নিয়মবহির্ভূত সুবিধায় কর ফাঁকি ৩৫ কোটি টাকা

রাজস্ব অডিট অধিদফতর আয়কর আদায়ে বড় ধরনের অস্বচ্ছতার অভিযোগ করেছে। তাদের হিসেবে নিয়মবহির্ভূত কর সুবিধাদি প্রদান করে মাত্র ১ বছরে সরকারের ৩৪ কোটি ৬১ লাখ টাকার কর ফাঁকি বা রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অডিট আপত্তি যথাযথ নয় বলে দাবি করেছে। ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের আয়কর বিভাগ সংশ্লিষ্ট সরকারি স্থায়ী কমিটির ১০ম বৈঠকে দায়-দায়িত্ব চিহ্নিত করে এসব অডিট আপত্তি নিষ্পত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
রাজস্ব অডিট অধিদফতরের দাবি অনুযায়ী ২০০৮-০৯ করবর্ষে অনুমোদনযোগ্য নয়, এমন খরচকে আয়ের সঙ্গে যোগ না করে এবং আয় কম প্রদর্শন মেনে নিয়ে কর কর্মকর্তারা সরকারের প্রায় ৩৫ কোটি টাকা কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়েছেন। এর মধ্যে বিক্রয় কম দেখিয়ে কম আয় নিরূপণ করায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান না হয়েও স্থায়ী সম্পদ দেখিয়ে অবচয় সুবিধা প্রদান করায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। নির্ধারিত হারের চেয়ে কম হারে আয়কর নির্ধারণ করায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ১৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং কর রিটার্নে কম আয়কর প্রদর্শন করায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ২ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া উল্লেখযোগ্য অন্যান্য অনিয়মের মধ্যে রয়েছে, কর অঞ্চল ৮-এর আওতাধীন রেনেটা লিমিটেড ২০০৮-০৯ করবর্ষে ৮ কোটি ৭০ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার উৎসে ভ্যাট কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। এর ওপর প্রযোজ্য আয়করও ফাঁকি দেয়া হয়েছে। আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে করদাতা কোম্পানির আয়কর মামলাটি ৯৩ ধারায় পুনঃউন্মোচন করা হয়েছে। আয়করদাতাকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২০০৮-০৯ করবর্ষে ১২ কোটি ১০ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের খরচ দেখালেও এই খরচের ওপর বিধি অনুযায়ী ভ্যাট ও আয়কর কর্তন করেনি। করদাতার এই অনিয়মে আয়কর অধ্যাদেশের ৩০এএ ধারায় ২ কোটি ২৩ লাখ টাকার কর ফাঁকি হয়েছে বলে আপত্তি উঠেছে। কর পরিশোধে নোটিশ দেয়া হয়েছে। এখন আইনি পদক্ষেপ নিয়ে পাওনা রাজস্ব আদায়ের উদ্যোগ চলছে। কোম্পানিজ সার্কেল ২০১-এর করদাতা ধানমণ্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর ফাইলে লাভ-ক্ষতি হিসেবে ডাক্তারদের কনসালটেন্সি ফি বাবদ খরচ দাবি করা হয়েছে ২ কোটি ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা। এর ওপর ৫ শতাংশ উৎসে কর প্রযোজ্য। কিন্তু আপত্তি উঠেছে, অন্যান্য খরচসহ করদাতা ২০০৮-০৯ করবর্ষে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকার উৎসে আয়কর ও ভ্যাট কর্তন করেনি। এতে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। যদিও করদাতার দাবি কনসালটেন্সি ফির ওপর প্রযোজ্য সাড়ে ১০ লাখ টাকার মধ্যে ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকার কর পরিশোধিত হয়েছে। অন্যান্য খাতে ফাঁকি দেয়া কর আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
স্টেট ইউনিভার্সিটি, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও আয়কর অধ্যাদেশের ৩০এএ ধারায় রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়েছে। ইউনাইটেড এডিবল অয়েলসের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার কর ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। এখন আয়কর আইনে টাকা পরিশোধের নোটিশ দেয়া হয়েছে।
কর অঞ্চল ৮-এর এ্যাপোলো হাসপাতালের (এসটিএস হোল্ডিং লি.) বিরুদ্ধে আয়কর অধ্যাদেশের ১৬ সিসি ধারায় ২৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা আয়কর দাবি করা হয়েছে। করদাতা ইতিমধ্যে প্রায় ২৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে।
এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যয় দাবির বিপরীতে উৎসে কর কাটা হয়নি। অনেক করদাতা প্রতিষ্ঠান রিটার্নে বিভিন্ন ধরনের ঋণ দেখালেও কোনো প্রমাণ দাখিল করে না। কর কর্মকর্তারা এ ধরনের দাবির বিষয়ে আপত্তি না জানিয়ে রিটার্ন অনুমোদন করে। গ্যাস বিল খাতে ব্যয় দেখালেও চালানের কপি জমা নেয়া হয় না। উৎসে আয়কর ও ভ্যাট কর্তন করার প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও তা গ্রহণ করা হয়। এতে মোট আয়ের সঙ্গে যোগ না করায় বড় অংকের রাজস্ব ক্ষতি হয়।

No comments

Powered by Blogger.