চিকিৎসকদের মানসিকতার পরিবর্তন হোক- অসহায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী

চিকিৎসকদের গ্রামে না থাকার ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক জাতীয় সংসদে আলোচনার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা অবশ্যই গুরুত্বের দাবি রাখে। গত বৃহস্পতিবার সংসদে প্রশ্নোত্তরকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের গ্রামে থাকার জন্য স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে।
এ নিয়ে তিনি সংসদে আলোচনারও প্রস্তাব দেন। এর আগে সাংসদ আবদুল মান্নান গ্রামে চিকিৎসাসেবার দুর্বলতা তুলে ধরে বলেন, বগুড়ায় ৩৯০টি পদের বিপরীতে ২৬৬ জন চিকিৎসক পদায়িত হয়েছেন। তাঁরা সেখানে উপস্থিত থাকলে প্রতি উপজেলায় ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু তাঁদের সিংহভাগই এলাকায় থাকেন না। এ চিত্র কেবল বগুড়ার নয়, সারা দেশেরই। সম্প্রতি পাঁচ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরও গ্রামের চিকিৎসাসেবার মান বেড়েছে সে দাবি করা যাবে না।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরও তাঁরা গ্রামে যেতে চান না। পরিস্থিতি অতিসম্প্রতি খারাপ হয়নি। আগের কথা বাদ দিলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই প্রায় চার বছর এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি। সে ক্ষেত্রে তিনি আগে সংসদে আলোচনার প্রস্তাব দিলেন না কেন? তার পরও তাঁকে ধন্যবাদ জানাই তিনি একটি গুরুতর সমস্যা নিয়ে সংসদে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তবে চিকিৎসকদের গ্রামে না থাকার জন্য চিকিৎসকদের মানসিকতা যেমন দায়ী, তেমনি সার্বিক স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও কম দায়ী নয়। সরকারি পদে যোগ দিয়েই তাঁরা দলীয় বৃত্তে বন্দী হয়ে পড়েন। তাঁরা মনে করেন, স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ) কিংবা ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতাদের খুশি রাখতে পারলেই চাকরি নিরাপদ।
অতএব, চিকিৎসকদের গ্রামে রাখতে হলে দলবাজি বন্ধ করতে হবে। গ্রামে চিকিৎসকেরা যাতে থাকতে পারেন, সেই অবকাঠামোও তৈরি করতে হবে। অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও সেবিকাদের থাকার ব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে চিকিৎসকদের একটি কথা স্মরণ রাখা উচিত যে একজন চিকিৎসক তৈরি করতে রাষ্ট্র তথা জনগণ যে লাখ লাখ টাকা খরচ করে, সেই জনগণের প্রতি তাঁদেরও দায়িত্ব আছে।

No comments

Powered by Blogger.