গার্মেন্টে আগুন, নিহত ৭

আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় তোবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানায় ভয়াবহ আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুন আতঙ্কে লাফিয়ে পড়ে ছয়জন এবং দম আটকে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কারখানাটিতে যখন আগুন ধরে তখন সেখানে প্রায় তিন হাজার কর্মী আটকা পড়েছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় বলে ফায়ার সার্ভিস দাবি করেছে। যদিও তখন সেখানে ধোঁয়া ও আগুনের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছিল। স্থানীয় কয়েক হাজার মানুষ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগুন নেভাতে সহায়তা করছিল।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ জানান, কারখানার সুতার গুদামটি বড় থাকায় ভেতরে পানি দিতে সমস্যা হয়েছে; সময়ও লেগেছে বেশি। আশপাশে পানির ব্যবস্থা না থাকায় দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়েছে।
কারখানাটির ব্যবস্থাপক সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, মাত্র এক দিন আগে সাড়ে তিন কোটি টাকার সুতা আনা হয়েছে চীন থেকে। প্রথম তলার যে গুদামে সুতা রাখা ছিল সেখানেই আগুন ধরেছে প্রথম।
কারখানার সিকিউরিটি সুপারভাইজার মোহাম্মদ সুবহান জানান, নিচতলার সুতার গোডাউন থেকেই আগুন ধরেছে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দেরিতে পৌঁছার কারণে আগুন বেশি ছড়িয়ে পড়ে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, কারখানাটিতে তিনটি সিঁড়ি থাকলেও গেট একটা। এ কারণে নিচে আগুন দেখে শ্রমিকরা গেট দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা না করে ওপরে অন্য তলায় ওঠেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অষ্টম তলার সঙ্গে মই ও বাঁশের সংযোগ দিলে তার মাধ্যমে শ্রমিকরা নিচে নেমে আসেন। পাশের ভবনের ছাদেও নামেন অনেকে।
নরসিংহপুরের নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারী ব্যবস্থাপক হরুন অর রশিদ জানান, নিহত চার নারী শ্রমিকের লাশ তাঁদের ক্লিনিকে রয়েছে। তাঁদের বয়স ২২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। আহত ৪৫ জন শ্রমিকও সেখানে চিকিৎসাধীন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সেখানে আসা আহত ৯ শ্রমিকের মধ্যে একজন মারা গেছেন। তাঁদের কেউই দগ্ধ নন। নানাভাবে আহত হয়েছেন।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম বদরুল আলম জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রথম পর্যায়েই চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা লাফিয়ে পড়ে ও হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে নিহত হন বলে ধারণা করা হয়।
এ ছাড়া কারখানাটির পাশে অবস্থিত একটি মেসে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আব্দুল কাদের নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নেওয়া আহত শ্রমিক জুলেখার মৃত্যু ঘটে বলে স্থানীয় সূত্র দাবি করেছে।
আশপাশে কর্মরত গার্মেন্ট শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে হঠাৎ আগুন জ্বলে উঠতে দেখা যায়। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন কারখানাটির নয়তলা ভবনের ভেতরে প্রায় তিন হাজার পোশাক শ্রমিক ছিলেন। অনেকে বহুতল কারখানাটির ছাদে উঠে প্রাণ বাঁচাতে লাফ দেন। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। গার্মেন্টের নিচতলায় আগুনের সূত্রপাত হওয়ায় কর্মরত শ্রমিকরা মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেননি। শতাধিক আহত শ্রমিককে সাভার ও আশুলিয়া এলাকার হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
ভয়াবহ এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট কাজ করে বলে ফায়ার কন্ট্রোল রুম জানায়। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও বাতাসে ফের আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে তৃতীয় ও ষষ্ঠ তলায়। তার আগেই আটকে পড়া সব শ্রমিককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবদুল খালেক জানান, প্রাথমিক সংবাদে সাভার, ইপিজেড, ধামরাই ও টঙ্গী থেকে দুটি করে ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগায়। পরে ঢাকা থেকে ভিমা গাড়িসহ আরো চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়।

No comments

Powered by Blogger.