বইয়ের মেলা প্রাণের মেলা-মেলায় আজ শিশুপ্রহর by আশীষ-উর-রহমান

উচ্চকিত রোল আর জনসমাগম আগের দুই দিনের তুলনায় গতকাল ছিল বেশ কম। ফলে টিএসসি মোড় পার হতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ওদিক থেকে ভেসে আসা কোকিলের ডাক শোনা যাচ্ছিল মাঝেমধ্যেই। কোকিলের ডাকাডাকিরই মৌসুম।


তবে নিরাপদ নিবাস নেই বলে সচরাচর এখানে উতল হাওয়ায় ভেসে আসা এদের মন উচাটন করা কুহু কুহু শোনা যায় না। রমনা-সোহরাওয়ার্দীতে ছিটেফোঁটা কিছু সবুজের ছোপ কোনোমতে টিকে আছে। সেখানেই হয়তো আশ্রয় নেয় কোকিল। গ্রন্থমেলায় আসতে-যেতে শোনা যায় এদের গান। শিমুল-পলাশের রক্তিম আভা নজরে না এলেও ওই গানেই বসন্তের আমেজটুকু পাওয়া যায়।
আজ শিশুপ্রহর
আজ বৃহস্পতিবার কেবল শিশু-কিশোরদের জন্যই মেলার দ্বার খোলা হবে বেলা ১১টায়। শিশুপ্রহর চলবে বেলা তিনটা পর্যন্ত। শিশু-কিশোরদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকেরাও আসতে পারবেন। তিনটার পর মেলা সবার জন্য খোলা। শিশু-কিশোরেরা যাতে মেলায় এসে স্বচ্ছন্দে তাদের পছন্দের বই বাছাই করতে পারে, সে জন্যই এই ব্যবস্থা। শিশুপ্রহর হিসেবে আগামীকাল শুক্রবারও মেলার প্রথমার্ধ খোলা থাকবে।
মেলা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে
‘কোনো নতুনত্ব দেখছি না মেলায়। দিনে দিনে পরিবেশ বরং ঘিঞ্জি হয়ে আসছে। এত স্টল বরাদ্দ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু এও জানি, একাডেমীর পক্ষে উপায়ও থাকে না। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের কিছু দলীয় লোককে স্টল বরাদ্দ দিতে চাপ দেওয়া হয়। এদের অনেকেই প্রকাশকও নয়। তারা অন্যদের স্টল বিক্রি করে দেয়। যারা এসব স্টল কেনে তারা নেট বই, পাইরেটেড বই, অপাঠ্য বইতে মেলা ভরিয়ে ফেলে। তাই মেলা পরিচ্ছন্ন করতে হলে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। তা না হলে মেলার পরিসর যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে বা অন্যত্র সম্প্রসারিতও করা হয়, তাহলে খুব ভালো কিছু ফল হবে বলে আমার মনে হয় না।’ বলছিলেন কবি মোহন রায়হান। গতকাল মেলা চত্বরে কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। এবার মেলায় মিজান পাবলিশার্স থেকে এসেছে তাঁর কাব্যগ্রন্থ লাল মিছিলের ঐক্য। মিজান থেকেই আসবে তাঁর আরও একটি কাব্যগ্রন্থ আবৃত্তির কবিতা। এটি তাঁর বিভিন্ন বই থেকে বাছাই করা আবৃত্তির উপযোগী কবিতার সংকলন।
মোড়ক উন্মোচন
মেলায় গতকাল লোকসমাগম কম হলেও নজরুল মঞ্চের ভিড় কমেনি; বরং মোড়ক উন্মোচনের ভিড় বাড়ছেই। ১৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে এদিন। এর মধ্যে ছিল র‌্যামন থেকে সুরাইয়া আক্তার রিমার প্রবন্ধগ্রন্থ বর্জ্য অর্থকরি সম্পদ। মূর্ধন্য থেকে এসেছে রবীন্দ্রবিষয়ক পাঁচটি বই; এগুলো হলো—মৃদুল কান্তি চক্রবর্তীর পূর্ববঙ্গে লেখা গান, হায়াৎ সাইফের গীতাঞ্জলি, মাহমুদ আল জামানের চিত্রকর, আনোয়ারুল করীমের গ্রামোন্নয়ন ভাবনা এবং মুহম্মদ জমির হোসেনের শ্রীনিকেতন। বইগুলোর মোড়ক উন্মোচন করেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
