আয়ুর্বেদীর কোর্স করে এমবিবিএস ডাক্তার!

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের ওপর কোর্স করার দাবি করে নামের আগে ‘ডাক্তার’ শব্দটি ব্যবহার করছেন। ব্যবস্থাপত্রে নিজের নামের শেষে এমবিবিএস লিখছেন; করছেন আলট্রাসনোগ্রামও। কিন্তু এর ওপরে কোনো প্রশিক্ষণ নেননি।
প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ১০০-২০০ টাকা করে নিচ্ছেন। পাঁচ বছর ধরে এভাবে তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
ওই ব্যক্তির নাম শেখ ওমর ফারুক। তিনি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর বাজারের পল্লী মঙ্গল জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর বাড়ি উপজেলার নারায়ণপুর বাজার এলাকায়।
এলাকাবাসী গত জুনে সিভিল সার্জনের কাছে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ দেন। ২৮ জুন তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সিভিল সার্জন তাঁকে এমবিবিএস পরিচয়ে চিকিৎসা না দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে তিনি এই নির্দেশ উপেক্ষা করে এমবিবিএস পরিচয়ে এখনো রোগী দেখছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল অভিযোগ করেন, ডিগ্রি না থাকলেও ব্যবস্থাপত্রে এমবিবিএস শব্দ ব্যবহার করে পাঁচ বছর ধরে রোগী দেখছেন ওমর ফারুক। আলট্রাসনোগ্রামের ওপর প্রশিক্ষণ না থাকলেও এ কাজ করে তিনি অনেকের ক্ষতি করেছেন। ক্ষিদিরপুর গ্রামের লাকি বেগম অভিযোগ করেন, তলপেটে ব্যথা করায় কিছুদিন আগে তাঁর কাছে আলট্রাসনোগ্রাম করেন তিনি। রিপোর্টে তিনি জরায়ুতে টিউমার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। সন্দেহ হলে চাঁদপুরের একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে জানা যায় তাঁর অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে।
ওমর ফারুক দাবি করেন, ২০০৫ সালে ভারতের কলকাতার অলটারনেটিভ মেডিকেল কাউন্সিল থেকে তিনি ডিগ্রি নিয়েছেন। ডিগ্রি না থাকলেও ব্যবস্থাপত্রে এমবিবিএস ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তো ফেরেশতা নই। আমার ভুল হতেই পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিভিল সার্জন নিষেধ করায় ব্যবস্থাপত্রে নিজের নাম ও ডিগ্রি ব্যবহার করি না। ওষুধের নামের নিচে শুধু সই করে দিই।’ আলট্রাসনোগ্রামের ওপর প্রশিক্ষণ আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওমর ফারুক আগের মতো ব্যবস্থাপত্রে নামের আগে ডাক্তার ও শেষে এমবিবিএস শব্দটি ব্যবহার করছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চাঁদপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী মাছুম বলেন, ‘ফারুককে আমি চিনি। তিনি আয়ুর্বেদের ওপর যে কোর্স করেছেন, তা তিন কিংবা চার মাসের। এমবিবিএস ডাক্তারের পরিচয়ে রোগী দেখে ফারুক প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।’
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন আবদুস ছাত্তার জানান, ওমর ফারুক এমবিবিএস বা সমমানের পরীক্ষায় পাসের সনদ দেখাতে পারেননি। এমবিবিএস পরিচয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র না দেওয়ার জন্য তাঁকে বলা হয়েছে। এ নির্দেশ না মানলে বাকি কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করবে। তিনি জানান, রোগীদের ব্যবস্থাপত্র বা কাউকে চিকিৎসা দিতে হলে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (এিএমডিসি) অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু ওমর ফারুক তা-ও নেননি।

No comments

Powered by Blogger.