বিশ্বজুড়ে বাংলা বিশ্বজুড়ে প্রথম আলো- আমার কাগজ প্রথম আলো by ফারুক চৌধুরী

১৪ বছর পূর্ণ করে ১৫ বছরে পা দেওয়ার এই শুভ মুহূর্তে প্রথম আলোকে আমি আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। জন্মমুহূর্তে যখন পত্রিকাটির নাম নির্বাচনের তোড়জোড় চলছিল, তখনকার কথা আমার খুব মনে পড়ে।
আমিও ছিলাম একটি নামের প্রস্তাবক, তবে সে নামটি যে গৃহীত হয়নি, সে কথা বলার প্রয়োজন নেই। সত্যি বলতে কি, প্রথম আলো নামটি তখন আমাকে পুলকিত করেনি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস প্রথম আলোর সঙ্গে পত্রিকার নামটি মিলে যাওয়ায় আমার মনের দ্বিধা যেন কিছুতেই কাটছিল না। মনে হচ্ছিল, নামটিতে উদয়াকাশের আলোর উদ্ভাসন আছে ঠিকই, কিন্তু মৌলিকতার অভাব রয়েছে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বিস্মিত হয়ে দেখলাম, প্রথম আলো স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যে এতটাই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে যে বাংলাদেশের পত্রিকা জগতে এটি হয়ে উঠেছে এক এবং অদ্বিতীয় একটি নাম। সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে খুব দ্রুতই প্রথম আলো হয়ে উঠল আমারও পত্রিকা। শুধু আমারই বা বলি কেন, আমার পরিবারের, আমার বন্ধুর, আমার স্বজনের পত্রিকা। আপামর মানুষের পত্রিকা।
এটা একটা ঘটনাই বটে যে আমাদের দেশে একটি দৈনিক পত্রিকা এতটা তরতর করে বেড়ে উঠল, কী অবলীলায় সবাইকে ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াল। অঙ্কুরোদ্গম হওয়ার পরপরই দ্রুত ডালপালা মেলে ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে এক আশ্চর্য আভা ছড়িয়ে দিল সবার মনে, মননে, চেতনায়!
কেমন করে এই অসম্ভব সম্ভব হলো? আমি মনে করি, দ্বিধাহীন বস্তুনিষ্ঠতা আর অবিচল সৎ সাহস প্রথম আলোর দ্রুত বিকাশ সম্ভব করে তুলেছে। কিন্তু প্রথম আলোর যাত্রাপথ কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। অবশ্য একটি সৎ ও অঙ্গীকারবদ্ধ সংবাদপত্রের জন্য সেটি আমরা প্রত্যাশাও করতে পারি না। বিশেষ করে সর্বব্যাপী দলীয়করণের রাজনীতি যেখানে আমাদের সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরে অপচ্ছায়া বিস্তার করে আছে, সেখানে দলীয় পক্ষপাতের ঊর্ধ্বে থেকে একটি দৈনিককে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়।
প্রথম আলো সেই অ-সহজ কাজটিই অদম্য সাহস এবং একাগ্র নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছে। এ জন্য নানা ধরনের শক্তিকেন্দ্র থেকে তার ওপর হুমকি এসেছে, বিপদ ও বিপর্যয় এসেছে। তবু প্রথম আলো তার আদর্শিক অবস্থান থেকে সরে আসেনি, মাথা নত করেনি। সব হুমকিকে অস্বীকার করে পত্রিকাটি নিরাবরণ ও নিরাভরণ সত্যকেই তুলে ধরেছে। প্রথম আলোর এই সত্যব্রতী অভিযাত্রাকে আমি অভিবাদন জানাই।
প্রথম আলোর অনন্যতার জায়গা একটি নয়, অনেক। পত্রিকাটি নিজেকে শুধু সংবাদ প্রকাশের বাহন করে তোলেনি, বরং সমাজের সব ভালোকে সংগ্রথিত করে এটি আমাদের সর্বদাই নবনির্মাণের উপাখ্যান শুনিয়েছে। এই দেশ ও সমাজের অগ্রগতি ও কল্যাণই তার অন্বিষ্ট, এ নিয়ে তার ভাবনা ও প্রয়াসের যেন কোনো অন্ত নেই। দেশের বাইরে, প্রবাসে যে বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর বসবাস, তাদেরও প্রথম আলোই যেন এক অভিন্ন ঐক্যসূত্রে গেঁথে রেখেছে।
যখন বিদেশে যাই, তখনো অগ্রসর তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে স্বদেশ আমার সঙ্গেই থাকে। এর মূলেও আছে প্রথম আলো। বস্তুত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাঙালি পাঠকদের প্রতিদিনই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একই সুতোয় গেঁথে রাখে প্রথম আলো। বিভুঁই বিদেশে প্রতিটি বাংলাদেশির জন্যই যেন তার কল্যাণচিন্তা, এক অভূতপূর্ব ব্যাকুলতা। আবার দেশের যে তরুণ প্রজন্ম, তাদের স্বপ্ন দেখানোর দায়িত্বও পালন করে চলেছে প্রথম আলো। এর সবকিছুই আমি উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে অবলোকন করি, একটি পত্রিকার জন্মক্ষণ থেকে তার ক্রমবিকাশের এই বর্ণাঢ্য ইতিহাস আমাকে অভিভূত করে।
একজন ক্রীড়ামোদী পাঠক হিসেবেও প্রথম আলো পড়ে আমি অসাধারণ আনন্দ পাই। ফুটবল আর ক্রিকেট ম্যাচের বিবরণ, অলিম্পিকের আখ্যান বর্ণনা—সবই আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। মনে হয়, আমি মাঠেই বসে আছি, ওই তো দেখছি খেলোয়াড়দের নৈপুণ্যময় কলাকৌশল, ওই তো শুনছি দর্শকদের চিৎকৃত আনন্দ-কোলাহল, আকাশ কাঁপানো উল্লাসধ্বনি। নেহাতই মুদ্রিত অক্ষর—কিন্তু কী আশ্চর্য ক্ষমতায়, তা চেতনার জগতে আলোড়ন তোলে।
তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কের অভিযাত্রী প্রথম আলো। বাংলা অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রথম আলোর স্থান প্রথম, বিশ্বের ১৯০টি দেশে পড়া হচ্ছে প্রথম আলো, এর মুদ্রণসংখ্যা এখন সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি। সব মিলিয়ে প্রথম আলো এক অবিকল্প, অপ্রতিরোধ্য দৈনিক।
আমি একবার এক নিউজ স্টলের তরুণ মালিককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কোন পত্রিকা সবচেয়ে ভালো, কোনটি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়?’ একটি উপমাত্মক বাক্য তৈরি করে ছেলেটি আমাকে বলেছিল, ‘পত্রিকার রাজ্যে প্রথম আলো হচ্ছে রাজা, আর রানিও প্রথম আলোই। শাবাশ প্রথম আলো !

No comments

Powered by Blogger.