কাল বিএমএ নির্বাচন-স্বাচিপ নির্ভার সংশয়ে ড্যাব

আগামীকাল ২৯ নভেম্বর চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। সংগঠনের নতুন মেয়াদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবে প্রায় ৩৩ হাজার চিকিৎসক। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সমর্থিত দুটি প্যানেল লড়াইয়ে আছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকেই সব ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হয়েছে।
তবে শেষ সময়ে এসে ভোটের সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন বিএনপিপন্থী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) প্যানেলের মহাসচিব প্রার্থী অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
মঙ্গলবার রাতে ডা. জাহিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীদের কর্মীরা যেভাবে তৎপরতা শুরু করেছে তাতে বাকি সময়টুকুতে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা বলা মুশকিল। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাই নির্বাচন বয়কটের কোনো ভাবনা এখন পর্যন্ত নেই। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, স্বাচিপ প্রার্থীদের লোকজন বিএমএ ভবনসহ ঢাকা ও বাইরে বিভিন্ন এলাকায় ড্যাবের প্যানেলের ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলছে, সরকারি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে স্বাচিপের পক্ষে কাজ করছে, অনেক স্থানে সাধারণ ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
তবে ডা. জাহিদের এসব অভিযোগ সম্পর্কে বিএমএর বর্তমান মহাসচিব ও স্বাচিপ নেতা অধ্যাপক ডা. সারফুদ্দিন আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, অভিযোগ শুনে মনে হয় তাঁরা (ড্যাব) নির্বাচনে পরাজয়ের আঁচ পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হবে বলেই আমরা আশাবাদী। আর এ ভোটে আমাদেরই জয় হবে।
এদিকে ভোটের আগ মুহূর্তে এসে ড্যাবের অন্তর্দ্বন্দ্ব আরো জোরালো হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মাজহারুল ইসলাম দোলন বা তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীদের কাউকে ড্যাবের প্যানেলে মনোনয়ন না দেওয়া এবং নির্বাচনী কোনো প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না দেওয়ার ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেনের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে পরিচিত ডা. দোলন বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করলেও তাঁর অনুসারীরা ঢাকা ও বাইরের বিভিন্ন এলাকায় ডা. জাহিদবিরোধী জনসংযোগ চালায়। এমনকি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবরে একটি খোলা চিঠিও গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে ডা. জাহিদের বিভিন্ন অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, ১৩টি মামলায় সাজা হওয়ার তথ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে গত ১৩ নভেম্বর ড্যাবের ছয়টি শাখাকে অবৈধ ঘোষণারও প্রতিবাদ জানানো হয়।
ড্যাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন সিনিয়র চিকিৎসক কালের কণ্ঠকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা নৈতিকভাবে বিএনপির রাজনীতি করি এবং ড্যাবের সমর্থক। এবার আমাদের প্যানেলের জয় আরো নিশ্চিত হতো যদি প্রার্থী মনোনয়নে আরো সাবধানতার ছাপ থাকত। এ ছাড়া নিজেদের ভেতরের কোন্দল মিটিয়ে সবাইকে কাজে নামলে আরো ভালো হতো। তিনি বলেন, ডা. জাহিদ ড্যাবকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করতে চান। এবারের প্যানেল তাঁর কিছু পকেটের লোক নিয়ে দেওয়ার ফলে অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
প্যানেল পরিচিতি
গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএমএ নির্বাচনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠিত হয়। স্বাচিপের বিএসএমএমইউ শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এমপি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, অধ্যাপক রশিদ ই মাহাবুব, অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া, ডা. কামরুল হাসান খান, ডা. মো. আবদুল আজিজ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মেধা ও যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসা পেশাকে দলীয়করণ ও দুর্নীতিমুক্ত করা, চিকিৎসকদের অধিকার আদায় ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নে দিন বদলের ধারাকে অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ডা. মাহমুদ হাসান ও অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান পরিষদকে নির্বাচিত করার বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলন
রাজধানীর প্রগতি সম্মেলনকেন্দ্রে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য দেন পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম। আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান, ডা. মুজিবুল হক আরজু, ডা. প্রণব, অনুপ কুমার কুণ্ডু, জুলফিকার আলী, এরশাদ আলম, ফয়সাল মাহমুদ প্রমুখ।
এতে জনগণের চিকিৎসাসেবা সংকোচনের সরকারি নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য চিকিৎসক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বিএমএকে দলীয়করণ, দুর্নীতি থেকে মুক্ত করতে হলে সংগ্রাম ছাড়া চিকিৎসক সমাজের আর কোনো বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.