যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে স্থবিরতা কবে কাটবে?-অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হোক

দুষ্টের দমন ও যোগ্যদের লালন জনপ্রশাসনের নীতি হলেও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যে তা আদৌ আমলে নিচ্ছে না, তার প্রমাণ আমরা হরহামেশাই পাচ্ছি। এই মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো তাঁদের দিয়েই পূরণ করা হয়েছে, যাঁরা অতীতে সত্য ও জবাবদিহিতা কমিশনে (ট্রুথ কমিশন) নিজেদের দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছিলেন।


এমনকি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এবং বমাল ধরা পড়া ব্যক্তিও এ তালিকায় আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত মঙ্গলবার প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, ‘দুর্নীতি করার কথা স্বীকার করে সত্য ও জবাবদিহিতা কমিশনে অর্থদণ্ড দেওয়া কর্মকর্তাদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর পদসহ শীর্ষস্থানীয় অন্তত পাঁচটি পদে বসানো হয়েছে।’ এঁদের মধ্যে আছেন সওজের প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের পরিচালক, সওজের পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান, প্রশাসন ও সংস্থাপন বিভাগের প্রধান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক ও রেলওয়ের মহাপরিচালক।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বেছে বেছে দুর্নীতির দায় স্বীকারকারী ও অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দিয়েই শীর্ষস্থানীয় পদগুলো পূরণ করতে আগ্রহী। এর একটি কারণ হতে পারে, ওই মন্ত্রণালয়ে অভিযোগমুক্ত কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নেই। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, সে ধরনের কর্মকর্তা থাকলেও তাঁদের খুঁটির জোর নেই, যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উভয় ক্ষেত্রেই যে সরকার ও জনপ্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দুর্নীতিবাজেরা উচ্চপদে বসে মাথার ওপর ছড়ি ঘোরালে সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের হতাশ হওয়াই স্বাভাবিক। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বলেছেন, ‘এসএসবির সিদ্ধান্তেই পদোন্নতি হয়েছে এবং নিয়মের বাইরে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয় না।’ আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো কোন নিয়মে পড়ে, তা তিনি বলেননি।
গত দুই বছরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সব কাজকর্মই যদি নিয়ম মেনে চলে থাকে, তাহলে যোগাযোগ খাতে এই স্থবিরতা কেন? ‘৬১ শতাংশ সড়ক নাজুক’ শিরোনামে প্রথম আলো প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল মন্ত্রণালয়। একে সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত বলেও প্রচার চালানো হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবেদনের কোথায় ভুল, তা তাঁরা বলেননি। মন্ত্রী সংসদে জানিয়েছিলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না পাওয়ায় সড়কগুলোর সংস্কারকাজ আটকে গেছে। এরপর সহযোগী অন্য এক পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, সড়ক ও রেল বিভাগের ৫২ শতাংশ এবং সেতু বিভাগের ৬২ শতাংশ বরাদ্দ ছাড় হওয়া সত্ত্বেও কাজ হয়েছে মাত্র যথাক্রমে ১৯ ও ৬ শতাংশ। এর জবাব কী?
প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আছে বলে দাবি করে বর্তমান সরকার। সে ক্ষেত্রে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনা সব অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করি। কে কীভাবে পদায়িত হয়েছেন বা পদোন্নতি পেয়েছেন, তা জানার অধিকার নিশ্চয়ই জনগণের আছে।

No comments

Powered by Blogger.