প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি

ব্রিসবেনে জি-২০ সম্মেলনের পাশাপাশি গতকাল বহুপক্ষীয় এক
বৈঠকে (ডান থেকে) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন,
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট
ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি
ও স্পেনের প্রেসিডেন্ট মারিয়ানো রাহয়। এএফপি
আগামী চার বছরে লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি আর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের বেশি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন জি-২০ দেশগুলোর নেতারা। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন শহরে গতকাল রোববার শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০-এর দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শেষ হয়। সম্মেলনের ইশতেহারে ওই প্রতিশ্রুতি দেন নেতারা। খবর এএফপি, রয়টার্স ও এবিসি নিউজের।ইশতেহারে বৈশ্বিক অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়ার এই প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ, বাণিজ্য উদারীকরণ, কর ও আর্থিক বিধি, লৈঙ্গিক সমতা, জ্বালানি, ইবোলা নির্মূল, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো উঠে আসে। ইশতেহারের বাইরে সম্মেলনে অন্যতম ইস্যু ছিল রাশিয়ার ইউক্রেনে কথিত হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গ। স্বাগতিক দেশ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট গতকাল সম্মেলনের সমাপনী আয়োজনে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে এখানে নেতারা যে অঙ্গীকার করলেন, সদস্যরাষ্ট্রগুলোর নেতারাই তার বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করবেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জি-২০-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয় না।
তবে এবার বলা হচ্ছে, জি-২০-এর সদস্যরাষ্ট্রগুলো ছাড়াও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন (ওইসিডি) সংস্থা উন্নয়নের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে ভূমিকা পালন করবে। ইশতেহারে বলা হয়, দুই লাখ কোটি মার্কিন ডলারের যে উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে ২০১৮ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপির প্রত্যাশিত সীমা ছাড়িয়ে ২ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো করা সম্ভব। একই সঙ্গে সম্ভব হবে লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ইশতেহারে কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের ব্যবধান ২০২৫ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার মানে, এই সময়ের মধ্যে ১০ কোটি নারীর কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইশতেহারে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ‘শক্তিশালী ও কার্যকর’ পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন জি-২০ নেতারা। পাশাপাশি জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিলের প্রতি সমর্থন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে চীনে জি-২০ সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারের জি-২০ সম্মেলনে স্পষ্টতই ইউক্রেন সংকটের ছায়া ছিল। ইউক্রেনের বিদ্রোহীদের রাশিয়া ‘মদদ’ দেওয়ায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কঠোর সমালোচনায় পড়তে হয় সম্মেলনে। ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘হস্তক্ষেপের’ নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনসহ অনেক নেতাই ইউক্রেন সংকট নিয়ে রাশিয়াকে অভিযুক্ত করে সরাসরি কথা বলেছেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামা গতকাল ব্রিসবেনে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইউক্রেনে হস্তক্ষেপ করতে থাকলে রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একঘরে হয়ে থাকতেই হবে। বলা হচ্ছে, ইউক্রেন সংকট নিয়ে ওবামা এর আগে এত কঠোর ভাষায় কথা বলেননি। ওবামা বলেছেন, তিনি রাশিয়াকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনের বিদ্রোহীদের সহায়তা দিতে থাকলে মস্কোর একঘরে হয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন ওবামা। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে ওবামা সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের দমনে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে কোনো ধরনের জোট করার কথা নাকচ করে দেন। ওবামা বলেন, বাশার সিরিয়ায় শত শত মানুষকে হত্যা করে প্রেসিডেন্ট পদে থাকার বৈধতা হারিয়েছেন। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের কাছেই বাশার আর বৈধ প্রেসিডেন্ট নন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বাশারের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা করলে আমাদের আইএসবিরোধী জোট দুর্বল হয়ে যাবে। ব্রিসবেনে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রাশিয়াকে স্পষ্ট বার্তা পাঠানো হয়েছে যে সামনের দিনগুলোতে মস্কোর প্রতি আমাদের কী মনোভাব হবে।’

No comments

Powered by Blogger.