ভিন্ন পেশা- আকাশে বিমানের পথ দেখান by শান্তা তাওহিদা

রানওয়ে থেকে একে একে উড়ে যাচ্ছে এক-একটি বিমান। পৌঁছে যাচ্ছে নিজস্ব গন্তব্যে। কিন্তু কী করে? আকাশে তো কোনো পথ নেই। নেই লাল-সবুজ বাতির ট্রাফিক সিগন্যালও। সার্বক্ষণিক বিমানচালকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমেই কেবল আকাশপথের অসীম ঠিকানার কূলকিনারা মেলে।
আর সেই পেশার নাম এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার। এই পেশার কাজ একটি বিমানকে ওড়ার জন্য ও নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য পথের নির্দেশনা দেওয়া। এ পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন সিনিয়র এরোড্রোম অফিসার সাবেরা রহমান। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অপারেশন বিল্ডিংয়ে সাবেরা রহমান প্রায় ১৪ বছর ধরে পালন করে আসছেন এ দায়িত্ব। বর্তমানে বাংলাদেশে সাবেরা রহমানসহ আরও দুজন নারী এ পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলিং রাডারের সাহায্যে করা হয়। দিনের বেলায় রাডার ব্যবহারের সুবিধা পেলেও রাতে সেই সুবিধা থাকে না। তখন সার্বক্ষণিক বিমানচালকদের সঙ্গে কথা বলে ও অভিজ্ঞতার আলোকে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাঁরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর নিছক কৌতূহলবশত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে এ চাকরির সাক্ষাৎকার দেন সাবেরা। পেয়ে গেলেন সরকারি এ চাকরি। দুই বছরের প্রশিক্ষণের পর যোগ দেন এরোড্রোম অফিসার হিসেবে কর্মক্ষেত্রে। রোমাঞ্চকর এ পেশা তাঁর জীবনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো বিমান একসঙ্গে আকাশে থাকে। বিমানে অবস্থানরত এতগুলো মানুষের জীবনের দায়িত্ব তখন পাইলট এবং আমাদের ওপর নির্ভর করে। খারাপ আবহাওয়া, রাতের আঁধার...প্রতিটি মুহূর্ত থাকে টানটান উত্তেজনায়। একটি বিমান যখন এসে রানওয়েতে ঠিকভাবে পৌঁছায়, তখন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচি আমরা।’ নির্দিষ্ট আসনে বসে টানা ছয় ঘণ্টা কাজ করতে হয়। মাঝে মধ্যে সকাল কিংবা বিকেলের শিফটে ছয় ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে রাতে ১২ ঘণ্টা দায়িত্বও পালন করতে হয় তাঁদের। তবে দায়িত্ব পালনে সাবেরা সব সময় সহযোগিতা পেয়েছেন সহকর্মীদের। আর পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছেন স্বামীর কাছ থেকে। এ পেশায় একদিন নারীকর্মীর সংখ্যা এক এক করে বাড়বে, এ প্রত্যাশাই করেন সাবেরা।

No comments

Powered by Blogger.