জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্দেশেই রাবি হত্যাকাণ্ড হয় জানাল গ্রেফতারকৃত রাবি শিবির নেতা by হবিবর রহমান

 জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্দেশেই গত ৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ৮টি গ্রুপে ভাগ হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যা লাশগুমসহ রগকাটার উন্মত্ত নেশায় মেতে উঠেছিল জামায়াত-শিবির।
নারকীয় ওই হত্যাযজ্ঞে জামায়াত শিবিরের ২ শতাধিক অস্ত্রধারী ক্যাডার অংশ নিয়েছিল। ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যা মামলার আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবর রহমান হলের ছাত্র শিবিরের সভাপতি রাইজুল ইসলাম গ্রেফতার হওয়ার পর সাংবাদিকদের চাঞ্চল্যকর এ তথ্য জানায়।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় র্যাবের গোয়েন্দা দল নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার চৌধুরীবাড়ি এলাকা থেকে ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবর রহমান হল শাখার সভাপতি রাইজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার তাকে র্যাব-২ এর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হয়। রাইজুল সাংবাদিকদের জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের আগে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা রাজশাহী সফর করেন। ওই সফরেই বর্তমান সরকারকে উপযুক্ত শিৰা দেয়ার নির্দেশ দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী মহানগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের বেশ কয়েকটি গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকে রাজশাহীকেন্দ্রিক সমসত্ম ছাত্রশিবির নেতাকর্মীকে একত্রিত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। এসব বৈঠকে রাইজুলও উপস্থিত ছিল। ৮ ফেব্রম্নয়ারি রাজশাহীকেন্দ্রিক সব ছাত্রশিবির নেতাকর্মীকে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। রাতে ছাত্রশিবিরের ২ শতাধিক নেতাকমর্ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশে একত্রিত হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শামসুল আলম গোলাপের নেতৃত্বে শাহ মখদুম হলের ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান এবং বর্তমান সভাপতি আহাদ আলী, আব্দুল লতিফ হলের সভাপতি হাসমত আলী লিটন, আমীর আলী হলের সাবেক সভাপতি ইকরাম বর্তমান সভাপতি আরিফসহ ছাত্রশিবিরের কর্মীরা একটি দল গঠন করে। দলকে হামলার কৌশল সম্পর্কে আগাম ব্রিফিং করে সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ। এরপর সভাপতির নেতৃত্বে ৩টি গ্রম্নপ একসঙ্গে এসএম, আব্দুল লতিফ ও আমির আলী হলে হামলা চালায়। হলে প্রবেশ করেই ভাংচুর লুটপাট চালায় শিবির ক্যাডাররা। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ, এসএম হলের ছাত্রশিবিরের সভাপতি আহাদ আলী ও সাবেক সভাপতি আনিস একযোগে ফারম্নকের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা ফারম্নককে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে। এরপর হাত পায়ের রগ কেটে গভীর রাতে ফারম্নকের মৃতদেহ ম্যানহোলে ফেলে দিয়ে বীরদর্পে বেরিয়ে যায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে জোহা হল শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম, সোহরাওয়াদর্ী হল শাখার সভাপতি মাসুম বিলস্নাহ, মাদারবক্স হলের সভাপতি, জিয়া হলের সভাপতি মোসত্মাফিজুর রহমান ও হবিবর হলের সভাপতি রাইজুল ইসলাম একত্রিত হয়। মূল দলটি ৫টি গ্রম্নপে বিভক্ত করা হয়। পরে তাদের আনুষ্ঠানিক হামলার কৌশল জানিয়ে ব্রিফ করে সাধারণ সম্পাদক। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজ নিজ হলের সভাপতিরা নিজ নিজ হলে হামলা চালানোর সিদ্ধানত্ম হয়। সিদ্ধানত্ম অনুযায়ী একযোগে জোহা, সোহরাওয়ার্দী, মাদারবক্স, জিয়া ও হবিবর রহমান হলে হামলায় চালায়। হামলাকারীরা হলে ঢুকেই হলের নিরীহ ছাত্রদের ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরম্ন করে। ওই দিনের হামলায় অনত্মত অর্ধশত আহত হয়। ওই দিন রাতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু সেস্নাগান দিয়েছিল। হামলা শেষে ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা আসত্মে আসত্মে রাজশাহী ত্যাগ করে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে। রাইজুল পালিয়ে প্রথমে নাটোর চলে যায়। জামায়াতের কেন্দ্রীয় তরফ থেকে ছাত্র শিবিরের নেতাকমর্ীদের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আত্মগোপনে থাকতে বলা হয়েছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্দেশ মোতাবেক রাইজুল নাটোর থেকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আত্মগোপন করেছিল।

No comments

Powered by Blogger.