জমি দখল ও রাস্তা বন্ধ করে ভবন by সাইফুর রহমান

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে শর্ষীনা পীরের দরবার কর্তৃপক্ষ জনগণের চলাচলের সরকারি রাস্তা বন্ধ করে মাদ্রাসার বহুতল ভবন নির্মাণ এবং জেলা পরিষদের দুই একর ২৯ শতাংশ জমি দখল করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলা পরিষদের ওই রাস্তা দিয়ে স্বরূপকাঠি উপজেলার মাগুড়া, বরিশালের বানারীপাড়া ও অন্যান্য স্থানের সাধারণ মানুষ স্বরূপকাঠি বন্দর ও থানায় যাতায়াত করে। বর্তমানে ওই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষকে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। রাস্তাসহ ওই জমির দখল ঠেকাতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ৭৫ জন জেলা পরিষদে লিখিত আবেদন করেছেন। কিন্তু জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
১৩ নভেম্বর সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বরূপকাঠি উপজেলা সদরের কাছাকাছি এলাকায় শর্ষীনা পীরের দরবার শরিফ। দরবার শরিফের মাদ্রাসা ও মূল ভবনের পেছনে উত্তর-দক্ষিণে থাকা জেলা পরিষদের রাস্তাটি বন্ধ করে বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এলাকাবাসী জানান, জেলা পরিষদের এই রাস্তা, পাশের একটি পুকুরসহ ছয়টি দাগের দুই একর ২৯ শতাংশ জমি দরবার শরিফ কর্তৃপক্ষ দখল করেছে।
দরবার শরিফ এলাকার বাসিন্দা শাহদাতউল্লাহ অভিযোগ করেন, ব্রিটিশ আমল থেকে মানুষের যোগাযোগের সুবিধার জন্য জেলা পরিষদ রাস্তাটি নির্মাণ করে। সেই রাস্তা বন্ধ করে মাদ্রাসার ভবন নির্মিত হচ্ছে। শর্ষীনা গ্রামের আবুল বাশার, আ. ছাত্তার, আবু হানিফ, মো. জয়নাল আবেদীনসহ কয়েকজন জানান, রাস্তা বন্ধ না করেও স্থাপনা নির্মাণ করা সম্ভব ছিল। দরবারে অনেক জায়গা থাকার পরও কেন রাস্তাটি বন্ধ করা হয়েছে, তা তাঁদের জানা নেই।
নেছারাবাদ শর্ষীনা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাঈয়েদ মো. শরাফত আলী বলেন, যেখানে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখান আগে রাস্তা ছিল, এখন নেই। জেলা পরিষদ থেকে জমি বন্দোবস্ত নিয়েই ওই কাজ করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ২০ বছর আগে জেলা পরিষদ থেকে জায়গা বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের বিষয়টি জানা নেই।
পিরোজপুর জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, স্বরূপকাঠি উপজেলা (বর্তমানে নেছারাবাদ) সদরের মাগুড়া থেকে স্বরূপকাঠি বাজার পর্যন্ত ছয়টি দাগে মোট দুই একর ২৯ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে। ওই সম্পত্তির মধ্যে রাস্তা, পুকুর ও ভিটা রয়েছে। ওই সম্পত্তি কারও নামে বরাদ্দ বা ইজারা দেওয়া হয়নি।
স্বরূপকাঠি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুর রহমান বলেন, রাস্তা ও সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসক অনল চন্দ্র দাস বলেন, ‘সরকারি কোনো রাস্তা বন্ধ করে স্থাপনা নির্মাণ করার নিয়ম নেই। আমাদের জানিয়ে বা অনুমতি নিয়ে ওই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন জানান, রাস্তাসহ ওই জমি এসএ ও আরএস খতিয়ান অনুযায়ী জেলা পরিষদের। জানামতে, জেলা পরিষদের ওই রাস্তা ও জমি বন্দোবস্ত বা ইজারা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি জানতে পেরে সরেজমিনে গিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সার্ভেয়ারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.