শিক্ষক খুন কোনোভাবেই কাম্য নয় : রাষ্ট্রপতি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলামের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টন্তমূলক শাস্তি আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, একজন জ্ঞানতাপস শিক্ষক এভাবে খুন হবেন তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মঙ্গলবার দুপুর তিনটায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) চতুর্থ সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, এই হত্যাকান্ডে গোটা জাতির সাথে আমিও গভীরভাবে ব্যথিত ও দুঃখিত। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন জ্ঞানতাপস শিক্ষক এভাবে খুন হবে তা কারোরই কাম্য নয়। আমি এ ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টন্তমূলক সাজা দেওয়ার আহ্বান জানাই।’
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট প্রকৌশলী ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। সমাবতর্নে স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহা. রফিকুল আলম বেগ।
সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হল জ্ঞান সঞ্চালন ও নতুন জ্ঞানের উদ্ধাবন এবং সেইসঙ্গে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার পাশাপাশি সৃজনশীল কর্মকা-, মুক্ত বুদ্ধিচর্চা ও চিন্তার স্বাধীনতা বিকাশে অবদান রাখতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বের গুনাবলী অর্জনসহ বিজ্ঞানমনস্ক, অসাম্প্রদায়িক ও দুরদৃষ্টি সম্পন্ন নাগরিক হয়ে উঠতে পারবে।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বর্তমান বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তির। এ বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ প্রকৌশলী সৃষ্টির কোনো বিকল্প নাই। আমাদের রয়েছে বিপুল মানবসম্পদ। এদের তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে পারলেই তারা জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘সরকার দেশের বিভিন্ন জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে যুগোপযোগী তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে আইসিটি ইন অ্যাডুকেশন মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। ফলে মাধ্যমিক স্তর থেকে শিক্ষার্থীরা তথ্য-পযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হচ্ছে।
সমাবর্তনের গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, তোমরা আজ গ্রাজুয়েট, দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। আজকের এই সমাবর্তন একদিকে যেমন তোমাদের অর্জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তেমনি দায়িত্বও অর্পণ করছে। সে দায়িত্ব নিজের পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি, সর্বোপরি দেশ ও জাতির প্রতি। তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও মনন দিয়ে দেশ মাতৃকার কল্যাণ করতে পারলে সে ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে।
এর আগে দুপুর আড়াইটাই রাষ্ট্রপতি ও রুয়েটের আচার্য সমাবর্তন শোভাযাত্রা নিয়ে অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেন। রুয়েটের রেজিস্টার ড. মোশাররাফ হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অনুষদের ডিনবৃন্দ গ্রাজুয়েটদের উপস্থাপন করেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য গ্রাজুয়েটদের ডিগ্রি প্রদান করেন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অন্যারে‌্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী ২ আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী ৩ আসনের সাংসদ আয়েনউদ্দিন, রাজশাহী ৫ আসনের সাংসদ আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক, বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান প্রমুখ।
মানববন্ধন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এ কে এম শফিউল ইসলামকে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও হত্যা কারীদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও র‌্যালী করেছে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্যারিস রোডে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এদিকে শিক্ষক সমিতির অহ্বানে তৃতীয় দিনের মত কাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত ছিল।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ওয়ারদাতুল আকমাম এর সভাপতিত্বে ও প্রফেসর জুলফিকার আলী ইসলামের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান। তিনি বলেন, প্রফেসর শফিউলকে নির্মমভাবে  হত্যা করা হয়েছে। এর আগেও আরো দুইজন শিক্ষকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আর এই ক্যাম্পাসে হত্যা দেখতে চাইনা। আমরা ক্যাম্পাসের ঘটিত সকল হত্যার সুষ্ঠ বিচার চাই। এসময় তিনি প্রফেসর শফিউলের বিদেহী আত্মার মাগফিরা কামনা ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
মানববন্ধনে একত্তত্বা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর কামরুল হাসান মজুমদার। এছাড়া মানববন্ধনে বন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন শেষে তারা একটি র‌্যালী নিয়ে ক্যম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে বিভাগের সামনে গিয়ে শেষ করে। এসময় বিভাগের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্তিত ছিলেন।
পরে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে বেলা ১২ টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

No comments

Powered by Blogger.