পুলিশকে ৫ বছরের ধর্ষিতার ‘বিস্ফোরক’ চিঠি

মেয়েটির বয়স মাত্র আট। তিন বছর আগে সে এমন এক ঘটনার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, যাতে তার বয়স এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। পাঁচ বছর বয়সে ধর্ষিতা হওয়ার পর কেটে গিয়েছে সাড়ে তিন বছর। এখনও ‘বিচারের বাণী নীরবে’ কাঁদে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে না পেয়েছে বিচার না ফিরে পেয়েছে তার সাধারণ জীবন। ঘটনাটি ঘটেছে বৃটেনের এসেক্সে। ২০১১ সালে আগস্টের এক দুপুরে সারা ও পিটারের (ছদ্দনাম) একমাত্র মেয়েকে ধর্ষণ করে তাদেরই পরিবারিক বন্ধুর ১২ বছরের ছেলে। সে দিন ভয়ে-সজ্জায় কাউকে কিছু বলেনি  সে। কিন্তু পরের দিন মাকে সব খুলে জানায়। সেই মতো পুলিশে অভিযোগও করেন সারা ও পিটার। তবে অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার বদলে অভিযোগকারীদেরই ‘সায়েস্তা’ করে উঠেপড়ে লাগে পুলিশ। তথ্য-প্রমাণ হিসাবে ডিএনএ-র নমুনা সংগ্রহ করা তো দূরের কথা, অভিযুক্তকে আড়াল করতে তার বিরুদ্ধে ঠিক ধারায় অভিযোগ পর্যন্ত দাখিল করেননি তারা। উপরন্তু অভিযুক্তের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ২ থেকে ৩ বার গ্রেপ্তার করা হয় পিটারকে। গত ৩ বছর ধরে মামলার নামে চলে প্রহসন। হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করেও  মেয়েকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারেননি পিটার। তার উপর পুলিশি ‘অত্যাচারে’ জেরবার হতে হয়েছে তাকে। তাদের মেয়ের এখন কী অবস্থা? গত  দেড় বছর ধরে মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সে। ঘটনার পর থেকে সে মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, যে অতটুকু বয়সে দিনের পর দিন ঘরের দরজা বন্ধ করে ভিতরে বসে থাকত। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তদন্তকারী দুই অফিসারকে সে একটি একটি চিঠি লেখে। যেটা পড়লে বিশ্বের যে কোনও পুলিশ হয়তো লজ্জায় মাথা নিচু করবে।

সে লিখেছে:
‘ডিয়ার স্যর,
যখন পাঁচ বছরের ছিলাম, তখন আমার সঙ্গে খুব বাজে একটি ঘটনা ঘটে। আপনাদের দায়িত্ব ছিল যাতে দোষী শাস্তি পায়। কিন্তু আপনারা আপনাদের কাজ ঠিক করে করেননি। আমায় খুব হতাশ করেছেন। খুব রাগও হচ্ছে আমার, আমি তখন ছোট্ট একটি মেয়ে ছিলাম। এখন আমার বয়স আট। এখনও পর্যন্ত  সে কোনও শাস্তি পায়নি। সে আমার থেকে বয়সে বড় ছিল বলেই কি আপনারা বুঝে-শুনে করেছেন? আমি আপনাদের বিশ্বাস করেছিলাম। ভেবেছিলাম এই মানসিক যন্ত্রণা থেকে আপনারা আমায় মুক্তি দেবেন। কিন্তু তা করেননি। ভাবতাম, পুলিশের কাজ বাজে লোকদের ধরে তাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা। আপনারা তা করেননি। আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন আমি আপনাদের উপর খুবই হতাশ। আমার মনে হয় আপনাদের আমায় দুঃখ প্রকাশ করে একটা চিঠি লেখা উচিৎ। আমি যখন বন্ধুদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি আমিও তাদের চিঠি লিখে দুঃখ প্রকাশ করি। আশা করি ভবিষ্যতে আপনারা এমন কাজ করবেন না। আশা করি, দোষী খুব শীঘ্রই উপযুক্ত শাস্তি পাবে।

No comments

Powered by Blogger.