বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন ঘটনাস্থল দেখতে যাচ্ছে মার্চে- অষ্টম জাতীয় নির্বাচনোত্তর সহিংসতা by রশিদ মামুন

 ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন মার্চের প্রথম সপ্তাহে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শুরু করছে। তদনত্মের জন্য এ পর্যনত্ম পাঁচ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।
প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকা থেকে ওই সময়ের নির্বাচনপরবর্তী বর্বরতার তদনত্ম দাবি করে কমিশনের কাছে লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করা হচ্ছে। সারাদেশে ব্যাপক সাড়া পড়ায় তদনত্ম কমিশন অভিযোগ জমা নেয়ার সময়সীমা এক মাস বৃদ্ধির সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। তদনত্ম কমিশন গঠন ইতিবাচক উলেস্নখ করে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন তাঁরা কমিশনকে সার্বিকভাবে সহায়তা করবেন।
সংশিস্নষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০০১ সালের নির্বাচনপরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সারাদেশে নির্মম বর্বরতা চালায়। ওই বছর অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত ৰমতাসীন হওয়ার পর সুপরিকল্পিতভাবে দেশের প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন শুরম্ন করে। লুন্ঠন, অগি্নসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণ এমন কোন নির্যাতন নেই, যা ওই সময়ে করা হয়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ধরনের ২৬ হাজার ঘটনা রেকর্ড করেছে। যার মধ্যে ৫০০ ঘটনা ছিল স্পর্শকাতর। বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করায় সচেতন মহলে জোট সরকার সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়।
হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পৰে সুপ্রীমকোর্টের সাত আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেেিত বিচারপতি এবিএম খায়রম্নল হক এবং বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গত বছর ৬ মে সরকারকে ২০০১ সালের নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা তদনত্মর জন্য বিচার বিভাগীয় তদনত্ম কমিশন গঠনের নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে গত ২৭ ডিসেম্বর এক গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত জেলা এবং দায়রা জজ মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধান করে সরকার তিন সদস্যের কমিশন গঠন করে। কমিশনের অপর দুই সদস্য হলেন সদস্য সচিব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনোয়ার হোসের আকন্দ এবং সদস্য সিআইডির এসপি মীর শহিদুল ইসলাম। গত ৩১ জানুয়ারি সার্কিট হাউসের সামনের দু'টি ক নিয়ে কমিশনের অফিস স্থাপন করার পর কয়েকটি সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ৩ ফেব্রম্নয়ারি থেকে কমিশন পুরোদমে কার্যক্রম শুরম্ন করে।
বৃহস্পতিবার পর্যনত্ম তদনত্ম কমিটির কাছে প্রায় পাঁচ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি লিখিত এবং ডাকযোগে প্রাপ্ত অভিযোগে হত্যা, ধর্ষণ, জায়গা দখল, ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, চাঁদাবাজি, এলাকা ছেড়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে থাকার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগীরা যাতে নতুন কোন সমস্যায় না পড়েন সে জন্য তাদের পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে।
তদনত্ম কমিশনের প্রধান সাহাবুদ্দিন চুপ্পু জনকণ্ঠকে বলেন, তাদের কাছে বেশিরভাগ অভিযোগ আসছে দেশের দৰিণ পশ্চিমাঞ্চল থেকে। যেসব জেলা থেকে বেশি অভিযোগ আসছে সেগুলো হচ্ছে বাগেরহাট, ভোলা, নোয়াখালী, সাতীরা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল।
আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এসব অভিযোগ তদনত্মর জন্য কমিশন মাঠ পর্যায়ে যাবে। তদনত্মর ৰেত্রে স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তদনত্মর ৰেত্রে ঘটনার পটভূমি, কারণ, দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, ঘটনাপরবর্তী সময়ে মামলা হলে সেগুলোর কি অবস্থা তা বিবেচনা করা হবে। ইতোমধ্যে সকল জেলার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের কাছে তদনত্ম কমিটিকে সহায়তা করার নির্দেশ দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ঘটনা তদনত্মর জন্য সে সময়ের পত্রপত্রিকার রিপোর্ট, বিভিন্ন মানবাধিকার, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সহায়তা নেয়া হবে। এর মধ্যেই এসব সংগঠনের সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
তদনত্ম পরবর্তী কি করা হবে জানতে চাইলে চুপ্পু বলেন, ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পর তাদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে। সরকার পরবর্তী পদৰেপ নেবে।
সারাদেশ থেকে ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষ তদনত্ম কমিশনের কাছে আসায় মাত্র ২০ কার্যদিবসকে যথেষ্ট মনে করা হচ্ছে না। আগের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৮ তারিখ অভিযোগ গ্রহণের সময়সীমা শেষ হলেও মার্চেও তদনত্ম কমিশন অভিযোগ গ্রহণ করবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যনত্ম রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডের সেন্ট্রাল সার্কিট হাউসের নিচতলায় ভুক্তভোগীরা লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.