মেধাবী মুখ- শেকড় থেকে শিখরে by হরি কিশোর চাকমা

বসুমিত্রের গল্পটা শূন্য থেকে শীর্ষ পৌঁছানোর গল্প। পরিকল্পিত লেখাপড়া আর অধ্যবসায় থাকলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা অসম্ভব কিছু নয়। এ কথা বলতেই পারেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে এমএসএসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়া বসুমিত্র চাকমা।
সেই অজপাড়া গ্রাম থেকে শুরু হওয়া শিক্ষাজীবনে যত উচ্চস্তরে গেছেন, তত উন্নত করেছেন ফলাফল। সর্বশেষ পরীক্ষায় প্রথম। তার আগে বিএসএস (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় রাঙামাটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে প্রথম বিভাগ ও মাধ্যমিক পরীক্ষায় উগলছড়ি মহাজনপাড়া উচ্চবিদ্যালয়েও প্রথম বিভাগে পাস করেন বসুমিত্র চাকমা।
শিক্ষাজীবনে প্রতিটি স্তরে উন্নতির বিষয়ে জানতে চাইলে বসুমিত্র বলেন, ‘আমার জন্ম লংগদু উপজেলার দুর্গম বগাচতর ইউনিয়নে। সেখানেই আমার শিক্ষাজীবন শুরু। সেখানকার উগলছড়ি মহাজনপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে আমরা ছিলাম মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম ব্যাচ। তারপর রাঙামাটি এসে একটু চিন্তা ছিল, শহরের বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারব কি না। গ্রাম থেকে এসেছি, শহরের পড়াশোনা একটু অন্য ধরনের হবে। কিন্তু কিছুদিন ক্লাস করার পর মনে মনে জেদ করলাম, তারা পারলে আমি কেন পারব না। এই জেদ নিয়ে পরিকল্পনামাফিক শুরু করলাম পড়াশোনা। উচ্চমাধ্যমিকে মোটামুটি ভালোই করলাম। প্রথম বিভাগ পেলাম। তারপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। সেখানেও প্রথম অবস্থায় পড়াশোনার পরিবেশ বুঝতে একটু সময় লেগেছিল। তার পরও বিএসএস (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে অষ্টম স্থান অধিকার করি। তারপর এমএসএস শ্রেণীতে পরীক্ষায় জেদ, মনোবল আর পরিকল্পনামাফিক পড়াশোনার মাধ্যমে আমার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করি। আমার শিক্ষকেরা আমাকে খুবই সহযোগিতা করেছেন। আমি তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
বসুমিত্র চাকমার বাবা ধীশক্তি চাকমা স্থানীয় উগলছড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, মা জ্যোতিকা চাকমা গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে বসুমিত্র চাকমা সবার বড়। বসুমিত্রও বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত। তিনিও শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান। তারপর সুযোগ হলে বিদেশে গিয়ে আরও উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করার ইচ্ছা আছে। ভবিষ্যতে নিজের এলাকা বগাচতর ইউনিয়নের শিক্ষায় কাজ করতে চান বসুমিত্র চাকমা।

No comments

Powered by Blogger.