শুভ বড়দিনঃ প্রেমের পরশে সিক্ত হোক ধরনী

আজ ক্রিসমাস ডে। খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন। ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহত্ এবং সর্বজনীন এই ধর্মীয় উত্সব আমাদের দেশে শুভ বড়দিন নামে উদযাপিত হয়। খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা সারাবিশ্বে বিপুল উত্সাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে থাকেন।

পুণ্যময় এই দিনে আজ থেকে দু’হাজারেরও বেশি বছর আগে জেরুজালেমের কাছে বেথলেহেমের এক গোয়ালঘরে অত্যন্ত হতদরিদ্র পরিবেশে জন্ম নিয়েছিলেন যিশু। মাতা মেরীর গর্ভে শান্তির এই মহান বার্তাবাহক যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন পাপের পঙ্কিলতায় ডুবেছিল মানবসমাজ। যিশু পথভ্রষ্ট মানুষকে শোনালেন প্রেম ও শান্তির স্বর্গীয় বাণী। মানুষকে তিনি আহ্বান করলেন সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত সত্য-ন্যায়-সুন্দর ও কল্যাণের পথে। যিশু বললেন, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। হিংসা, ক্রোধ, প্রতিশোধ-প্রবণতার বিপরীতে মানবিকতা, প্রেম ও ভালোবাসা মানুষের মনে শান্তির অফুরান স্রোতধারার উত্স উন্মোচন করে দেয়। মহান মানবিকতার পক্ষে যে ঐশীবাণী তিনি প্রচার করে গেছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মানুষের প্রতি অন্তহীন প্রেম আর ভালোবাসার জন্য ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে এই মহামানব শ্রদ্ধার পাত্র। মা মেরীর কোল আলো করে যখন তিনি ভূমিষ্ঠ হন, তখন তাকে ঘিরে ছিল সীমাহীন দারিদ্র্যের ছায়া। ভাঙা গোয়ালঘরে যাবপাত্রে রাখা হয়েছিল সদ্যোজাত যিশুকে। মানব জাতিকে পূর্ণতার আলোকে উদ্ভাসিত করার মহান ব্রত পালন করাবেন বলেই হয়তো তার জীবন শুরু হয়েছিল এমন শূন্যতার মধ্য দিয়ে। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, বিরোধ ভুলে প্রেম-ভালোবাসা-ক্ষমা ও মানবতার বন্ধনে বিশ্বে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবন উত্সর্গ করেছেন তিনি। যিশুর প্রচারিত খ্রিস্টধর্মের সার কথাই হচ্ছে ক্ষমা ও ভালোবাসা, শান্তি ও সম্প্রীতি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শুভ বড়দিন উদযাপিত হচ্ছে আনন্দঘন পরিবেশে এবং ব্যাপক আয়োজনে। এদেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্তু সাম্প্রদায়িক নয়। যে যার ধর্ম পালন করার পাশাপাশি অন্যের ধর্মের প্রতি তাদের রয়েছে গভীর শ্রদ্ধাবোধ। এ কারণে এক সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উত্সবে অন্য সম্প্রদায়ের লোকজনের অংশগ্রহণের রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির সুন্দর চিত্রটি আর একবার প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে শুভ বড়দিনে।
দেশের বিভিন্ন গির্জায় বড়দিন উপলক্ষে যথারীতি অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা। খ্রিস্টমাস নামে পরিচিত এই প্রার্থনা অনুষ্ঠানে শামিল হন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী নানা বয়সী মানুষ। গির্জাগুলো সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি এবং আলোকমালায়। নভেম্বর মাসের শেষ শুক্রবারে যে ‘থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’ পালিত হয়, সেদিন থেকে শুরু হয়ে যায় বড়দিনের উত্সব; আয়োজন চলে পুরো ডিসেম্বর মাস। নতুন জামাকাপড়, প্রিয়জনদের উপহার প্রদান, কেক দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন, সব মিলিয়ে এক নির্মল আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শিশুদের অতিপ্রিয় শুভ্র শ্মশ্রুমণ্ডিত সান্তাক্রুজ সেজে কেউ কেউ অংশ নেন আনন্দ উত্সবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে হিংসা, হানাহানি, নারকীয় তাণ্ডব। মানুষই হয়ে উঠেছে মানুষের বড় শত্রু। রক্ত ঝরার যেন কোনো শেষ নেই। বাংলাদেশের অবস্থাও প্রায় তথৈবচ। রাজনৈতিক হানাহানি, প্রতিহিংসা ও ক্ষমতালিপ্সার দ্বন্দ্বে বারে-বারেই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে দেশের শান্তিপূর্ণ স্বাভাবিক জীবনধারা। এক-এগারোর প্রচণ্ড লগুড়াঘাতের পরও একশ্রেণীর রাজনীতিকের আক্কেল দাঁত গজিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। এই পটভূমিতে বিপন্ন, বিপর্যস্ত, হিংসা-হানাহানিতে বিদীর্ণ পৃথিবীতে যিশুর সম্প্রীতি ও মানবিকতার বাণী গুরুত্ব পেলে মানবসমাজে আবার ফিরে আসবে সুস্থতা। এই মহামানবের জন্মদিনে বিশ্বের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের, সেইসঙ্গে বাংলাদেশের খ্রিস্টান ভাই-বোনদের সবাইকে জানাই আমাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

No comments

Powered by Blogger.