প্রধানমন্ত্রীকে অযথাই জড়িয়েছেন এইচ টি ইমাম- অপসারণ চাইলেন মন্ত্রীরা by দীন ইসলাম ও উৎপল রায়

অনুষ্ঠান ছিল জেল হত্যা দিবসের। আয়োজক ছাত্রলীগ। এতে আলোচনার কথা ওই দিবস নিয়ে। কিন্তু ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা নিয়ে বক্তব্য দিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। তার এই বেফাঁস বক্তব্যে বিব্রত দল ও সরকার। আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে ঘরে বাইরে। গত বুধবার বক্তব্য দেয়ার পর অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিলেন এইচ টি ইমাম। রোববার প্রথম মুখ খোলেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, তার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি সোমবার সংবাদ সম্মেলন করছেন। তার এ বক্তব্য দেয়ার পরের দিন তিনি নিজেই জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ হয়নি। আর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এইচ টি ইমামের বক্তব্য নজরে আনলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, তার সঙ্গে উপদেষ্টার কোন আলাপ হয়নি। একবার এইচ টি ইমাম ফোন দিলেও কোন কারণে তিনি কথা বলতে পারেননি। দলের ভেতরে বাইরে প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা না বলেও তিনি কেন প্রধানমন্ত্রীকে জড়ালেন? যদিও এ বিষয়ে এইচ টি ইমামের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন থাকলেও তিনি সরাসরি কোন উত্তর দেননি। এদিকে এইচ টি ইমামের বক্তব্যে গত শুক্রবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা করেন দলের সিনিয়র নেতারা। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে এইচ টি ইমামের অপসারণ দাবি করেন। এদিকে দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা দাবি করেন- তার বক্তব্য খ-িতভাবে প্রকাশ হওয়ায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি তার বক্তব্যের লিখিত একটি ব্যাখ্যাও দেন। যদিও ওই দিনের বক্তব্যের সঙ্গে গতকালের দেয়া ব্যাখ্যার খুব একটা মিল পাওয়া যায়নি।
এইচটি ইমামের অপসারণ চান মন্ত্রীরা
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের অপসারণ চেয়েছেন মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা। ছাত্রলীগ, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ও বিসিএস উত্তীর্ণসহ নানা বিষয়ে তার সামপ্রতিক মন্তব্য নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পর নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন এইচটি ইমাম। কোন কারণ ছাড়াই অহেতুক বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত অনির্ধারিত আলোচনায় বিষয়টি উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে এইচটি ইমামের প্রসঙ্গ ও অন্যান্য বিষয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। এ সময় মাঝেমধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। মন্ত্রিসভায় এইচটি ইমাম প্রসঙ্গ ছাড়াও ঘুষ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, জিএসপি সুবিধা এবং সরকারের এক বছর পূর্তি উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার সময় মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা ছিলেন বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামসহ কয়েকজন মন্ত্রী। নির্ধারিত এজেন্ডার পর বিবিসিতে এইচটি ইমামের দেয়া সাক্ষাৎকার উল্লেখ করে এক মন্ত্রী বলেন, এইচটি ইমাম সাহেব ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করার পর বিবিসিতে এ নিয়ে ইন্টারভিউ দিয়েছেন। ওই ইন্টারভিউতে তিনি দাবি করেছেন, নেত্রীর সঙ্গে নাকি তার কথা হয়েছে। আপনি তার উপর পুরোপুরি আস্থাশীল। একই সঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করে আপনি তাকে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলেছেন। ওই সময় মন্ত্রীর কথা থামিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইচটি ইমাম সাহেবের সঙ্গে আমার কোন কথা হয়নি। উনি হয়তো টেলিফোন করেছিলেন। যে কোন কারণেই হোক কথা বলা হয়নি। তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ব্রিফিং করার কথা বলেছি কখন? তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন সারা দেশের মানুষ। তারা বিরোধীদের সঙ্গে যোগ না দিয়ে আমাদের সঙ্গে থেকেছেন। এর বাইরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার, স্কুলশিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে কাজ করেছেন। মোদ্দা কথা সকল প্রশাসন আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছে বলেই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ঠিকভাবে করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রীর কথা শেষে এক সিনিয়র মন্ত্রী বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্রেডিট নিতে চাইছেন এইচটি ইমাম। আসলে এটা ঠিক নয়। নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা চিন্তা করলে সবাই এক বাক্যে বলবেন ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তাই এখনই