সরকার সমর্থক আইনজীবী পরিষদে ভাঙন-সাহারা-বাসেত দুই পক্ষে দুই আহ্বায়ক

অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে সরকার সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ভেঙে গেছে। গতকাল শনিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দুই গ্রুপের প্রকাশ্যে পাল্টাপাল্টি সভা হয়েছে।
এক পক্ষ পরিষদের বর্তমান আহ্বায়ক ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামকে পাশ কাটিয়ে বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদারকে নতুন আহ্বায়ক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পৃথক এক সভা থেকে নতুন কমিটি করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
উভয় কমিটির নেতারা এ ভাঙনের জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছেন। বাসেত মজুমদারকে আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি করা দুঃখজনক হিসেবে অভিহিত করেছেন সাহারা খাতুন ও আমীর-উল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে সাহারা খাতুন বলেছেন, সিনিয়র আইনজীবীদের বৈঠকে সমঝোতা হয়। সেই সমঝোতায় বাসেত মজুমদার ও লায়েকুজ্জামান মোল্লার সম্মতি ছিল। অপরদিকে নতুন কমিটির আহ্বায়ক বাসেত মজুমদার বলেছেন, শিগগিরই সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
এক পক্ষের আহ্বায়ক বাসেত : বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের ব্যানারে 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনা সভা ও সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রতিনিধি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশটি হয় আব্দুল বাসেত মজুমদারের সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন প্রাঙ্গণে। মঞ্চে আয়োজক সংগঠন হিসেবে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের নাম লেখা থাকলেও বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে এটাকে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। গতকাল সকালে সভার উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
এ সভা থেকে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের বর্তমান কমিটির তীব্র সমালোচনা করা হয়। একই সঙ্গে বর্তমান কমিটির নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। সভা থেকে আব্দুল বাসেত মজুমদারকে পরিষদের নতুন আহ্বায়ক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিমের পরিচালনায় দিনব্যাপী এ সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, এম এ কুদ্দুস, আবু সাঈদ সাগর, শেখ সিরাজুল ইসলাম, আলহাজ মোহাম্মদ ইস্রাফিল, এস এম মুনির, বশির আহমেদ, আলতাবউদ্দিন আহমেদ, শেখ আখতারুল ইসলামসহ বিভিন্ন জেলার নেতারা বক্তব্য দেন। এরপর বিকেলে বাসেত মজুমদারকে আহ্বায়ক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ সভায় পরিষদের শরিক পাঁচটি সংগঠন বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, জাতীয় আইনজীবী পরিষদ, জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের নেতারা বক্তব্য দেন।
সভায় বাসেত মজুমদার বলেন, সমন্বয় পরিষদ বন্দি হয়ে পড়েছে। এ পরিষদকে মুক্ত করতে হবে। তিনি বার কাউন্সিলের নির্বাচনে সরকার সমর্থক আইনজীবীদের পরাজয়ের জন্য বিরোধী পক্ষকে দায়ী করে বলেন, প্রথম প্যানেল না রেখে তিনবার প্যানেল পরিবর্তনের কারণে এ পরাজয়।
এ সভায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, 'একটি রাজনৈতিক দল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তুলনা করে একজন ব্যক্তিকে ওপরে তুলতে চেয়েছে। তারা পারে নাই। তারা নিশ্চুপ নীরব ভূমিকা কেন পালন করেছে? এটা রহস্যজনক। এমনকি আমাদের দলের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা অনেকে মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়াদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন।' তিনি আরো বলেন, 'জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কথা বলবেন না, তাহলে সমন্বয় পরিষদের দরকার কি? সংখ্যালঘুদের প্রধান শত্রু বিএনপি-জামায়াত। অথচ সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব সুব্রত চৌধুরী নতুন একটি সংগঠনের বাতাবরণে লাল পাঞ্জাবি পরে খালেদা জিয়ার পাশে বসেছেন।' তিনি আরো বলেন, 'পরিষদ কারো পকেট সংগঠন হবে না। নেতৃত্বের বদল হোক। নতুন মুখ দেখতে চাই।'
সাহারা আরেক পক্ষের আহ্বায়ক : গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের সভাপতিত্বে সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমানে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সৈয়দ রেজাউর রহমান, সুব্রত চৌধুরী, এ কে এম সাঈফুদ্দিন, মাহবুব আলী, আব্দুল্লাহ আবু, মোখলেসুর রহমান বাদল, জাহিদুল বারী, মমতাজউদ্দিন মেহেদী, পরিমল চন্দ্র গুহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সাহারা খাতুন বলেন, 'আমরা আইনজীবী সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে চেয়েছি এবং থেকেছিও। কিন্তু তার পরও বাসেত মজুমদারের নেতৃত্বে আরেকটি সমন্বয় পরিষদের প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। একটি কমিটি থাকার পরও আরেকটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি।'
ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির মধ্যে এই দ্বিধাবিভক্তি আমাদের জন্য বড় ক্ষতি। আমি বিশ্বাস করি, আমরা এই বিভক্তি দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। আমার প্রাণের স্পন্দন এই সংগঠন। কিন্তু আজ যে ঘটনাটি ঘটে গেল, এর চেয়ে লজ্জাজনক সময় আমার জীবনে আর আসেনি। যেখানে আমি সমন্বয় আহ্বায়ক হিসেবে একটি সভায় সভাপতিত্ব করছি, সেখানে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।' পরে সাহারা খাতুনকে আহ্বায়ক এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মো. মোমতাজ উদ্দিন মেহেদিকে সদস্য সচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে সরকার সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে যাঁরা সংসদ সদস্য বা বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র তাঁদের এবং পরিষদের শরিক পাঁচটি সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সদস্য করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে তাঁরা সম্মেলন করারও ঘোষণা দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.