আয়োজনের সাফল্য বিজয়ের আশাও বাড়াল-ক্রিকেট বিশ্বকাপের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন

পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকা, ঢাকার মধ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, তার মধ্যিখানে চোখের মণির মতো এক মঞ্চ। সেই চোখ গোটা বিশ্বের দিকে তাকাল, আর গোটা বিশ্বও তাকাল বাংলাদেশের চোখে। এই অপূর্ব লগ্নই ভাস্বর হয়ে উঠল গতকাল সন্ধ্যায়—বাংলাদেশের মাটিতে উদ্বোধন ঘটল বিশ্বক্রিকেটের রোমাঞ্চকর মহোৎ সবের।


অতীতের সাফল্যের ইতিহাসে যোগ হলো নতুন মাত্রা। উপমহাদেশীয় তিন দেশের মিলিত আয়োজনে বাংলাদেশই হলো অগ্রণী। আর রাজধানী ঢাকা এক সন্ধ্যার জন্য হয়ে উঠল বিশ্বক্রিকেটেরও রাজধানী। ‘ও পৃথিবী, এবার এসে, বাংলাদেশ নাও চিনে’ গানে স্বাগত জানানো হলো বিশ্বের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীকে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি জমকালো ছিল সন্দেহ নেই। তিন দেশের সংস্কৃতির উপস্থাপনও ছিল দৃষ্টিকাড়া। কিন্তু বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে তুলে ধরার এ রকম সুযোগ যতটা বিরল, তত বিরল সৌন্দর্য সম্ভবত উপস্থাপন করা যায়নি। এ ধরনের অনুষ্ঠান যতটা সাবলীল ও চৌকষ হতে পারত, তা হয়েছে কি? বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রকৃতি—সবই ছিল, কিন্তু ঘাটতি ছিল উৎ কর্ষের। এ ধরনের বিরাট আন্তর্জাতিক আয়োজনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের এই প্রথম। তবে অনুষ্ঠানের আয়োজন শেষপর্যন্ত সুসম্পন্ন হয়েছে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।
আজ সেরা ১০টি ক্রিকেট দলের অন্যতম বাংলাদেশ। এমন সাফল্য আর কোনো খেলাতেই নেই। এই আত্মবিশ্বাসই বাংলাদেশের ক্রিকেট অভিযান আর বিশ্বকাপ আয়োজনকে একসূত্রে গেঁথেছে। ১৬ কোটি মানুষের চোখে আজ একটাই স্বপ্ন—বহু বছর মনে রাখার মতো বিজয় অর্জিত হবে। জয়ের তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত বাংলাদেশের আজ এটাই প্রত্যাশা। সমগ্র দেশবাসীর আস্থা ও প্রাণঢালা ভালোবাসা সাকিব বাহিনীর সঙ্গে আছে। নিকট অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও নিশ্চয় তারা সাফল্যের আরও বড় সোপান পার হবে। বাংলাদেশ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, বাংলাদেশ তাদের পাশে আছে।
কয়েক প্রজন্মের নিরলস প্রচেষ্টাতেই ক্রিকেট-মানচিত্রে বাংলাদেশ উজ্জ্বল স্থান করে নিয়েছে। খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ক্রিকেটভক্ত দর্শক এবং বিসিবি থেকে শুরু করে আইসিসি—সবার প্রযত্নেই বাংলাদেশের ক্রিকেট পরিণত হয়েছে। বিশ্বকাপের এই মাহেন্দ্রক্ষণে তাদের সবাইকে অভিনন্দন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বন্ধন জোরদার হওয়ার আশা করেছেন। একই সঙ্গে উপমহাদেশের মানুষের মধ্যেও বন্ধুত্বের রাখিবন্ধন খেলা ছাপিয়ে বাকি সব ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়ুক—এই প্রত্যাশাও আমাদের। ১৯ ফেব্রুয়ারির উদ্বোধনী ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু হবে বাংলাদেশের। আর বাংলাদেশের মাটিতে শেষ খেলা হবে ১৯ মার্চ। এই এক মাস গোটা বাংলাদেশই সবার মনোযোগে থাকবে। শান্তিপ্রিয়তা ও অতিথিবাৎ সল্যে বাংলাদেশের সুনাম পুরোটা সময় অক্ষুণ্ন রাখার দায়িত্ব সরকার, রাজনৈতিক দলসহ সবার। ক্রিকেট বিশ্বকাপ জাতীয় উৎ সব হয়ে উঠুক, বিশ্বকাপের আয়োজন সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হোক এবং জয় হোক ক্রিকেটের।

No comments

Powered by Blogger.