এইচটি ইমামের অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গ আসবে কেন? একই সঙ্গে বিসিএসে উত্তীর্ণ-অনুত্তীর্ণের বিষয়গুলো আসবে কেন? এর পেছনে কি সূদুরপ্রসারী উদ্দেশ্য রয়েছে। এ বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখতে হবে। এইচটি ইমামের বক্তব্যের জন্য তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এইচটি ইমাম ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে গেলেও আপনারা যান না কেন? তিনি বলেন, কাকে কোন জায়গায় রাখতে হবে এটা আমি জানি। সেভাবেই কাজ করছি। দেশও ভাল চলছে। কিন্তু, হঠাৎ হঠাৎ বিতর্কিত কথা বলে সরকারকে বিপাকে ফেলছেন কেউ কেউ। সমালোচকরা বসে থাকে সমালোচনা করার জন্য। তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার কি দরকার আছে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারের ভাল কাজ করতে থাকা অবস্থায় ওই কাজগুলো নিয়েই গল্প বা আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু মাঝে মধ্যে নানা মন্তব্য কাজের গতিকে থামিয়ে দিচ্ছে। আশা করছি সরকার বিব্রত হয় এ ধরনের কথা বলা থেকে আপনারা বিরত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি পেয়েছেনটা কি? নিজের ছেলেকে এমপি বানিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। এরপর আর কি চান? ওই উপজেলার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন এমন একজন বলেছেন, তাকে নিজ এলাকায় যেতে দেয়া হয়নি। তাই তিনি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য ফাইট দিতে পারেননি। উল্লেখ্য, এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসন থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন। তানভীর ইমাম গত ১৫ই নভেম্বর উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে গত ১২ই নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক সভায় সরকারি চাকরিতে ছাত্রলীগকে বিশেষ সুযোগ দেয়া ও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন এইচটি ইমাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিডিয়াতে বিতর্কের ঝড় ওঠে। ওই সভায় এইচটি ইমাম ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ পুলিশ ও প্রশাসনের যে ভূমিকা, নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বুক পেতে দিয়েছেন। তার এক বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মধ্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রধানমন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা নাখোশ হন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তিনি গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাননি। যদিও তিনি মিডিয়ার কাছে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর ঘুষ সংক্রান্ত মন্তব্য: খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঘুষ দেয়া সংক্রান্ত প্রসঙ্গটি তোলেন। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ঘুষ নেয়া যায় ওই বিষয়টি অর্থমন্ত্রী ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছেন। বিদেশের একটি উদাহরণ টেনে নিজে ২০ ডলার খরচের বিষয়টিও বলেছেন তিনি। তাই অর্থমন্ত্রী কোন বাজে দৃষ্টিকোণ থেকে এসব কথা বলেননি। এদিকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর তোপের মুখে পড়েন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। কৃষিমন্ত্রী তথ্যমন্ত্রীর কাছে বিটিভিতে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান বন্ধের কারণ জানতে চান। একই সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তখন তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনুষ্ঠানটি এরই মধ্যে চালু করা হয়েছে। বিষয়টি ভালভাবে খতিয়ে দেখা হবে।
সরকারের এক বছর পূর্তি পালন: এক বছর পার করার জন্য মন্ত্রীদের প্রস্তুতি নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সরকারের ধারাবাহিকতায় গত এক বছরের কর্মকা- জানা থাকা দরকার। এ বিষয়টি জনগণকে অবহিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের মন্ত্রণালয়ের কর্মকা- সম্পর্কে লিখে পাঠান।
যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা প্রসঙ্গ: বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জিএসপি সুবিধা প্রসঙ্গে আজকের (গতকাল) একটি বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বছরে কত দেয়া হয় তাও তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলা হয়েছে। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের কারখানা, শ্রমিকদের মান উন্নত করার কথা বলেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর পরই শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, কয়েক দিন আগে ব্র্যাক সেন্টারে একটি সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি আমার কথা এড়িয়ে গেছেন। আমার প্রস্তাব হলো তাদের ফ্যাক্টরিগুলোর পরিদর্শনে যাওয়া। প্রয়োজনে তাদেরকে চিঠির মাধ্যমে বলা, আমরা তোমাদের ফ্যাক্টরির অবকাঠামোগত বিভিন্ন অবস্থা দেখে নিজের দেশের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি উন্নয়নে কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চুন্নুর প্রস্তাব গ্রহণ করে বলেন, এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা এবং তাদের ফ্যাক্টরি ভিজিটের জন্য অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়া যেতে পারে। এ সংক্রান্ত আর্থিক বরাদ্দের সংস্থান করা হবে।
