রাবি শিক্ষক হত্যার মোটিভ নিয়ে ধোঁয়াশা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম হত্যাকান্ডের মোটিভ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। হত্যাকান্ডের ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও তা নিয়ে নির্দিষ্ট একটি ধারনায় দাঁড়াতে পারেনি পুলিশ। এদিকে হত্যাকান্ডের পর ওই শিক্ষকের বাসা থেকে এক ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া ছাত্রী নিয়ে অনেকটা নিরব পুলিশ। আর ওই ছাত্রী নিয়ে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরজুড়ে নতুন করে শুরু হয়ে কানাঘুসা। ওই ছাত্রীর কারণেও শিক্ষক হত্যা হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র ধারণা করছে।
নিহত ওই শিক্ষকের প্রতিবেশী ও একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য মতে, শিক্ষক হত্যাকান্ডের আগের দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই ছাত্রী শফিউল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় আসেন। এ সময় ওই বাসায় শিক্ষক ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। এরপর শনিবার সকালে ওই ছাত্রীকে ঘরে রেখেই বাসায় তালা দিয়ে শফিউল ইসলাম বিভাগে যান। বিভাগের প্রয়োজনীয় কাজ শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে মোটরসাইকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকন্ঠে বাড়ির ১০০ গজ দূরে হামলার শিকার হন। পরে তাকে মেডিকেলে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, হত্যাকান্ডের পরপরই ডিবি পুলিশের সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে ফেলে। বেশ কিছুক্ষণ পর তারা ওই বাড়িতে তালা ভেঙে তল্লাশি চালিয়ে বাড়ির একটি কক্ষ থেকে ওই ছাত্রীকে আটক করে।
এদিকে ওই ছাত্রী আটকের পর বিষয়টি একেবারেই গোপন করে পুলিশ। ওই ছাত্রীর বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ সংশিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। বর্তমানে এখনো ওই ছাত্রী নগর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারেই রয়েছেন। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ইনচার্জ এসআই মাসুমা মুস্তারী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।   
তবে ওই ছাত্রীকে পরিবারের নিকট হস্তান্তর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। এর আগে রোববার তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেয়া হয়। সেখান থেকে মঙ্গলবার তাকে পরিবারের নিকট হন্তান্তরের কথা ছিলো।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া রক্তমাখা চাপাতিতে হাতের ছাপ এবং ওই শিক্ষকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তবে এখনো তাদের কাছে এ নিয়ে কোন তথ্য নেই। এর আগে রোববার রাতে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ড নিয়ে মহানগর পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা গেলো জরুরি বৈঠকও করেছেন। বৈঠকে হত্যাকান্ডের মোটিভ উদ্ধার ও সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে বিভিন্ন দিক মাথায় নিয়ে তদন্তে নামার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপরও মোটিভ না পাওয়ায় পুলিশের গড়িমসিকেই দুষছেন কেউ কেউ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেন, স্যারের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া বিভাগীয় ওই ছাত্রী, স্যারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি হতে পারে হত্যাকান্তের রহস্য উদঘাটনের বড় প্রমান। হামলার পর থেকে জ্ঞান হারানোর আগ পর্যন্ত স্যার তার মোবাইল ফোনটি হাতছাড়া করেননি। তিনি মনে করেন, পুলিশ যখন কোনো প্রমান উদ্ধারে ব্যর্থ তখন ওই মোবাইল ফোনটিই হতে পারে বড় প্রমান। এছাড়া হত্যাকান্ডের দিন শনিবার বিকেলে ওই শিকের তালাবন্ধ বাসা থেকে উদ্ধার ওই ছাত্রীকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকান্ড এমনটিই দাবি করেছেন তারা।
মঙ্গলবার মামলার তেমন অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির রাজশাহী সফরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকায় এ নিয়ে তারা মুভ করতে পরেননি। রাত থেকেই আবারো তারা অভিযানে নামবেন।
আটক ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি নিছক ব্যক্তিগত। আর তাই এটি এখন তদন্তে আসছেনা। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই ছাত্রীকে নগর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। তার স্বজনরা আসলেই তাকে তাদের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
তবে ওই ছাত্রীর মায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা (ওই ছাত্রীর মা, বাবা ও মামা) গত শনিবার দুপুরে তার মেয়েকে নিতে রাজশাহী আসেন। তারা নগরীতে তার এক আতœীয়র বাসায় আছেন। তার মেয়ে কোথায় আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কোন উত্তর দেননি তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৫ নভেম্বর দুপুরে নগরীর চৌদ্দপাই বিহাস এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন অধ্যাপক ড. শফিউল ইসলাম। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. এন্তাজুল হক বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় প্রথম দফায় ইসলামিয়া কলেজের অধ্য হুমায়ন আহমেদসহ ১১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে সোমবার বিকেলে আদালতে পাঠায় পুলিশ। বুধবার তাদের রিমান্ড শুনানী অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.