অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি-সেই হাসপাতাল আজও হলো না by তৌফিক মারুফ

২০১০ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানায় জ্বলে ওঠে আগুন। রাতে আগুন নিভে যাওয়ার আগেই পুড়ে মারা যান ২৮ শ্রমিক। এর মধ্যে কয়েকজন মারা যান ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে।
আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে আরো কয়েকজনের মৃত্যু হয়। কেউ কেউ শারীরিকভাবে চিরদিনের জন্য অক্ষম হয়ে যান।
ওই ঘটনার পর রাতে হা-মীম গ্রুপের কারখানা পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক। ওই কারখানার সভাকক্ষে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএর নেতা ও একাধিক সংসদ সদস্যকে নিয়ে তাৎক্ষণিক এক পর্যালোচনা সভা করা হয়। সে সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদ, সংসদ সদস্য ইস্রাফিল আলম, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদসহ আরো অনেকে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএর তৎকালীন সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী সভায় পোশাক শিল্পের নানা দুর্ঘটনাজনিত জরুরি চিকিৎসা সমস্যার কথা তুলে ধরে আশুলিয়া এলাকায় একটি উন্নতমানের বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানান সরকারের কাছে। বৈঠকে উপস্থিত বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হকও একই দাবি জানান।
বৈঠকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন, 'আশুলিয়া এলাকায় একটি বিশেষ চিকিৎসা ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর অংশ হিসেবে এক সপ্তাহের মধ্যে একটি অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স কাজ শুরু করবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর দাবি অনুযায়ী একটি হাসপাতাল স্থাপনের পদক্ষেপও নেওয়া হবে।'
ওই বৈঠকের পর প্রায় দুই বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু ওই এলাকার শিল্প মালিক বা শ্রমিকদের আশা পূরণ হয়নি। সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। কোনো উদ্যোগও আলোর মুখ দেখেনি। এর মধ্যে গত শনিবার রাতে হা-মীম গ্রুপের ওই কারখানার পাশেই তুবা গ্রুপের কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন লেগে ঘটে গেছে দেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।
বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি শফিউল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আশুলিয়ায় এখন পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে কোনো হাসপাতাল বা অ্যাম্বুলেন্স আমরা পাইনি। ফলে এ ধরনের ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। তবে আমরা নিজেদের উদ্যোগে পোশাক শিল্পকারখানার শ্রমিকদের জন্য ঢাকার মিরপুরে ১৫০ শয্যার একটি হাসপাতালের কাজ শুরু করেছি। চট্টগ্রামেও আরেকটি হাসপাতাল করা হয়েছে।'
ঢাকার সিভিল সার্জন মো. জসিম উদ্দিন জানান, হা-মীমের ঘটনার সময় সরকারি উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত আশুলিয়ায় শিল্প শ্রমিকদের জন্য কোনো হাসপাতাল হয়নি। কোনো অ্যাম্বুলেন্সও দেওয়া হয়নি। তবে এমন কিছু করা গেলে ওই এলাকার শ্রমিকদের জন্য খুবই ভালো হবে।

No comments

Powered by Blogger.