হেরে গেলেন আব্দুর রহমান by মো. আল-আমিন সরকার

গত ২০শে জুলাই কারফিউর প্রথম দিনে পান খেতে দোকানে যান মাধবদীর কাজী হাফেজ আ. রহমান (৪৪)। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিজিবি’র ছোড়া গুলিতে পেটের এপাশ ওপাশ ভেদ হয়ে যায় তার। এতে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গেলে তিনি ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেখান থেকে তাকে প্রথমে স্থানীয় ও পরে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে টানা এগারো দিন আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ার পর অবশেষে ৩১শে জুলাই বুধবার সকাল ৭টায় তিনি মৃত্যুর কাছে হার মানেন।

নিহত আ. রহমানের বাড়ি মাধবদী থানার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের চৌয়া গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত মাওলানা কাজী আমিন উদ্দিন। তিনি স্থানীয় বিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে কাজীর সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি স্থানীয় পাঁচদোনা বাজারে একটি ছোট মুদি দোকান পরিচালনা করতেন।
বুধবার সন্ধ্যায় সরজমিন তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। পাশাপাশি সবার মাঝেই দেখা যায় অজানা আতঙ্ক। ঘটনা খুলে বলতেও যেন তারা ভয় পাচ্ছিলেন। অবশেষে দৈনিক মানবজমিন প্রতিনিধি পরিচয় দেয়ার পর তারা ঘটনার বিবরণ দেন। নিহতের পরিবার জানায়, কারফিউ এর প্রথম দিনে ইন্টারনেট ও সংবাদ মাধ্যম সহজলভ্য না থাকায় অনেকটা না জেনেই বেলা ৩টার দিকে বাড়ি থেকে দুপুরের খাওয়া সেরে আ. রহমান দোকানে যান। এরপর বেলা সোয়া ৩টার দিকে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে ছেলেসহ আত্মীয়রা গিয়ে তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

আ. গাফফার নামে ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেলা সোয়া ৩টার দিকে পান খাওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী এক দোকানে যান কাজী আ. রহমান। এ সময় বিজিবির একটি টহলরত দল পাঁচদোনা মোড় এলাকায় গাড়ি থেকে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকলে একটি গুলি এসে আ. রহমানের পেটের একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে তার নাড়িভুড়ি বের হয়ে গেলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। খবর পেয়ে বাড়ির লোকজনসহ স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করে ভ্যান গাড়িতে করে হাসপাতালে নিতে চাইলে আবারো বিজিবি গুলি ছোড়ে এবং এতেও কয়েকজন আহত হয় বলে আ. গাফফার জানান।

কাজী আ. রহমানের নবম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে তৈয়বুর রহমান (১৪) জানান, টানা এগারোদিন ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে অসহনীয় যন্ত্রণা ভুগে ৩১শে জুলাই বুধবার তিনি মারা যান। একই দিন তার নিজ বাড়ি সংলগ্ন চৌয়া পূর্বপাড়া দাখিল মাদ্রাসায় জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তৈয়বুর আরও জানায়, মা ও তিন বোন, এক ভাইয়ের সংসারে সে সবার ছোট। তার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। বাকি দু’জনের মধ্যে একজন আলিম ও আরেকজন দাখিল পরীক্ষার্থী। বাবার ক্ষুদ্র আয়েই তাদের সংসার চলতো। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তৈয়বুর বলে তার বাবা তো কোনো রাজনীতি করতো না, তবে কেন তাকে এভাবে প্রাণ দিতে হলো? কি ছিল তার অপরাধ? তাদের পরিবারকে এখন কে দেখবে, কে দেবে ভরণপোষণ? কারও পরিবারে যেন এমনটা না হয় এমনটাই তার প্রত্যাশা।
এদিকে, বিজিবি’র গুলিতে নিহতের ঘটনায় সরকারের কাছে ন্যায্য বিচারসহ পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্বজনরা।

No comments

Powered by Blogger.