যাগেই বাধ্য হননি, দুর্নীতির দায়ে একজন মন্ত্রীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় তাঁর সরকারের আন্তরিকতা প্রকাশ পেয়েছে নিঃসন্দেহে।
কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ব্যর্থতার অভিযোগ আনলেও তাঁদের সাংসদেরা সংসদে যান না। আবার সরকারও সবকিছুতে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র আবিষ্কারে ব্যস্ত। অথচ কোনো সরকারের আমলে সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলছে, সে কথা হলফ করে বলা যাবে না। সরকারি কাজকর্মে দুর্নীতি হয়, এটি মোটামুটি স্বীকৃত। কিন্তু আইনগত দুর্বলতার কারণে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনের যে খসড়া অনুমোদিত হয়েছে, তাতে প্রতিষ্ঠানটি আরও কমজোর হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি তদন্ত করার আগে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। সরকারের অনুমতি নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি তদন্ত করা যায় না। এ ছাড়া বিচার-প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও দুর্বলতা তো আছেই। এ কারণে ১০-১৫ বছরেও অনেক মামলার সুরাহা হয়নি।
দুর্নীতি যে ভারতের রাষ্ট্র ও সমাজের বড় সমস্যা, সে কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু আমাদের এখানে কোনো সরকারই দুর্নীতির কথা স্বীকার করে না। কিন্তু ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর নানা কাহিনি প্রকাশ পেতে থাকে এবং প্রায় প্রতিটি সরকারই দেশ ধ্বংসের জন্য পূর্বসূরিদের দায়ী করে থাকে। এই অভিযোগের সত্যাসত্য নির্ণয় করাও সম্ভব হয় না বিচারের অভাবে। বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হলেও খুব কম রাজনীতিক ও পদস্থ কর্মকর্তাই শাস্তি পেয়েছেন। এ কারণেই সরকারের উচিত, অতীতের দুর্নীতিবাজদের বিচারের পাশাপাশি বর্তমানে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং দুদককে স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করতে দেওয়া। ভারতে কোনো মন্ত্রীর দুর্নীতি তদন্ত করতে সিবিআইকে কারও অনুমতি নিতে না হলে বাংলাদেশে কেন দুদককে অনুমতি নিতে হবে? শেয়ারবাজার নিয়ে ব্যাপক কারসাজির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে অন্য যেসব মন্ত্রণালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এসেছে, সেগুলোরও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সবকিছু বিরোধী দলের ওপর চাপালে দুর্নীতিবাজেরাই কেবল আশকারা পাবে না, সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানও মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।

No comments

Powered by Blogger.