জঙ্গিদের নামের তালিকা দিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা

বাংলাদেশ ও ভারতে অবস্থান নেয়া দুষ্কৃতকারীদের খুঁজে বের করতে একসঙ্গে কাজ করবে দু’দেশ। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে দু’দেশের জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) যেসব তথ্য দিয়েছে তা উড়িয়ে দেয়ার মতো নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পরিচিতিমূলক সভা শেষে এ সব কথা বলেন তিনি। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারাও সংক্ষিপ্ত এ পরিচিতি সভায় অংশ নেন। এদিকে বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনের নামের তালিকা বাংলাদেশকে দিয়েছে এনআইএ প্রতিনিধি দল। এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ন কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বর্ধমানের ঘটনায় এনআইএ প্রতিনিধি দল কিছু নাম দিয়েছে। সেখানে কতজনের নাম রয়েছে তা না জানালেও তিনি বলেন, অল্প কয়েক জনের নাম। এক জঙ্গির শত নাম থাকে। এ নামগুলো আমরা যাচাই বাছাই করছি। তারা কোন দেশের নাগরিক তা তদন্ত শেষে জানা যাবে। বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা জানান, এনআইএ তাদের ১০ থেকে ১৫টি  মোবাইল ফোন নম্বর এবং কয়েকজনের নাম দিয়েছে। বাংলাদেশের সংস্থাগুলো তাদের  চেনে কিনা, কিংবা তাদের সম্পর্কে জানে কিনা, সেটাই তারা জানতে চেয়েছেন। এনআইএর মহাপরিচালক শারদ কুমারের নেতৃত্বে চার সদস্যের এ প্রতিনিধি দল ঢাকা পৌঁছানোর পর দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। সংস্থার উপ-মহাপরিদর্শক সজীব ফরিদও এ প্রতিনিধি দলে রয়েছেন। বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশের কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দেয়া হয়নি। ভারতের সন্দেহ, ভারত ও বাংলাদেশে দু’দেশেই দুষ্কৃতকারী রয়েছে। এদের খুঁজে বের করা দরকার। তাদের এ আবেদন উড়িয়ে দেয়ার মতো নয় বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে মাত্র একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের সঙ্গে এখনও তেমন কোন তথ্য আদান-প্রদান হয়নি। তবে তারা আমাদের সমস্যা দেখবে, আমরাও তাদের সমস্যা দেখবো। আমরা একে অপরের সহযোগিতায় কাজ করবো। আমরা চাই না দু’দেশে কোন দুষ্কৃতকারী থাকুক। তারা দেশ ও জনগণের শক্র। দুই নেত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আপনাদের কাছ থেকে জানলাম। এর আগেও সংবাদ মাধ্যম থেকে শুনেছি। এ বিষয়েও তাদের (এনআইএ) নিকট থেকে কিছু জানা যায়নি। এনআইএ প্রতিনিধি দলটি আজ ও কাল বাংলাদেশ সফর করবে। গঠিত কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তারা মাঠ পর্যায়ে সফর করতে পারে। এর আগে গত ২রা অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দু’জন নিহত হওয়ার পর তদন্তে নেমে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা জানায় এনআইএ। সেই সঙ্গে আন্তঃদেশীয় একটি জঙ্গি নেটওয়ার্কের তথ্য পাওয়ার কথাও জানায় সংস্থাটি। তারা দাবি করে, বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে হত্যারও ছক কষছে জঙ্গিরা। এর পরপরই বাংলাদেশে তদন্ত চালানোর বিষয়টি মাথায় আনে এনআইএ। বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার পর তাদের আসার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এদিকে বর্ধমান বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে এনআইএ সদস্যরা। এর মধ্যে শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদসহ কয়েকজন বাংলাদেশীও রয়েছে বলে তাদের দাবি। ৮ই নভেম্বর সাজিদকে কলকাতায় গ্রেপ্তারের পর বলা হয়, ৪০ বছর বয়সী এ ব্যক্তি জেএমবির কমান্ডার। তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের ফরাজীকান্দায়। স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, দু’দেশই মনে করে, আমাদের ভূখ- দুষ্কৃতদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। আমাদের সঙ্গে স্বল্প সময়ের বৈঠক হয়েছে। তাদের চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য আমাদের ৬ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। তারাই বিস্তারিত আলোচনা করবেন। সচিব জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এ কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ কমিটি এনআইএ-কে সহযোগিতা করবে। বাংলাদেশে কোন দুষ্কৃতকারী থাকলে এনআইএকে এ কমিটির মাধ্যমে আইনানুগ সহযোগিতা দেয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পরিচিতি বৈঠকের পর র‌্যাব ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন এনআইএর প্রতিনিধিরা। সিনিয়র সচিব ও অতিরিক্ত সচিব ছাড়াও পুলিশ মহাপরিদর্শক হাছান মাহমুদ খন্দকার, র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, জাতীয় নিরাপত্তা  গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই)  মহাপরিচালক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) প্রধান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোখলেসুর রহমান, র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান আবুল কালাম আজাদ, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম পরিচিতি সভায় অংশ নেন।

No comments

Powered by Blogger.