সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে: মাহমুদুর রহমান মান্না

সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নতুন সমন্বয়কারী ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। পাশাপাশি মঞ্চের পক্ষ থেকে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কোটা বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে থাকারও ঘোষণা দেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যেভাবে লড়াই করছে শিক্ষার্থীরা, যেভাবে লড়াই করছেন শিক্ষকরা, গুণীজন, মুরুব্বিরা, আইনজীবীরা, সাংবাদিকরা, সবাই যে রকম করে নেমেছেন তাতে এই সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বেজেছে। আমরা আগেই বলেছি, এই পরিস্থিতি ওরা (সরকার) গায়ের জোরে মোকাবিলা করতে পারবে না। বাংলাদেশের টোটাল ফোর্স নামানো হয়েছে মুভমেন্ট যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে। থামাতে তো পারেনি। সরকার সবরকম নির্যাতন করবার পরেও এই আন্দোলন বন্ধ করতে পারেনি। এই আন্দোলন বাড়ছে, আন্দোলন আরও বাড়বে। গণতন্ত্র মঞ্চ তার সঙ্গে শুরু থেকে ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত এই সরকারের পরাজয় না হয়।

তিনি বলেন, আমরা ?শুরু থেকে বলেছি, তোমরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছো, নির্বাচন করছো না। অতএব নির্বাচন না করে ক্ষমতায় থাকতে গেলে আরও বল প্রয়োগেই তোমাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। একদম চূড়ান্ত নিষ্ঠুরতা-হত্যাকারীর জায়গায় পৌঁছাবার আগেই ক্ষমতা থেকে চলে যাও। আমাদের আজকে একই আবেদন, এখনো হয়তো সময় আছে, আমি বলছি- এখনো হয়তো সময় আছে পদত্যাগ করো। তারপরে দেশ কীভাবে চলবে- সেটা এদেশের জনগণ বুঝবে। তোমরা জনগণের দুশমনে পরিণত হয়েছো, তোমরা জনগণের জন্য কিছু করতে পারবে না। বোধ-বুদ্ধি যদি এখনো থাকে তাহলে জনগণের কথা শুনে, দেয়ালের কথা শুনে পদত্যাগ করেন। যত তাড়াতাড়ি পদত্যাগ করবেন ততই ভালো।

মান্না বলেন, এই আন্দোলন কেবলমাত্র কোটার আন্দোলন নয়, এটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। এই আন্দোলন এখন সরাসরি এসব হত্যার বিচার চায়, ওই সমস্ত মন্ত্রী যারা গুলির নির্দেশ দিয়েছেন, উস্কে দিয়েছেন ছাত্রলীগকে, তাদের পদত্যাগ চায় দল থেকে এবং সরকার থেকে। খোদ প্রধানমন্ত্রী সমস্ত হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে যাতে জনগণের কাছে ক্ষমা চান- সেজন্য তারা (শিক্ষার্থীরা) দাবি করেছে। এগুলো মানতে হবে। খারাপ লাগে শুনতে। এতবড় নেত্রী, বাপরে বাপ। বাঘে গরুতে একসঙ্গে পানি খায়, তিনি এ রকম করবেন। কিন্তু ইতিহাস এমন তার চাইতে বড় বড় মানুষের এই কাজগুলো করতে হয়েছে। আমি বলবো, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেন। যেভাবে রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতন করছেন, এই নির্যাতন বন্ধ করেন। অবিলম্বে তাদেরকে মুক্তি দেন। এটা যদি না করেন তাহলে শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটাও আপনারা দেখবেন।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গত কয়েকদিনের ছাত্র-তরুণদের আন্দোলনের ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারকে তারা একভাবে বিদায় দিয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার আমরা বলেছি, এক সরকারের ভাগ্য এখন একটা চিকন সুতার উপরে ঝুলছে।

সরকার টিকে আছে কেবলমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরে, তারা যদি কেবলমাত্র রাষ্ট্র বা প্রজাতন্ত্রের বাহিনী হিসেবে তারা যদি পেশাদারি নিরপেক্ষতা বজায় রাখেন এই সরকারের একদিন বা এক মুহূর্তের জন্য আর ক্ষমতায় থাকার কোনো সুযোগ বাস্তবে কোনো অবকাশ নেই।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আজকে বাংলাদেশে এ রকম একটি হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরে এই লাশের কারবালায় দাঁড়িয়ে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই, এই কথা এখন বাংলার ঘরে ঘরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। দেখেছেন তাদের (সরকার) রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে সারা দেশের মানুষ লাল কাপড়ে, লাল ফিতায়, ফেসবুক লাল প্রতীকে ভরে দিয়েছে। এই যে গণঅনাস্থা, এটা জনগণের এই সরকারের প্রতি চূড়ান্ত অনাস্থা জানিয়েছে। এই অবস্থা আর চলতে পারে না। আমরা সরকারকে বলি, এটা একটা রাজনৈতিক সংকট। রাজনৈতিক সংকটের রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে। সমাধান হচ্ছে পদত্যাগ করুন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। রাজনৈতিকভাবে আলাপ-আলোচনা করে সেটা ঠিক করতে পারবো এবং দেশে গণতান্ত্রিক সরকার একমাত্র ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এদেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবেই।
সংবাদ সম্মেলনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম ও জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বক্তব্য রাখেন।

No comments

Powered by Blogger.