যে ব্যাখ্যা দিলেন ইমাম
বিসিএস পরীক্ষা ও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য রেখে তোপের মুখে পড়া প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার চারদিন পর গতকাল এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এতে তিনি দাবি করেছেন, ওই দিন তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিকৃত ও খ-িতভাবে প্রচার ও প্রকাশ হয়েছে। এ কারণে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে এ ব্যাখ্যা দেন। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
বুধবার দেয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, সেদিন ছাত্র-ছাত্রীরা ধৈর্যধারণ করে আমার বক্তব্য শুনেছে। আমি তাদের বলেছি লেখাপড়া ছাড়া, মেধা ছাড়া কোন লাভ হবে না। লিখিত পরীক্ষায় ভাল করতে হবে। ওই দিন আমি যা বলেছি তা হচ্ছে, যারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তারাই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরি পাবে। সেদিন আমি তাদেরকে কঠোর অনুশীলন করে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার পরামর্শ দিই। কারণ, আমরা একটি দায়িত্বশীল প্রশাসন চাই। আর এটা করতে হলে মেধাবীরাই চাকরিতে সুযোগ পাবেন। ১২ই নভেম্বর আমি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলাম, লিখিত পরীক্ষায় ভাল করতে হবে। কারণ ১০০০ নম্বর হচ্ছে লিখিত পরীক্ষায়। সেখানেই ভাইভার নম্বরে কিছু করার থাকে না। লিখিত পরীক্ষার পর ভাইভাও ভাল করতে হবে। এজন্য যা যা করা দরকার তাই করবো। প্রয়োজনে আমি নিজেই তোমাদের কোচিং করাবো। আমি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে বলেছি ভাইভায় গিয়ে কিভাবে পরীক্ষার হলে যাবে, প্রশ্ন-উত্তর, সালাম দিতে হবে সেটা শিখাবো। কারণ বিএনপি আমলে একটি বিশেষ ভবনে বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিতো। আমাদের সে অভিপ্রায় নেই। সেই অভিপ্রায় না থাকার কারণেই সাহসিকতার সঙ্গে বলেছি, লেখাপড়া শিখে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। চাকরি আমরা মেধাবী ছাত্রদেরই দিয়েছি। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন ক’জন ছাত্রলীগের ঢুকেছে আর ক’জন রাজনীতি করেনি এরকম ঢুকেছে। সব ক্ষেত্রে মেধাবীদেরই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আমরা চাই আমাদের ছেলেরাও যারা রাজনীতিতে আসবে, দেশের ভারপ্রাপ্ত হবেন তাদেরতো প্রশিক্ষণ দরকার। তিনি বলেন, যারা রাজনীতি করে তাদেরও তো জ্ঞান, প্রশিক্ষণ দরকার। শিক্ষা, জ্ঞান অর্জন এগুলোই ছিল আমার মূল বক্তব্য। 
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- আপনি আপনার বক্তব্যে বলেছেন একটি চিহ্নিত মহল আপনার বক্তব্যকে মিথ্যা হিসেবে প্রচারের চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে, এই চিহ্নিত মহলটি কারা। আওয়ামী লীগের ভেতর কি কেউ আছে? জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই চিহ্নিত মহলটি আওয়ামী লীগের বাইরে। আমাদের (আওয়ামী লীগ) মধ্যে কোন বিভেদ নেই।
তার কাছে প্রশ্ন ছিল- আপনার বক্তব্যের বিষয়ে আপনার দলের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য আপনাকে সতর্ক হয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন- এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? এর সরাসরি কোন জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, উনি উনার কথা বলেছেন। আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবো না।
আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডের মিটিংয়ে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি নাকি বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আপনার এমন মন্তব্য করার প্রয়োজন ছিল না। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। একেক পত্রিকায় একেকভাবে এসেছে। অনেকেই অনেক কথা বলছেন। কেউ বলছেন তারা বলছেন। আমার পাশেই দপ্তর সম্পাদক গোলাপ (ড. আবদুস সোবহান গোলাপ) আছে। সে মিটিংয়ে ছিল। গোলাপ বলেছে ওই দিন পার্লামেন্টারি বোর্ডে এ বিষয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভায় এ ধরনের কোন আলোচনা হয়েছে বলেও শুনিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আপনার আলোচনা হয়েছে কি? এ প্রশ্নে এইচটি ইমাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার এ বিষয়ে সরাসরি কোন কথা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী কয়দিন ধরে অসুস্থ। তার বিশ্রাম প্রয়োজন। একটি পত্রিকায় এসেছে গতকাল (১৬ই নভেম্বর) আমি সারাদিন অপেক্ষায় ছিলাম। চেষ্টা করেও প্রধানমন্ত্রীর দেখা পাইনি। গতকাল প্রধানমন্ত্রী সারাদিন বিশ্রামে ছিলেন।  একান্ত প্রয়োজনে সন্ধ্যায় সংসদে গিয়ে ভাষণ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তার মাধ্যমে আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আমরা সবাই মনে করি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অতিরিক্ত পরিশ্রম করছেন। আপনারা জানেন তার লন্ডন ও ইতালি সফর বাতিল করা হয়েছে।  এর মধ্যে আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমি কথা বলবো আমার এ মনমানসিকতা নেই।
