নামেই আধুনিক হাসপাতাল by মাহাবুবুল ইসলাম পিকুল

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকটি বিভাগে ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। এমন অভিযোগ করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে বঞ্চিত হয়ে ফিরে যাওয়া রোগীদের আত্মীয়স্বজনরা। ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে ২৫০ শয্যা রেখে যাত্রা শুরু হয় হাসপাতালটির। পরে বর্তমান সরকার ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩১৫ কোটি টাকায় ফমেক ও ফমেক হাসপাতালটি আধুনিক করে পাঁচ শ বেডে উন্নীত করা হয়। ছয়তলা হাসপাতালে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীকে পদ্মার ওপারে যেন যেতে না হয় সেই লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। চালু করা হয় মেডিসিন, গাইনি, শিশু, অর্থোপেডিক, সার্জারি, কার্ডিওলজি এন্ড সিসিইউ, মানসিক, দন্ত, নিউরো মেডিসিনসহ ৩০টি বিভাগ। সেই সঙ্গে সাধারণ, পেইডসহ এসি কক্ষের সমাহার রাখা হয়েছে। রোগীদের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স ও প্যাথলজি বিভাগ। এতসব আয়োজন করা হলেও শুধু ডাক্তারদের আবহেলায় শুরুতেই ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা সেবা। ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কসহ জেলা থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ধরনের যানবাহনের দুর্ঘটনায় আহতদের সেবা দেয়ার লক্ষ্যে এখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে খোলা হয়েছে নিউরো সার্জারি বিভাগ। এ বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সহকারী অধ্যাপক ডা. মনির হোসেনকে। তিনি একদিনের জন্যও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিউটি করেননি। নিয়োগের পর থেকেই তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। দায়সারাভাবে এ বিভাগের কাজ করছেন ডা. স্বপন ও ডা. রতন। এ দুই ডাক্তার সড়ক দুর্ঘটনার পর কোন রোগী এলেই তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। আবার সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহারিয়ার আনসারী সারা বছরই ঢাকায় অবস্থান করলেও বেতন নেন এখান থেকে। কিডনি ও মূত্রসহ নানা জটিল রোগের জন্য রয়েছে ইউরোলজি বিভাগ। এখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সহকারী অধ্যাপক ডা. আবুল খায়েরকে। ডা. আবুল খায়ের ফরিদপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিক আরোগ্য সদনে কাজ করেন। কোন সময়েই তাকে হাসপাতালে দেখা যায়নি বলে হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা অভিযোগ করেছেন। গ্যাস্টো এন্টোলজি বিভাগে রয়েছেন সহকারী অধ্যাপক ডা. রইচউদ্দীন। রইচউদ্দীন পাঁচ বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেন না অনেক ডাক্তারই- এমন অভিযোগ রয়েছে অনেকদিন থেকেই। ইন্টার্নি ডাক্তাররা আভিযোগ করেন, আমরা এখান থেকে কি শিক্ষা নিয়ে ডাক্তারি করবো। যারা আমাদের শিক্ষা দেবেন তাদের অনেককেই চোখেই দেখি না। অনেকের অভিযোগ, এখানে নানা ধরনের দালালচক্রের সঙ্গে রয়েছে অনেকে সখ্য। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনে রাখা সারি সারি অ্যাম্বুলেন্সে দেখে বোঝা যাবে। ডাক্তাররা রোগীদের ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়ে তাদের দায় সারে আর অ্যাম্বুলেন্স মালিক হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। ওষুধ দোকানদার, ল্যাবসহ রয়েছে নানা দালালচক্র। এসব দালাল স্থানীয়। হাসপাতাল কর্মচারীরা কখনও ভয়ে আবার কখনও লাভে তাদেরকে সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই জনৈক ডা. আফজার হোসেনের নাম উল্লেখ করেছেন। হাসপাতালের অবকাঠমোগত উন্নতি হলেও অবনতি সেবিকাদের। সেবিকাদের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। রোগী ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে সব সময়। হাসপাতালের অভ্যন্তর ময়লা আবর্জনায় ভর্তি থাকে। যেখানে সেখানে পানের পিক আর দুর্গন্ধ। কর্র্তৃপক্ষের দাবি জনবল সঙ্কট। এখানে কাজ করে সাখাওয়াত মোস্তফা। তার কাজকর্মে অবহেলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার ও ইন্টার্নি ডাক্তারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, হাসপাতালের ডাক্তারদের নিয়ন্ত্রণ করে দুটি প্রশাসন। একটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আসম জাহাঙ্গীর হোসেন টিটু এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওমর ফারুক খান। অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক আর সহযোগী অধ্যাপক নিয়ন্ত্রণ করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, বাকিদের নিয়ন্ত্রণ করে তত্ত্ববধায়ক। ডাক্তারদের অভিযোগ, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ টিটুর খামখেয়ালি আর নিজের ব্যক্তিস্বার্থের কারণেই বিতর্কিত ডাক্তাররা সুযোগ পাচ্ছেন। একটি হাসপাতালে ডাক্তারদের ক্ষেত্রে দ্বিমুখী প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের কারণেই প্রভাব পড়ছে চিকিৎসা সেবায়। আর তাতে প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে পড়ছে রোগীরা। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. গোলাম ফারুক খান জানান, বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। আমরা সমস্যা নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং করেছি। কিছু নিয়োগ হয়েছে, বাকি পদে দ্রুত নিয়োগ হবে, আর তাতে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আসম জাহাঙ্গীর হোসেন টিটু বলেন, হাসপাতালটি চলছে দ্বৈত আইনে। এটা একটা বড় সমস্যা। কেউ কেউ অনিয়মিত কাজ করে। আবার যারা ঢাকায় অবস্থান করে তাদের দুই একদিন কাজে গাফিলতি হয়। তাছাড়া মেডিকেল কলেজ আর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এক কিলোমিটার দূরত্বে হওয়ায় কাজ করতে অসুবিধা হয়। তবে মেডিকেল কলেজটি হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনে স্থানান্তর হলে সব সমস্যার সমাধান হবে।

No comments

Powered by Blogger.