আমার নাতিপুতি ক্যামনে চইলবো কে খাওন খোরাক দিবো by শাহাবুদ্দিন সিকদার

রাজধানী ঢাকায় কোটা আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন হোসেন (২৫)। নিহত হোসেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানাধীন নীলকমল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড চর নুরুল আমিন গ্রামের মৃত: জাফরের ছেলে। পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতেন মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যানে। তিনি মালবাহী ট্রাক চালাতেন। গত ১৯শে জুলাই  বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৩০ মিনিটে হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তার লাশ উদ্ধার করে ২০শে জুলাই শুক্রবার  গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। নিহত হোসেনের মৃত্যুতে এলাকায় এখন শোকের মাতম।

নিহত হোসেনের মা রিনা বেগম মোবাইলে জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে ৩ ছেলে ১ মেয়েকে রেখে আমার স্বামী মো. জাফর মৃত্যুবরণ করেন। বড় ছেলে হাসান (২৭) একজন অটো রিকশাচালক। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার ভিন্ন। দ্বিতীয় ছেলে নিহত হোসেন (২৫)।

সে ছিল ট্রাক ড্রাইভার। দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভিন্ন সংসার চালাতো। তৃতীয় ছেলে রাকিব (২০)। সে হলো প্রতিবন্ধী। চতুর্থ হলো সাথী বেগম (১২)। বাবার মৃত্যুর পর এদেরকে নিয়ে আমি অনেক কষ্টে ইট ভাঙার কাজ করে সংসার চালাতাম। ছেলেগুলো বড় হলো। হাসান এবং হোসেনকে বিয়ে করালাম। তাদের সংসার হয়েছে। তারা আলাদা সংসার চালায়। প্রতিবন্ধী রাকিব ও ছোট মেয়েটা নিয়া আমি ভিন্ন বাসায় থাকি। আমি বর্তমানে পুরাতন বিল্ডিং ভাঙার কাজ করি। দৈনিক ২/৩শ’ টাকা করে পাই। এ নিয়ে কোনোরকমে সংসার চলছে। আমার ছেলে নিহত হোসেন ট্রাক চালাতো। ঘটনার রাত ১৯শে জুলাই বৃহস্পতিবার ট্রাকটি গাবতলী রেখে রাত ২টা ৩০ মিনিটে মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যানে পৌঁছলে কোথা থেকে যেন গুলিতে নিহত হয় ছেলে মো. হোসেন। সংবাদ পেয়ে রাত ৩টায় গিয়ে দেখি আমার ছেলের নিথর দেহ পড়ে আছে মাটিতে। স্থানীয়রা জানায়, আরও ১ জনের লাশও এখানে পড়েছিল। সেটি কারা যেন নিয়ে গেছে। আহত হয়েছে অন্য একজন ছেলে। সেটি নেয়া হয়েছে কোনো এক হাসপাতালে। তাদের পরিচয় আমি জানি না। আমার ছেলের লাশ উদ্ধার করে ২০শে জুলাই শুক্রবার বেলা ১১টায় ঘটনাস্থল মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যান জামে মসজিদ সংলগ্ন জানাজা শেষে এম্বুলেন্সযোগে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসি। ঐদিন রাত এশার নামাজের পর দ্বিতীয়বার জানাজার শেষে তার নানাবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।  মা রিনা বেগম আরও জানান, ছোটবেলায় তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন। অনেক কষ্টে ছেলে- মেয়েদেরকে বড় করেছি। এখন হোসেনও মারা গেছে। নিহত হোসেনের দুই মেয়ে লিমা (৫) ও সীমা (২ বছর ৬ মাস)। আছে স্ত্রী হাসনুর (২১)। হোসেনের মৃত্যুর পর বর্তমানে আমরা ঢাকায় আছি। মা রিনা বেগম বিলাপ দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমগো জাগা-জমি বইলতে কিছু নাই। আমার নাতিপুতি ক্যামনে চইলবো। কে খাওন খোরাক দিব। হে আল্লাহ্‌ তোমার কাছে বিচার। প্রধানমন্ত্রী যেন আমাগরে একটু সহযোগিতা করে। এটাই আমার দাবি।’

No comments

Powered by Blogger.