আজ ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ-ছবিওয়ালা ব্যানার-ফেস্টুন না আনার নির্দেশ খালেদার

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ আজ বুধবার। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিকেল ৩টায় সমাবেশ শুরু হবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
সমাবেশে ছবিসংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন না আনতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মঞ্চের সামনে, পেছনে ও কাছাকাছি বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের আগেই অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। গত সোমবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে ঢাকা জেলা ও ঢাকার আশপাশের জেলা-উপজেলার নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে বিএনপির একটি সূত্র জানায়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিনিয়র নেতাসহ ১৮ দলীয় জোটের শরীক দলের শীর্ষ নেতারা। সমাবেশ থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তবে শরীক দল জামায়াতে ইসলামী সরকার পতনের দাবিতে সমাবেশে থেকে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার দাবি করেছে বলে বিএনপির এক নেতা জানান।
বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, দেখা গেছে ১৮ দলীয় জোটের পূর্ব নির্ধারিত যেকোনো সভা-সমাবেশ ও জনসভায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী ও তাদের সমর্থিত লোকজন আগে ভাগেই জায়গা দখল করে রাখে। তারা ভোর থেকে সমাবেশের সামনে-পেছনে ও মঞ্চের কাছাকাছি স্থানে অবস্থান নেয়। এমনকি সমাবেশ চলাকালে মঞ্চের সামনেই তারা জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করে। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ শীর্ষ নেতার মুক্তির দাবিতে তাঁদের বড় বড় ছবি-সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুনও তারা সঙ্গে আনে। এসব কারণে আগে থেকেই আজকের সমাবেশে ব্যানার-ফেস্টুন না রাখার জন্য শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সরকার যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, যেকোনো মূল্যে পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ হবেই। সাদেক হোসেন খোকা বলেন, 'সরকার আমাদের প্রতিটি সমাবেশেই বাধা দিয়েছে এবং এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।' তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'বিভিন্ন এলাকায় আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হচ্ছে, লিফলেট, ব্যানার, বিলবোর্ড ছিড়ে ফেলা হয়েছে।'
সমাবেশের মৌখিক অনুমতি : শেষ পর্যন্ত সমাবেশে মাইক ব্যবহারে মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বিএনপি থেকে গতকাল বিকেলে ডিএমপির মতিঝিল জোনের কমিশনার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হলে তিনি মৌখিকভাবে অনুমতি দেন। এ প্রসঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় জোটের প্রধান দল বিএনপির সংসদ সদস্য ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'চলতি মাসের প্রথম দিকেই আমরা ডিএমপির কাছে জনসভা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করি। এত দিন তারা গড়িমসি করেছে। শেষ পর্যন্ত মৌখিক অনুমতি দিয়েছে। লিখিত অনুমতি চাইলে ডিএমপি বলেছে, বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুমতির কপি পৌঁছে দেওয়া হবে।' শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির নেতৃত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর সদস্যসচিব আবদুস সালাম, সাবেক কাউন্সিল আবুল বাশার, কর্নেল (অব.) মজিদ, মেজর (অব.) মিজান। মৌখিক অনুমতি পাওয়ার পর সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে রাতে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মঞ্চ তৈরি করে বিএনপি।
প্রস্তুতি : নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। নটর ডেম কলেজ, কাকরাইল, শান্তিনগর, জিরো পয়েন্ট, শাপলা চত্বর পর্যন্ত মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনতে পারে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। মঞ্চ থেকে দূরে বিভিন্ন স্থানে খালেদা জিয়ার বক্তৃতা দেখানো হবে বড় পর্দায়। প্রচারের জন্য ৩০০ মাইক ও ২০টি প্রজেক্টর থাকবে। খালেদা জিয়ার বক্তব্য ইন্টারনেটে সরাসরি দেখা যাবে www.bnplive.com এই ঠিকানায়। দুপুর আইড়াইটা থেকে সমাবেশটির কার্যক্রম অনলাইনে প্রচার শুরু হবে।
সমাবেশে শৃঙ্খলা রাখতে অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের জন্য স্থান নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। মঞ্চের সামনে এবং পাশে অর্থাৎ নয়াপল্টন এলাকায় থাকবে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও মহিলা দল। বিএনপির নিজস্ব একটি সিকিউরিটি ফোর্স পুরো মহাসমাবেশ মনিটর করবে।

No comments

Powered by Blogger.