সাক্ষ্য দিলেন ফেলানীর পিতা

ভারতের কোচবিহারে বিএসএফ সেক্টর সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টের বিচারকাজে বাংলাদেশের প্রতিনিধি কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট আব্রাহাম লিংকন সেল ফোনে জানান, গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশেষ আদালতের কার্যক্রম চলে। ফেলানীর পিতা নুরুল ইসলাম নুরু আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাদের জেরা ও জবানবন্দি গ্রহণ করেন ভারতের ডিফেন্স অফিসার মিস্টার সিন্ধু, তাকে সহযোগিতা করেন এসোসিয়েট এডভোকেট আনন্দ জ্যোতি মজুমদার। বিএসএফের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ভারতের পিপি বিপিন কুমার। ৫ সদস্যের বিচারকম-লীর সভাপতিত্ব করেন ডিইজি সিপি ত্রিবেদী। এ সময় ফেলানী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ- এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদ-ের বিধান রয়েছে। এ বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন কুড়িগ্রাম ৪৫ বিজিবি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর এটিএম হেমায়েতুল ইসলাম এবং কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন। সাক্ষ্য গ্রহণের কার্যক্রম শেষ হওয়ায় বিকাল সাড়ে ৫টায় (ভারতীয় সময়) এ প্রতিনিধি দল কোচবিহার রেস্ট হাউস থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হন। বাংলাদেশের বুড়িমারী স্থলবন্দরে এসে তারা পৌঁছবেন রাত আনুমানিক ১০টার দিকে। এর পর আসবেন কুড়িগ্রামে। বিএসএফের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোচবিহার থেকে এ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের উদ্দ্যেশে যাত্রা করে।

কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যাকান্ডে একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী বাংলাদেশী সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে গতকাল ভারতে বিএসএফের বিশেষ আদালত। এজন্য সোমবার সকাল ৯টার দিকে সাক্ষীসহ ৩ সদস্যের এ প্রতিনিধি দলকে বিশেষ আদালতে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে। বিশেষ গোপনীয়তায় এ বিচার কার্যক্রম ভারতের অভ্যন্তরে শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। রোববার বিকাল সাড়ে ৩টায় তারা ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর থেকে তাদের সেল ফোনগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তবে ভারতের নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কোচবিহার রেস্ট হাউসে ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল রাত যাপন করে। সকাল ৯টায় কঠোর নিরাপত্তায় তাদের বিএসএফের ১৮১ সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষ সাক্ষী ফেলানীর পিতা নুরুল ইসলাম নুরুকে ভারতীয় সময় সকাল ১১টায় জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস বিশেষ আদালতে নেয়া হয়। কুড়িগ্রাম ৪৫ বিজিবি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর এ টি এম হেমায়েতুল ইসলাম এবং পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট আব্রাহাম লিংকন সাক্ষীদের সঙ্গে ছিলেন।
যা ঘটেছিল: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী হত্যা মামলার পুনর্বিচারের জন্য কোচবিহারের বিএসএফ সেক্টর সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার পুনর্বিচার কার্যক্রম শুরু হয় গত ২২শে সেপ্টেম্বর। একমাত্র প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছাড়াই আদালত চলে ৫ দিন। আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে ২৬শে সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের ৪৫ বিজিবির সদর দপ্তর থেকে ভারতের পথে রওয়ানা হন ফেলানীর পিতা নুরুল ইসলাম নুরু, বিজিবির ৪৫ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মোফাজ্জাল হোসেন আকন্দ ও কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন। কিন্তু ওই আদালত মুলতবি হয়ে যাওয়ায় সে যাত্রায় তারা ফিরে আসেন। ২০১১ সালের ৭ই জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে ফেরার সময় ভারতের চৌধুরীহাট বিএসএফ ক্যাম্পের অমিয় ঘোষ ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনার দু’বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ই আগস্ট কোচবিহার জেলার সোনারী এলাকায় ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। সেবার আদালতে সাক্ষ্য দেন নুরুল ইসলাম নুরু ও ফেলানীর মামা আবদুল হানিফ। ওই বিচারে বিএসএফ সদস্যকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেয়া হয়। এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ফেলানী হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে আবেদন করেন নুরুল ইসলাম নুরু। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএফ কর্তৃপক্ষ। এ সূত্র ধরে গত রোববার ভারতে যান নুরুল ইসলাম নুরু। গতকাল সাক্ষ্য দেন ভারতের ওই বিশেষ আদালতে।

No comments

Powered by Blogger.