শাবি ফটকে তিন ঘণ্টা উত্তেজনা

‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচিকে ঘিরে গতকাল বিকালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক এলাকায় তিন ঘণ্টার উত্তেজনা ছিল। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এদিকে; পুলিশ ভোররাতে আটক করা তিন শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দিয়েছে। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের বাইরে বিক্ষোভের সময় বহিরাগত দু’জনকে আটক করেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের গতকাল ছিল ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি। কর্মসূচি পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে বিকাল ৩টায় জড়ো হওয়ার জন্য বুধবার রাতেই ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। তবে তার আগেই কয়েকশ’ পুলিশ গিয়ে অবস্থান নেয় ফটক সহ আশপাশে। এই অবস্থায়ও বিকাল ৩টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নগরের টুকেরবাজার এলাকা থেকে পৃথক দুটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে আসে।


একই সময় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ফটকের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে অবস্থান নেয়। তাদের অবস্থানের কারণে ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ চালায়। এ সময় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নগরের সুরমা আবাসিক এলাকায় অবস্থান নেয়। এবং টুকেরবাজার থেকে আসা অংশটি তেমুখী এলাকা দিয়ে চলে যায়। বিকাল পৌনে চারটার দিকে তেমুখী পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ সেখানে বাধা দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ওই এলাকা থেকে পুলিশ বহিরাগত দুই শিক্ষার্থীকে আটক করেছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ- পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন; শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সড়ক থেকে সরে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করুক। কিন্তু টুকেরবাজার থেকে আসা অংশের কর্মীরা পুলিশের উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল ছুড়ে। তবে; পুলিশ কাউকেই সড়কে অবস্থান করতে দেয়নি। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে; তেমুখী এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অবস্থান ছিল। তারা সড়কে অবস্থান না নিলেও সড়কের পাশে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি পালন করেছেন। পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ চালিয়ে বাধা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের সময় তেমুখী, বিশ্ববিদ্যালয় ফটক এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। এ সময় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক দিয়ে প্রায় আধাঘণ্টা যানবাহন চলেনি। এদিকে পুলিশের বাধার মুখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের  বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা সুরমা আবাসিক এলাকার প্রবেশ মুখে এসে অবস্থান নেয়। এ সময় সেখানেও শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- বিকাল চারটার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ সুরমা আবাসিক এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় পুলিশেরও একটি বড় দল সেখানে অবস্থান করছিল। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলে শিক্ষার্থীরা সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় সেখানে তারা সমাবেশও করে। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ফয়সল হোসেন সহ সিনিয়র ছাত্ররা বক্তব্য রাখেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- তাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে। পুলিশ তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে অগণতান্ত্রিক মনোভাব দেখাচ্ছে। সমাবেশের পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি সমাপ্ত করে চলে যায়। এদিকে ভোররাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক দুই শিক্ষার্থী এবং এমসি কলেজের এক শিক্ষার্থীকে নগরের নেহারী পাড়া আবাসিক এলাকার একটি মেস থেকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে দুপুরে থানায় গিয়ে শিক্ষকদের একটি অংশ তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। গতকাল বিকালে যখন বিশ্ববিদ্যালয় ফটক ও আশপাশের এলাকায় ওই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় শিক্ষকদের অবস্থানও ছিল সেখানে। তবে; তারা কোনো কর্মসূচি পালন করেননি। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের অরক্ষিত রেখে তারা ঘরে চলে যেতে পারেন না। যতক্ষণ শিক্ষার্থীরা সড়কে থাকবে ততোক্ষণ তারাও অবস্থান করবেন। সন্ধ্যায় যখন শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি শেষ করে তখন শিক্ষকরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক এলাকা থেকে চলে যান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকরা বুধবার শাবি এলাকায় কর্মসূচি পালন করেছিলেন। 

No comments

Powered by Blogger.