পদ্মা সেতু প্রকল্প- ‘কিছুটা দুর্নীতির চেষ্টা’ করা হয়েছে: দুদক

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থের কোনো লেনদেন না হলেও, ঘুষের চেষ্টা হয়েছে। এই প্রকল্পে কিছু লোক অসৎ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টাও করেছেন।গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুদক কার্যালয় প্রাঙ্গণে গোলাম রহমান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য দেন।
তাহলে কি পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুটা দুর্নীতির চেষ্টা’ করা হয়েছে। এ ধরনের ক্লু (সূত্র) পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধান দল। এর ভিত্তিতে অনুসন্ধানকাজ এখন প্রায় শেষের পথে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা তাঁদের প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবেন বলেও জানান দুদকের চেয়ারম্যান।
গোলাম রহমান এ-ও জানান, আগে যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, দ্বিতীয় দফায় তাঁদের সঙ্গে নতুন অনেককে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। এসব জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হবে আগামী ৩ ডিসেম্বর। এরপর অনুসন্ধান দল তাদের সুপারিশসহ প্রাথমিক রিপোর্ট কমিশনে জমা দেবে। কমিশন তা বিচার-বিশ্লেষণ করে এজাহার দায়ের করা হবে কি হবে না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
দুদকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে কিছু তথ্য পেয়েছি। কানাডা থেকে কিছু তথ্য পাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধান দল যদি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারত, তাহলে আমাদের রিপোর্ট পূর্ণাঙ্গ হতো। তবে আমরা এ জন্য বসে থাকব না।’
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে রক্ষার কোনো চাপ আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ রকম কোনো চাপ নেই।’
দুদকের অনুসন্ধানের প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে দুদকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘তাঁরা যদি ওই সময়ে এখানে আসে, তাহলে তাদের সঙ্গে শেয়ার (তথ্য জানানো) করা হবে। আর ওই সময়ে তারা ঢাকায় না থাকলে আমরা সিদ্ধান্তটি তাদের জানিয়ে দেব।’
সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের জবানবন্দি: পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির ঘটনায় দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার সেতু বিভাগের পাঁচ কর্মকর্তার জবানবন্দি নিয়েছে দুদকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের অনুসন্ধানী দল। এঁরা হলেন: বাংলাদেশ সেতু বিভাগ কর্তৃপক্ষের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ রজব আলী ও উপপরিচালক মনিরুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাফর উল্লাহ, বুয়েটের অধ্যাপক মো. আবু সিদ্দিক ও জাতীয় গৃহায়ণ অধিদপ্তরের সদস্য মো. সানোয়ার আলী।
দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের সূত্র জানায়, অনুসন্ধান দল পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগের দরপত্র-প্রক্রিয়ায় কিছু অনিয়ম পেয়েছে। অনুসন্ধান দলের পর্যবেক্ষণ, দরপত্র-প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লেগেছে। চারবার দরপত্র পর্যালোচনা কমিটি বদল করা হয়েছে। প্রথম দফায় পর্যালোচনা কমিটি ছিল আটজনের। পরে দ্বিতীয় দফায় কমিটি করা হয় সাতজনের। তৃতীয় দফায় আবার সাতজনের কমিটি এবং চতুর্থ ও সর্বশেষ দফায় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিটি হয় পাঁচজনের। পর্যালোচনা কমিটিতে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্তের পেছনে একবারই যুক্তিসংগত কারণ ছিল। কিন্তু বাকি যে কয়বার পরিবর্তন আনা হয়, তার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি ছিল না বলে উল্লেখ করে দুদক সূত্র। বারবার এভাবে দরপত্র কমিটিকে ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে দুর্নীতির চেষ্টা চালানো হয়েছে বলে মনে করছে অনুসন্ধান দল।
দুদক সূত্র আরও জানায়, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি তদন্তে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় দফায় আসার কথা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ প্যানেল থেকে ইতিবাচক প্রতিবেদন পেলেই নির্মাণবিষয়ক দ্বিতীয় দলটি বাংলাদেশে আসার প্রস্তুতি নেবে।
৩ ডিসেম্বর আবুল হোসেন ও আবুল হাসানকে মুখোমুখি: সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে আগামী ৩ ডিসেম্বর মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতিমধ্যে তলব করেছে দুদক। আজ বুধবার সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে দুদকে তলব করার কথা ছিল। কিন্তু আবুল হোসেনের বিশেষ সমস্যার কারণে সময় পরিবর্তন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.