ফিলিস্তিনের 'সার্বভৌম রাষ্ট্রের' মর্যাদা-প্রস্তাবের খসড়া প্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি

জাতিসংঘে 'নন-মেম্বার অবজারভার স্টেট' বা 'সার্বভৌম রাষ্ট্রের' মর্যাদা চেয়ে যে প্রস্তাব তোলা হবে গত সোমবার তার খসড়া প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনি কূটনীতিকরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি তোলার কথা রয়েছে।
সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা চেয়ে আবেদন করলে জাতিসংঘে তার বিরোধিতার পাশাপাশি ফিলিস্তিনে সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ প্রায় ২০ কোটি ডলার সাহায্য তহবিল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে আটকে আছে। তবে আপাতত এ হুমকিকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
প্রস্তাব উত্থাপনের পর ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে তার ওপর ভোটাভুটি হবে। সাধারণ পরিষদে কোনো সদস্যের ভেটো ক্ষমতা নেই। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইসরায়েলও এ প্রস্তাবে বিরোধিতা করার হুমকি দিয়ে রেখেছে। ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ ভোটদানে বিরত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে।
ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে গত সোমবার প্রকাশিত খসড়া প্রস্তাবে জানানো হয়, এক বছর আগে নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের যে দাবি তুলেছিল, সাধারণ পরিষদকে তা 'ইতিবাচকভাবে বিবেচনার' আহ্বান জানানো হবে। যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের প্রস্তাব আটকে দিয়েছিল। খসড়ায় আরো বলা হয়, 'মধ্যপ্রাচ্যে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের আহ্বান জানানো হবে। অন্যান্য দেশের মতোই স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক ও টেকসই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবি তোলা হবে। ১৯৬৭ সালের আগের সীমান্ত নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে ইসরায়েলের পাশাপাশি অবস্থান করবে।' খসড়া প্রস্তাবে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে স্থবির হয়ে যাওয়া শান্তি আলোচনা আবারও শুরুর ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ বন্ধ না হওয়ার কারণে ফিলিস্তিনি নেতারা আলোচনা থেকে সরে গিয়েছিলেন।
ফিলিস্তিনের সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবির বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বলছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড গত সোমবার বলেন, 'জাতিসংঘে সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবি তোলার বিষয়টি যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাছাকাছি নিয়ে যাবে না, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।
বরং তারা এ মুহূর্তে ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে। সে কারণেই আমরা এর বিরোধিতা করছি। আলোচনার মাধ্যমে যে সমস্যার সমাধান সম্ভব, ফিলিস্তিনিরা তাকে আরো জটিল করে তুলছে। জাতিসংঘে তোলা প্রস্তাব ফিলিস্তিনের প্রতি মার্কিন আইনপ্রণেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেবে।'
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন গত সোমবার মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। গত বুধবার ইসরায়েল ও গাজার নিয়ন্ত্রণকারী দল হামাসের মধ্যে হওয়া সমঝোতা চুক্তিকে দীর্ঘস্থায়ী করার আহ্বান জানান তিনি। সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.