বিপন্নদের উদ্ধার-মমিনুলের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডে গত শনিবার রাতের ভয়াবহ অগি্নকাণ্ডে ১১১ জন শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আশঙ্কা, এই ট্র্যাজেডিতে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা কখনোই পাওয়া যাবে না। পোশাক কারখানাটির বিভিন্ন তলার কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ থাকার কারণে আগুন লাগার পরও শ্রমিকরা বেরিয়ে আসতে পারেননি।
এর বাইরে নানাবিধ অনিয়মের কথা প্রকাশিত হচ্ছে। ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠলেও শ্রমিকদের বের হতে দেওয়া হয়নি। জরুরি বহির্গমনের সিঁড়িও যথাযথ ছিল না। এসব অব্যবস্থাপনার কারণেই নিশ্চিন্তপুরের আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। তবে এই অগি্নকাণ্ডের ঘটনায় পোশাক কারখানাটির সুইং অপারেটর মমিনুল ইসলাম একাই বাঁচিয়েছেন ১৪ সহকর্মীর প্রাণ। আগুন নেভানোর কলাকৌশল তার জানা ছিল। পাশাপাশি তার ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষণও ছিল। সাহস নিয়ে তিনি অগি্নকাণ্ডের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। কালো ধোঁয়ায় ঘর ভরে যেতে থাকলে তিনি অ্যাকজস্ট ফ্যান বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপর জানালার গ্রিল ভেঙে বাঁশের মইয়ের মাধ্যমে সহকর্মীদের নিচে নামান। এই নেমে যাওয়ার সময়ও বিপদের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু মমিনুলের সময়োচিত সিদ্ধান্ত বাঁচিয়ে দিয়েছে ১৪ জনকে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষণ কীভাবে অগি্নকাণ্ডের ঘটনায় জীবন বাঁচাতে পারে, এটা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পোশাক কারখানাগুলোতে আগুন লাগার ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে। পরিসংখ্যান আছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১৬৭টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। শ্রম আইন ২০০৬-এর ৬২ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, অগি্নকাণ্ডকালে বহির্গমনের উপায় সম্পর্কে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া প্রতি বছর অন্তত একবার অগি্ননির্বাপণ মহড়ার আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, অধিকাংশ পোশাক কারখানা এই নিয়ম মানছে না। তাজরীন ফ্যাশনের শ্রমিকদের যথাযথ অগি্ননির্বাপণ প্রশিক্ষণ থাকলে এই দুর্ঘটনায় প্রাণনাশের সংখ্যা নিঃসন্দেহে অনেক কম হতো। এ ছাড়া পোশাক কারখানা বাইরে থেকে যেন তালাবদ্ধ করে রাখা না হয় তা নিশ্চিত করা জরুরি বলে আমরা মনে করি। দুর্ঘটনার সময় তালাবদ্ধ অবস্থায় শ্রমিকরা অগি্নকূপে বন্দি হয়ে পড়েন। এখন থেকে এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিতে হবে। পোশাক কারখানার প্রতিটি শ্রমিকের জন্য অগি্ননির্বাপণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। এর জন্য কারখানাগুলোর
মালিকপক্ষকেই ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.