বিবিসিকে আপনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই আপনি আজকে সংবাদ সম্মেলন করছেন? এর জবাবে তিনি বলেন, নির্দেশে ঠিক নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত রেখেই এবং তিনি জানেন আজকে আমি এটা (সংবাদ সম্মেলন) করবো। আমাকে তিনি প্রকারান্তরে জানিয়েছেন আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য। 
আপনার বক্তব্যের পর থেকেই বিএনপি  আপনার পদত্যাগের দাবি করে আসছে এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, এজন্য পদত্যাগ করবো সে ধরনের কোন প্রশ্নই উঠছে না। আর যেটা বলছেন বিরোধী দল- সরকারিভাবে বিএনপি এখন বিরোধী দল নয়।
শনিবার আওয়ামী লীগের প্রচার উপ-পরিষদের বৈঠক ছিল। আপনি বৈঠকে উপস্থিত হননি। এ নিয়ে অনেকে কথা উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, আমি আজকের সংবাদ সম্মেলনের জন্য বক্তব্য প্রস্তুত করছিলাম। এজন্য উপস্থিত হতে পারিনি। আর হাছান মাহমুদ দেশের বাইরে যাবেন। এজন্য তাড়াহুড়া করে বৈঠক হয়েছে।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে এইচটি ইমাম দাবি করেন, ১২ই নভেম্বর ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে দেয়া তার বক্তব্যটি ছিল একাডেমিক ও শিক্ষামূলক। কিন্তু সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এই বক্তব্যকে খ-িতভাবে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে উপস্থাপন করেছে। বক্তব্যের অর্থ বিকৃতি ঘটিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। যার সুযোগ নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন প্রসঙ্গে আমি আমার বক্তব্যে বলেছি যে, নাশকতার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমশিনকে নির্বাচন করতে হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ও পরে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত ও তাদের সহযোগী বিএনপি পরিচালিত সহিংসতার সময় জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় নিয়োজিত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দায়িত্বরত সরকারি কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ যখন সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করেছিল, তাদের আইনানুগ  নির্দেশনা দানের বিষয়ে যে কথা বলেছি তারই ভিন্নরূপ ব্যাখ্যা করে জনমনে বিভান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসন নির্বাচনের কমিশনের অধীনে যাওয়ার পর আমি উপদেষ্টা বা সরকারের কেউ ছিলাম না। তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলাম। তাই ওই সময় প্রশাসনের কথা বলা, মোবাইল কোর্ট করার প্রশ্নই ওঠে না। আমি বা আমরা যা করেছি তা আইন ও নির্বাচন বিধি মেনেই করেছি। আমাদের ‘রিক্রুট’ করা মানে সকল প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারী বুঝিয়েছি। যাদের কোন দলীয় পরিচয় ছিল না। তাদের আইনানুগ নির্দেশনা দানের বিষয়ে যা বলেছি তারই ভিন্নরূপ ব্যাখ্যা করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। এইচটি ইমাম বলেন, সরকারি চাকরিতে মেধাবীরা আসবেন এটাই নিয়ম। আমি বলেছি ছাত্রলীগ কর্মীদের পড়াশুনা করতে হবে এবং লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণসহ যোগ্য হলেই তারা চাকরি পাবে। প্রতিযোগিতামূলক যে কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে যে কঠোর অধ্যবসায় প্রয়োজন তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ছাত্রলীগের ওই আলোচনা  সভায় উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদেরকে লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রয়োজনে তাদের কোচিং করানোর কথাও বলেছি। তিনি বলেন, আমি ওই দিন ছাত্র-ছাত্রীদের বলেছি প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে মেধার কোন বিকল্প নেই। তাই এ নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, মিডিয়া তার বক্তব্যকে যেভাবে উপস্থাপন করেছে তা আদৌ সত্য নয়। তিনি বলেন, আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যে কারণে জাতি বিভ্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোন সুযোগ নেই। বিএনপির প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মওকা খুঁজছে তারা এমনটি করছে। তাদের বলবো মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকুন।
সংবাদ সম্মলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সুজিত রায় নন্দী, দলের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জমান ভূইয়া ডাবলু প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.