নতুন বই
নতুন বই এসেছে ১০৩টি। প্রথমার স্টলের নতুন বইটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক। আশফাক হোসেনের লেখা মুক্তিযুদ্ধ: বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ। প্রথমা থেকে প্রকাশিত বই ইতিমধ্যে ছাপা ও রচনার মানের দিক থেকে পাঠকের আস্থা অর্জন করেছে।
অন্য নতুন বইয়ের মধ্যে আছে সূচীপত্র থেকে ড. রণজিৎ বিশ্বাসের ভাষাবিষয়ক প্রবন্ধ ব্যবহারিক বাংলা: যত ভুল তত কুল, সময় থেকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের স্মৃতিকথা অন্তরঙ্গ আলাপ, আসাদ চৌধুরীর কাব্য যেতে যেতে মধ্যযুগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ইউপিএল থেকে আব্দুল কাইয়ুমের বিজ্ঞানের রাজ্যে প্রশ্ন আর প্রশ্ন, অনিন্দ্য থেকে ড. সৌমিত্র শেখরের প্রবন্ধ সরকারি কর্মকমিশন এবং শিক্ষাভাবনা, আফসার ব্রাদার্স থেকে সাহাদত হোসেন খানের বিজ্ঞান স্বর্ণযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার, আদর্শ থেকে রেজাউদ্দিন স্টালিনের কাব্যগ্রন্থ যমজ সহোদর, নাসীর আলী মামুনের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ: তফাৎ ও সাক্ষাৎ, ঐতিহ্য থেকে আব্দুশ শাকুরের আত্মজীবনী কাঁটাতে গোলাপ আছে, জাগৃতি থেকে সালমা ইসলামের নারীবিষয়ক প্রবন্ধ নারীর ক্ষমতায়ন ও বিশ্ব বাস্তবতা, শাহীন প্রকাশনী থেকে এম আলমগীর খন্দকারের মুক্তিযুদ্ধের নাটক জয় পরাজয়, রুক্কুশাহ ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স থেকে রণজিৎ করের ধর্মবিষয়ক গ্রন্থ হিন্দু ধর্ম: বস্তুবাদ ও সামাজিক গড়ন এবং সনাতন ধর্ম মত ও মতান্তর।
এ ছাড়া মেলার আরও নতুন বইয়ের মধ্যে আছে শোভা প্রকাশ থেকে বিলু কবিরের গবেষণা হাটুরে কবিতায় সমাজ, শ্রাবণ থেকে নাজমুল আশরাফের গণমাধ্যমের দলীয়করণ, অ্যাডর্ন থেকে ফাহমিদুল হকের বাংলাদেশের ডিজিটাল চলচ্চিত্র: নতুন সিনেমার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ, ঐতিহ্য থেকে শাহাদুজ্জামানের কেশের আড়ে পাহাড় ইত্যাদি।
মেলার মঞ্চে
গতকাল মেলামঞ্চে ছিল ‘জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি: আবু জাফর শামসুদ্দীন’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ পড়েন হায়াৎ মামুদ। আলোচনা করেন আহমদ মাযহার, খালেদ হোসাইন ও সুব্রত বড়ুয়া। সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। সন্ধ্যায় শিল্পী আসগর দেওয়ান, দিল আফরোজ, মীনা বড়ুয়া, আবু বকর সিদ্দিক, ফকির শাহাবুদ্দিন, রহিমা খাতুন, সরদার রহমাতুল্লা, শান্তা সরকার, জামালউদ্দিন হাসান, সুজন হাওলাদার লোকসংগীতের সুরে মেলা চত্বর মুখর করে রেখেছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.