দেশের উন্নতি বিএনপির পক্ষেই সম্ভবঃ খালেদা জিয়া

বিদ্যমান সম্পদ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত করা কেবল বিএনপির পক্ষেই সম্ভব বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।  বুধবার নয়াপল্টনে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ দাবি করেন।


khaleda ziaখালেদা জিয়া বলেন, “বাংলাদেশ গত চার বছরে অনেক পিছিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের দেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এই দেশের অনেক সম্পদ আছে। এসব কাজে লাগিয়ে দেশকে উন্নত করা যায়। কিন্তু তা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব নয়। বিএনপির পক্ষেই এটা সম্ভব।”

এ সময় বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার-জুলুম বন্ধ করারও আহবান জানান খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, “দেশে গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। উদ্যোক্তরা মেশিন এনে বসে আছেন। গ্যাস ছাড়া কারখানা চালু করা যাচ্ছে না। দেশে ৩৮টি ব্যাংক আছে, কিন্তু বিনিয়োগের টাকা নেই। হল মার্কের ঘটনার পর ব্যাংকগুলো টাকা দিতে চায় না।”

খালেদা জিয়া বলেন, “ড. ইউনূসকে দায়ী করে লাভ নেই। অর্থমন্ত্রী ও তার সরকারের আচরণের জন্যই বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। ড. ইউনূস দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। তাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে সরকার দলীয়করণ করতে চাইছে। তারা বিচারবিভাগকেও দলীয় করতে চাইছে।”
দুর্নীতিদমন কমিশনের (দুদক) নাম মিথ্যাবাদী কমিশন রাখা উচিত বলে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, “দুদক সরকারের পদলেহী। তারা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীরা হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করছে, সেগুলো তারা দেখছে না।”

khaledaসরকারের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, “প্রশাসনে দলের সমর্থক কর্মকর্তাদের বড় বড় প্রোমোশন দিয়ে প্রশাসনকে স্থবির করে ফেলা হয়েছে। পুলিশে বড় ধরনের দলীয়করণ করেছে। পুলিশ ভরে গেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীতে।

“বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দু’টি পদ্মাসেতু হবে” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের যেখানে সেতু প্রয়োজন সেখানেই সেতু হবে।”

খালেদা জিয়া বলেন, “গত ছয় বছরে দেশের কোন উন্নয়ন হয়নি। এখন উন্নয়ন প্রয়োজন। সরকার বিদ্যুৎ দেবে বলেছিলো। কিন্তু কুইক মানি করতে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট করেছে। দেশের মানুষ এখনও বিদুৎ তো পায়ইনি, সরকারের লোকদের ঠিকই টাকা হয়েছে।”

খালেদা জিয়া বলেন, “এই সরকার শুধু এই করেছি ওই করেছি বলে, কিন্তু আসলে কিছুই করে না। আমাদের নাম ফলক ফেলে দিয়ে তাদের নাম ফলক বসায়। তারা শুধু নাম ফলক বসাতে জানে, কাজ জানে না। এই সরকার ভালো কোনো কাজ এখনো করেনি।”

khaledaখালেদা জিয়া বলেন, “বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তারা ২১ জন ফাঁসির আসামিকে মাফ করে দিয়েছে। নিজেরা মানুষ হত্যা করছে, গুম করছে। এ সরকার একটি ব্যর্থ সরকার।”

বিএনপি প্রধান বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিলেও তাতে বাধা দেওয়া হয়। আজকের সমাবেশেও বাধা দেওয়া হয়েছে। তাহলে কথা হলো এই সরকারের ভয়, জনগণ যাতে আমাদের জনসভায় অংশ নিতে না পারে। কিন্তু তাতে তারা সফল হয়নি।“

তিনি বলেন, “এই সরকার জনগণকে দেওয়া ওয়াদা বাস্তবায়ন করতে পারে না। তাদের ক্ষমতায় থাকায় অধিকার নেই। তারা চার বছর কাটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দেশের কোনো উন্নতি হয়নি। আর এক বছর মাত্র সময় আছে। শেষ সময় তারা কিছু টাকা ছড়াবে। কিন্তু সে টাকাও কাজে লাগবে না।”

তিনি বলেন, “এ সরকারের আমলে আবাসন শিল্পে কোনো ধরনের উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। ডেভেলপাররা বাড়ি বানিয়ে গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়া ফেলে রেখেছেন বিক্রি করতে বা ভাড়া দিতে পারছেন না। তাদের জন্যও এই সরকার কিছুই করতে পারেনি।”

খালেদা জিয়া বলেন, “আমাদের জনশক্তির একটি ভালো বাজার ছিলো। সেই বাজার সরকার শেষ করে দিয়েছে। কোনো মানুষ বিদেশে যেতে পারছে না। যারা রয়েছে তাদেরও দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।”

