বাণিজ্য মেলায় কাজের হাতছানি by জাহিদ হাসান

বছর ঘুরে আবারও শুরু হতে যাচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বা ডিআইটিএফ-২০১২। দেশ-বিদেশের নামীদামি প্রতিষ্ঠানগুলোর চোখ-ধাঁধানো সব স্টল-প্যাভিলিয়নে দেখা যাবে উপচে পড়া ভিড়। সব মিলিয়ে অতীতের মতো এবারও মেলাটি ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আর মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা রকমের পণ্যসম্ভার ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরবেন চটপটে তরুণ-তরুণীরা। এ জন্য সাধারণত রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী বা সদ্য স্নাতক ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীদেরই এক মাসের জন্য নেওয়া হয়। অনেক শিক্ষার্থীই এ সুযোগ নিয়ে বাড়তি কিছু আয়-রোজগার করেন। আগামী জানুয়ারি মাসের শুরুতেই শুরু হতে যাচ্ছে এই মেলা। এ উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে খণ্ডকালীন বিক্রয়কর্মী বা বিপণনকর্মী চেয়ে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তবে বিক্রয়কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে অল্প শিক্ষিত ব্যক্তিরাও বাণিজ্য মেলায় কাজ করতে পারেন। তেমনই একজন নিউমার্কেটের একটি পোশাকের দোকানের স্থায়ী কর্মী সুমন। তিনি মালিকের অনুমতি নিয়ে তিন বছর ধরে বাণিজ্য মেলায় কাজ করছেন বলে জানান। নিউমার্কেটের আরও দেড় শতাধিক কর্মী প্রতিবছর এ কাজ করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নেওয়া হয় যে কারণে: এ বিষয়ে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন আহেমদ জানান, মেলা চলাকালে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় সামাল দিয়ে পণ্যের বিক্রয় বা উপস্থাপন বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিষ্ঠানভেদে প্রয়োজন হয় ১০ থেকে ১৫ জন বা তারও বেশি কর্মী। সব প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের স্থায়ী কর্মী থাকলেও মেলায় অংশ নেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ, তাঁরা মেলায় ব্যস্ত থাকলে প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা থাকে। সে জন্য মেলার জন্য উদ্যমী তরুণ-তরুণীদের চুক্তিভিত্তিক নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্য থেকে স্থায়ীভাবে কর্মী নেওয়ারও ভাবনা থাকে কোম্পানিগুলোর।
নিয়োগ হয় যেভাবে: ডিআইটিএফে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই সচরাচর পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লোক নিয়ে থাকে। তবে আগ্রহী প্রার্থীরা সরাসরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদনপত্র জমা দিতে পারেন। অন্যান্য নিয়োগের মতো এ ক্ষেত্রেও কোম্পানিগুলো আবেদনপত্র বাছাই করে প্রার্থীদের ডাকে। প্রতিষ্ঠানভেদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে মৌখিক পরীক্ষাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় বেশি। তখন প্রার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা হয়। কারণ, অনেকেই শখের বশে কাজ শুরু করে মেলার মাঝপথেই চলে যান। সে জন্য প্রার্থীদের পরিবারিক ও সার্বিক দিক বিবেচনা করা হয় বলে জানান জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
অগ্রাধিকার পাবেন যাঁরা: বাণিজ্য মেলার জন্য কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তাঁদের আর কিছু গুণাবলি বিবেচনা করা হয়। এগুলো হচ্ছে:কাজের প্রতি আগ্রহ, সহজ-সাবলীল উপস্থাপনা, সুন্দর বাচনভঙ্গি, উচ্চারণে শুদ্ধতা, পরিশ্রম করার মানসিকতা, রুচিশীল পোশাক-আশাক, মার্জিত কথা বলার দক্ষতা ইত্যাদি। তাই আবেদনপত্র বা জীবনবৃত্তান্ত উপস্থাপনের ধরন, ছবি সংযুক্তকরণও সাক্ষাৎকারের সময় খুবই সতর্ক থাকতে হবে—এমনটাই জানালেন র‌্যাংগস ইলেকট্রনিকসের সহকারী বিপণন ব্যবস্থাপক আজাদ রহমান। তিনি নিজেও এক মাসের চুক্তিতে কাজ করতে এসে মেলা শেষে এই প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মী হওয়ার সুযোগ পেয়ে যান বলে জানান।
কাজের দায়িত্ব ও সুযোগ-সুবিধা: নির্বাচিত প্রার্থীদের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পণ্য ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি দায়দায়িত্বও বোঝানো হয়। মনে রাখতে হবে, প্রতিদিনই মেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকতে হয়। মেলা চলাকালে অসুস্থতা বা খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সাপ্তাহিক কোনো ছুটির ব্যবস্থা নেই। প্রতিষ্ঠান থেকেই কর্মীদের খাবারের ব্যবস্থা থাকে। মেলায় কাজ করে একজন কর্মী প্রতিষ্ঠানভেদে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা সম্মানী পেতে পারেন। আজাদ রহমান আরও জানান, সবচেয়ে ভালো সুযোগ হলো, মেলা শেষে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এখান থেকেই স্থায়ী কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা করে। তাই আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে আপনিও পেয়ে যেতে পারেন একটি কাঙ্ক্ষিত চাকরি।

No comments

Powered by Blogger.