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলে দেশের জনশক্তি রপ্তানি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন খালেদা।

khaledতিনি বলেন, “এ সরকার যুবকদের হাতে কাজ না দিয়ে ফেনসিডিল তুলে দেয়। শুনেছি সরকারের অনেকেরই নাকি ফেনসিডিল খাওয়ার অভ্যাস আছে। আমরা ক্ষমতায় গেছে যুবকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করবো।”

খালেদা জিয়া বলেন, “সরকার যুবলিগ- ছাত্রলীগের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশ দিচ্ছে বিরোধী দলের কর্মীদের হত্যা করার। ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষকরা অপমানিত হচ্ছেন।”

এই ছাত্রলীগ-যুবলীগ ফ্রঙ্কেনস্টাইন হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদেরই ধ্বংস করবে বলেও মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
এ সময় সরকারকে সতর্ক করে খালেদা জিয়া বলেন, “এরপর বাধা দিলে হরতাল দিতে বাধ্য হবো। আওয়ামী লীগ যে পথে হেঁটেছে দরকার হলে সে পথে হাঁটবো। প্রয়োজনে হরতালের চেয়েও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “এখন প্রতিশোধ নেওয়ার সময় এসেছে। কারণ, এই সরকার যেভাবে খুন গুম হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তাতে এখন আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা কেউ ছাড় পাবেন না। অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে।”
 
বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা দলীয় নয়, নিরপেক্ষভাবে বিচার করুন।”

তিনি বলেন,  “আওয়ামী লীগের ইতিহাস হত্যা, গুম, নির্যাতন, সন্ত্রাস, দুর্ভিক্ষের ইতিহাস। আর বিএনপির ইতিহাস উন্নয়নের ইতিহাস। আমরা গণতন্ত্র এনেছি।”

বিএনপি প্রধান বলেন,  “আমরা আওয়ামী লীগকে বলতে চাই, পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে যথা সময়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনেই প্রমাণিত হবে আপনারা দেশের জন্য কাজ করেছেন, নাকি ক্ষমতায় থাকতে তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের চেষ্টা করেছেন।”

জনগণের প্রতি তিনি বলেন, “আরেকবার সুযোগ দিন, আমরা বাংলাদেশকে দারিদ্রমুক্ত করবো, সম্মৃদ্ধ করবো, সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আর যদি তা না পারি আর কখনো আপনাদের সামনে আসবো না।”

ziaখালেদা জিয়া বলেন, “তত্ত্বাবধায়কের দাবি আওয়ামী লীগেরই ছিলো। এজন্য তারা জ্বালাও পোড়াও করেছে। পার্লামেন্ট থেকে রিজাইন করছেন। আজ কেনো তারা তত্ত্বাবধায়ক চায় না।”

খালেদা জিয়া বলেন, “কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না, হবে না, হবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের অধীনেই নির্বাচন হবে।”

সরকারকে সতর্ক করে তিনি বলেন, “গুম নির্যাতনের সব হিসেব আমাদের কাছে রয়েছে। আজ যাদের ব্যবহার করা হচ্ছে তারাই একদিন সব কথা টেলিভিশনের সামনে বলবে। তখন আওয়ামী লীগ কোথায় যাবে। শুনেছি অনেকেই নিজেদের বাড়িঘর বিক্রি করে ফেলেছেন পালিয়ে বাঁচতে। কিন্তু কেউ পালাতে পারবেন না।”

তিনি বলেন, “আগামী দিনে এই সরকার কোনো কিছু দিলেও মানা হবে না। সরকার এমার্জেন্সি দিলে তা সরকারের জন্যই কাল হয়ে যাবে। কারফিউ মানুষ মানবে না, মানুষ রাস্তায় নেবে আসবে।”

“দেশের মানুষ সরকারের হাত থেকে রক্ষা পেতে চায়” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সংসদে মিথ্যাচার ও গালিগালাজ ছাড়া কিছুই হয় না। তারা আমার পরিবারের কুৎসা ছাড়া কিছু চায় না। কিন্তু আমরা মিথ্যাচার করবো না, আপনারা যা করছেন তা সত্যভাবে তুলে ধরবো। তাতেই জনগণ সব বুঝে যাবে।”  

তিনি বলেন, “ক্ষমতায় গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবো। দারিদ্র দূর করবো। গ্রামের মানুষ যাতে গ্রামেই কাজ পেয়ে ভালো থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করবো। পোল্ট্রি শিল্প আমরা করেছিলাম, কিন্তু তা ধ্বংস করা হয়েছে।”

খালেদা জিয়া বলেন, “এই সরকারের কথা বিশ্বাস করা যাবে না। তারা এডিপি’র কথা বাড়িয়ে বলছে।”

তিনি বলেন, “বিশ্বে বাংলাদেশ এখন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগে আগ্রহী।”

জনগণের উদ্দেশ্যে বিএনপি প্রধান বলেন, “ডিসেম্বর মাস সামনে রেখে আসুন শপথ নেই, দেশ গড়ার কাজে লেগে পড়ি।”

No comments

Powered by Blogger.